চার্লস ডিকেন্স – বিশ্ববিখ্যাত ও জনপ্রিয় ইংরেজ ঔপন্যাসিক। তাঁর কালজয়ী অনেক রচনা বিশ্বসাহিত্যে তাঁকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিকের মর্যাদা এনে দিয়েছে।
ডিকেন্সের জন্ম ১৮১২ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি ইংল্যান্ডের ল্যান্ডপোর্টে। দারিদ্র্যের কারণে স্কুল পড়াশোনায় ততটা নিয়মিত হতে না পারলেও বাড়িতে বাবার বইয়ের সংগ্রহ থেকে বিশ্ব সাহিত্য নিয়ে লেখাপড়া করে আত্মশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ওঠেন তিনি। বালক বয়সেই অর্থ উপার্জনের জন্য তাঁকে নানা ধরনের কাজ করতে হয়েছে। মাত্র দশ বছর বয়সে জুতোর কালির পটে লেবেল আঁটার কাজ করেছেন ডিকেন্স। বাবা তখন কারাগারে। ডিকেন্সের আট ভাইবোনের সংসার। অর্থ উপার্জনের জন্য মা ছোট্ট একটা স্কুল খোলেন। ডিকেন্সকে কাজের জন্য লন্ডনের একটি বস্তিতে অত্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত জীবন কাটাতে হয়। বিখ্যাত উপন্যাস ‘অলিভার টুইস্ট’-এর অলিভারের মধ্যে শৈশবের নিজেকেই প্রকাশ করেছেন ডিকেন্স। মূলত শৈশব তাঁর সমস্ত জীবন জুড়েই সঞ্চারিত। বাবা ছাড়া পাবার পর দু বছর স্কুলে নিয়মিত ছিলেন তিনি। এরপর কাজ নেন এক আইনজীবীর অফিস আর্দালি হিসেবে। এখানে কাজ করার সময় পুরোনো ধাঁচের ব্রিটিশ আইনের ত্রুটিগুলো সম্পর্কে অবগত হন ডিকেন্স। পরবর্তীসময়ে তাঁর বেশ কিছু লেখায় এসেছে এসব বিষয়, যা ইংল্যান্ডে আইন সংস্কারে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল।
কর্মজীবনে সাংবাদিকতাও করেছেন ডিকেন্স। সে সময় এক বিখ্যাত কৌতুক-ছবি আঁকিয়ে তাঁর ছবির সাথে মিলিয়ে কাহিনি তৈরির প্রস্তাব দেন ডিকেন্সকে। বিখ্যাত রচনা ‘পিকউইক পেপারস’ এভাবেই তৈরি হয়। এটি ধারাবাহিকভাবে ছাপা হতো। তাঁর অন্যান্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য : ‘নিকোলাস নিকোলবি’, ‘ডেভিড কপারফিল্ড’, ‘আ ক্রিসমাস ক্যারল’, ‘আ টেল অব টু সিটিজ’ ইত্যাদি। ডিকেন্সের অনেক কাহিনিতে ক্রিসমাসের প্রসঙ্গ এসেছে। এসব কাহিনি অবলম্বন করেই পরবর্তীকালে আঁকা হয়েছে নানা ধরনের ক্রিসমাস কার্ড। চমৎকার গদ্যশৈলী আর স্মরণীয় চরিত্র উদ্ভাবনের ক্ষমতা ডিকেন্সের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য। তাঁর ছিল গভীর সামাজিক মূল্যবোধ যা থেকে সমাজের কদর্যতা আর নীচতার বিরুদ্ধে লেখার মাধ্যমে সোচ্চার হয়েছেন তিনি। ডিকেন্সকে ভিক্টোরীয় যুগের প্রধানতম ঔপন্যাসিক ও অন্যতম সমাজ সংস্কারক বলা হয়ে থাকে। ১৮৭০ সালের ৮ই জুন লন্ডনে তাঁর জীবনাবসান হয়।