চার শিক্ষার্থীকে নির্যাতনে কারা

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:১৭ পূর্বাহ্ণ

শিবিরের কর্মী সন্দেহে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) প্রধান ছাত্রাবাসে চার শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় নিয়মিত অভিযোগ নিষ্পত্তি কমিটিকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে চমেক প্রশাসন। গতকাল থেকে কমিটি তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। তবে ঘটনা প্রকাশের পর থেকে চমেক প্রশাসন দাবি করে আসছে, মারধরকারী বা নির্যাতনের সাথে জড়িতদের বিষয়ে কোনো তথ্য দিচ্ছে না নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীরা। ফলে মারধরকারী কারা, সে বিষয়ে এখনো অস্পষ্টতা রয়ে গেছে।

এই অস্পষ্টতা দূর করতে অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীদের একজনের সাথে কথা বলতে সক্ষম হয়েছে আজাদীর এ প্রতিবেদক। সংগত কারণে তার নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না।

নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, একই ব্যাচের (এমবিবিএস ৬২তম) সাজু দাশ ও সৌরভ দেব নাথ, ৫৯তম ব্যাচের রিয়াজুল ইসলাম জয়, ৬০তম ব্যাচের অভিজিৎ দাশ ও ৩০তম বিডিএসের সাজেদুল ইসলাম হৃদয় এ ঘটনায় জড়িত। তারাই মূলত মারধরে নেতৃত্ব দেন। তবে অন্তত ১০১৫ জন তাদের সাথে ছিল। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত দফায় দফায় তাদের চারজন জাহিদ হাসান ওয়াকিল, সাকিব হোসেন, এসএ রায়হান ও মোবাশ্বির হোসেন শুভ্রকে মারধর ও নির্যাতন করা হয়।

যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা চমেক ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। ২০২১ সালের ২৯ ও ৩০ অক্টোবর চমেক হোস্টেল ও ক্যাম্পাসে সংঘটিত ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মারামারির ঘটনায় বিভিন্ন মেয়াদে ৩১ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃতদের তালিকায় অভিযুক্তরাও ছিলেন। এর মাঝে সাজু দাশ ও সৌরভ দেব নাথ এক বছরের জন্য, সাজেদুল ইসলাম হৃদয় ও অভিজিৎ দাশ দুই বছরের জন্য এবং রিয়াজুল ইসলাম দেড় বছরের জন্য বহিষ্কৃত হন। ২০২১ সালের ওই ঘটনার পর থেকে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ রেখেছে চমেক প্রশাসন।

নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষার্থী বলেন, কেবল আক্রোশ থেকেই তাদের উপর এ নির্যাতন। সাজু দাশ ও সৌরভ দেব নাথ তাদের একই ব্যাচের (৬২তম)। এর মাঝে সাজু দাশ ও নির্যাতনের শিকার তিনজন একই সেকশনের। আর সৌরভ দেব নাথ ও নির্যাতনের শিকার এসএ রায়হান অন্য এক সেকশনের। সাজু দাশের সেকশনে একাডেমিক কার্যক্রমে সাকিবই এগিয়ে ছিল। এজন্য ক্লাসে সাকিবের জনপ্রিয়তাও ছিল, যা ছাত্রলীগ কর্মী সাজু দাশ মানতে পারেনি। এজন্য সাকিবের উপর সাজু দাশের আক্রোশ ছিল। একইভাবে এসএ রায়হানের উপর আক্রোশ ছিল ছাত্রলীগ কর্মী সৌরভ দেব নাথের। আর বাকি দুজনের অপরাধ ছিল সাকিবকে সাপোর্ট দেয়া। মূলত এ আক্রোশ থেকেই সিনিয়র সাজেদুল ইসলাম হৃদয়, অভিজিৎ দাশ ও রিয়াজুল ইসলাম জয়কে সাথে নিয়ে সাজু দাশ ও সৌরভ দেব নাথ এ ঘটনা ঘটান। পুরো ঘটনার বিবরণ কর্তৃপক্ষকে জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষার্থী।

অভিযুক্তদের মাঝে সাজু দাশের বিরুদ্ধে শনিবার আইসিইউতে গিয়ে চিকিৎসাধীন দুজনকে শাসিয়ে আসার অভিযোগ ওঠে। গতকালের দৈনিক আজাদীর প্রথম পাতায় ছবিসহ এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। আর নির্যাতনের শিকার দুজনকে আইসিইউতে রাখার সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিতে দেখা যায় অভিজিৎ দাশ ও অন্যদের। ঘটনার পর গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্যে অভিজিৎ দাশ দাবি করেন, তাদের চারজনকে নির্যাতন করা হয়নি। ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে শনিবার সাজু দাশের সঙ্গে কথা হয় আজাদীর। সাকিব যে শিবিরের কর্মকাণ্ডে জড়িত তার যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে দাবি করে সাজু দাশ বলেন, এসব তথ্যপ্রমাণ আমরা সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠিয়েছি। আর কলেজ প্রশাসনের একটি পক্ষ শিবিরের কর্মকাণ্ডে মদদ দিচ্ছে। সেটি না হলে এদের মতো সুস্থসবল মানুষকে আইসিইউতে রাখা হতো না। ছাত্রাবাসে নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে সাজু দাবি করেন, সবাই যে অভিযোগগুলো করছে, সেগুলোর আসলে কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই। আমরা তাদের মারধর করেছি, সেটা কি তারা বলেছে? হয়তো অন্য কেউ মারতে পারে। পরে অবশ্য অন্য কেউ মেরেছে কিনা সেটি তার জানা নেই।

এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাহেনা আক্তার আজাদীকে বলেন, অভিযোগ নিষ্পত্তি কমিটি পুরো ঘটনাটি তদন্ত করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে, চার শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় শনিবার ক্লাস বর্জন করে তাদের সহপাঠীরা। গতকালও ক্লাস বর্জনের কর্মসূচি দিলে চমেক প্রশাসন বুঝিয়ে তাদের ক্লাসে ফেরায়। তবে ক্লাস করতে গেলে সেখানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিদ্রুপ করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর সাহেনা আক্তার বলেন, এ ধরনের কথা আমরা শুনেছি। এ রকম করে থাকলে তা র‌্যাগিংয়ের আওতায় পড়বে। শিক্ষার্থীদের বলেছি, যে বা যারাই এ রকম করুক, প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে।

এখনো আইসিইউতে দুই শিক্ষার্থী : নির্যাতনের শিকার চার শিক্ষার্থীর মধ্যে দুজন জাহিদ হোসেন ওয়াকিল ও সাকিব হোসেন এখনো আইসিইউতে রয়েছেন। তাদের গত বৃহস্পতিবার রাতে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। শনিবার দুপুরে কয়েকজন যুবক আইসিইউতে ঢুকে এ দুজনকে শাসায় ও হুমকিধমকি দেয়। বিশেষ করে মারধর করেছে এমন কারো নাম না বলতে শাসিয়ে আসে বলে অভিযোগ। ঘটনা জানার পর চমেক ও হাসপাতাল প্রশাসন আইসিইউর সামনে পুলিশ মোতায়েন করে।

এই দুই শিক্ষার্থী চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে জানিয়ে চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাহেনা আক্তার আজাদীকে বলেন, তাদের এখনো কয়েকটি রিপোর্ট বাকি আছে। সব রিপোর্ট পেলে এবং সার্বিক অবস্থা দেখে তাদের আইসিইউ থেকে ছাড়পত্র দেয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধড. মনিরুজ্জামান, কনক চাঁপা চাকমাসহ ২১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পাচ্ছেন একুশে পদক
পরবর্তী নিবন্ধঅনেক ছাত্রকে বিনা কারণে গ্রেপ্তার করা হয়