কৃষি খাতে স্বনির্ভরতা অর্জন, খাদ্য নিরাপত্তা ও সার আমদানিতে বিদেশ নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে ১৯৮৮ সালে আনোয়ারার রাঙ্গাদিয়ায় প্রতিষ্ঠা করা হয় সিইউএফএল সার কারখানা। ১৭ শত মেট্রিকটন উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে এ প্রতিষ্ঠান দেশের অর্থনীতি ও কৃষি পণ্য উৎপাদনে দেশে শীর্ষ অবস্থানে ভূমিকা রাখা এ প্রতিষ্ঠানটি নানামুখী চক্রান্তের শিকার হয়ে এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। গত ৬ মাসের বেশি সময় ধরে গ্যাস সংকটের কারণে এ প্রতিষ্ঠানটিতে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এতে ৬ মাসে এ প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৮ শত ১০ কোটি টাকার বেশি। এ পরিস্থিতিতে দীর্ঘ ৭ মাস অপেক্ষার পর গ্যাস সংযোগ পেয়ে গত শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩ টায় কারখানাটি সার উৎপাদনে গেলে শ্রমিক কর্মচারীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু সেই স্বস্তি মাত্র ১১ ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয়নি। গতকাল দুপুর দুইটার পর কারখানার প্লান্টে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে আবারো উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এতে শ্রমিক কর্মচারীদের মাঝে হতাশা নেমে আসে। টানা ৬ মাসের বেশি সময় কারখানা বন্ধ রাখার কারণে এই অবস্থা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সিইউএফএল কর্তৃপক্ষ জানায়, সিইউএফএল সার কারখানাটি এমনিতেই মেয়াদোত্তীর্ণ, কর্মকর্তা কর্মচারীরা পুনঃমেরামত কার্যক্রম চালু রেখে এটি সচল রেখেছেন। কিন্তু পুরনো কারখানা দীর্ঘদিন বন্ধ রাখা হলে এমনিতেই যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। সেই সাথে বেড়ে যায় মেরামত ব্যয়ও। তবে সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, ইনশাআল্লাহ কম সময়ের মধ্যে যান্ত্রিক ত্রুটি কাটিয়ে উৎপাদনে যেতে সক্ষম হব।
সিইউএফএল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সিইউএফএল সার কারখানায় প্রতিমাসে শ্রমিক কর্মচারীর বেতন ভাতা দিতে হয় সাড়ে ৩ কোটি টাকার বেশি। তাছাড়া মেরামত ও অন্যান্য খরচ হিসাব করলে কয়েক কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পেট্রোবাংলার গ্যাস বিতরণ প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) সিইউএফএল এ গ্যাস সরবরাহ দিয়ে থাকে। কেজিডিসিএল সূত্রে জানা গেছে, আনোয়ারার রাঙ্গাদিয়ায় অবস্থিত সিইউএফএল শিল্প কারখানা চালু করতে দৈনিক ৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে হয়। আর আনোয়ারার বৈরাগে অবস্থিত কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানিতে (কাফকো) উৎপাদনে দৈনিক ৪২ থেকে ৪৩ মিলিয়ন গ্যাস সরবরাহ করতে হয়। কাফকো কারখানায় সরকার নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রাখলেও বিসিআইসির শীর্ষ কর্মকর্তাদের অবহেলায় টানা ছয় মাসের বেশি সময় ধরে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। যার কারণে ৩ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদন নেমে এক লাখ মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে।
এতে সিইউএফএল সরকারখানার ন্যূনতম ক্ষতি গত ছয় মাসে ৮১০ কোটি টাকা বলে শ্রমিকরা জানিয়েছেন।
শ্রমিকরা আরো জানান, গত ১১ এপ্রিল থেকে টানা ৬ মাস ২০ দিন ধরে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। কারখানা বন্ধ থাকার পেছনে নানান রহস্য ও রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা ধ্বংসের বহুমুখী ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে তাদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ১০ বছরের বেশি সময় ধরে এ সার কারখানায় বছরে তিন /চার মাসের বেশি সময় গ্যাস সরবরাহের রেকর্ড নেই। ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ এ কারখানা হুমকিতে পড়েছে বলে কর্মরত শ্রমিক কর্মচারীরা জানিয়েছেন।
এ অবস্থায় শনিবার রাত সাড়ে ৩ টায় গ্যাস সরবরাহ হলে উৎপাদনে গেলেও ১১ ঘণ্টা পর যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে আবারো বন্ধ হয়ে যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১–৯২ অর্থবছরে এই কারখানায় সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছিল ৩,৩৪,০০০ মে. টন অ্যামোনিয়া এবং ৫,৮৫,৭৯১ মে. টন ইউরিয়া এবং একই অর্থবছরে কারখানাটি একটানা সর্বোচ্চ ২৪৮ দিন অ্যামোনিয়া প্ল্যান্ট এবং ২১৭ দিন ইউরিয়া প্ল্যান্ট চালু ছিল। কিন্তু গত এক দশক ধরে এই প্রতিষ্ঠান নানামুখী চক্রান্তের শিকার। আর যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে নতুবা গ্যাস সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ থাকে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি ১২ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া আর ৬ থেকে ৭ হাজার মেট্রিক টন অ্যামোনিয়া উৎপাদন হয়ে থাকে। ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এ সারকারখানা দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১০০০ মে. টন অ্যামোনিয়া এবং ১৭০০ মে. টন ইউরিয়া অর্থাৎ বাৎসারিক উৎপাদন ক্ষমতা যথাক্রমে ৩,৩০,০০০ মে. টন অ্যামোনিয়া এবং ৫,৬১,০০০ মে. টন ইউরিয়া উৎপাদন ক্ষমতা থাকলেও এই প্রতিষ্ঠান ১৬ শত মেট্রিক টনের বেশি ইউরিয়া আর ৯ শত টন অ্যামোনিয়া উৎপাদন হত। সংশ্লিষ্ট শ্রমিক কর্মকর্তা ও এলাকাবাসী বিসিআইসিও সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের কাছে রাষ্ট্রায়ত্ব গুরুত্বপূর্ণ এই শিল্প কারখানাটি যেকোনো মূল্যে বাঁচানোর আকুতি জানিয়েছেন।
সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, গত ১১ এপ্রিল থেকে টানা ৬ মাস ২০ দিন গ্যাস সংকটের কারণে সিইউএফএলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়ে। দুই দিন আগে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গ্যাস সরবরাহ করার পর শনিবার রাত সাড়ে তিনটায় আমরা উৎপাদন শুরু করি। কিন্তু রবিবার দুপুর দুই টার পর কারখানার প্লান্টে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। সাথে সাথে কারখান প্রকৌশলী ও শ্রমিকরা মেরামত কার্যক্রম শুরু করেন। ইনশাআল্লাহ আজ বা কালকের মধ্যে আমরা কারখানা পুরোদমে চালু করতে সক্ষম হয়।












