পূর্বপরিকল্পিতভাবেই অপহরণ করা হয়েছিল নূরনবীকে (১৪)। সহায়তা করেছিল হোসেন (১৬) নামে তার বন্ধুটি। অপহরণের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল নূরনবী ও হোসেনের প্রতিবেশী কামরুল (২৫)। প্রথম অবস্থায় অপহরণ করা–ই ছিল টার্গেট। পরে নূরনবীকে যৌন নির্যাতনের ঘটনাটি প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ভয়ে খুন করা হয় তাকে। ক্লুলেস ঘটনাটির রহস্য শেষ পর্যন্ত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা আজাদীকে বলেন, আমরা হোসেনের খোঁজ পেয়েছি। তাকে জামালপুর তার খালার বাড়ি থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়া তাদের প্রতিবেশী সেই যুবককে খুঁজে পাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আফতাব আজাদীকে জানান, আমরা বলেছিলাম চারটা প্রশ্নের উত্তর মেলানোর চেষ্টা করছি। প্রশ্ন চারটি হলো, (১) ঢাকায় বন্ধুর জন্মদিন পালনের জন্য বের হয়ে সে চট্টগ্রামে কেন এলো, (২) তার সেই বন্ধ–ুই বা কোথায়, (৩) অপহরণকারীরা কারা, (৪) রেললাইন ধরে তার সাথে হেঁটে যাওয়া তরুণটা কে? এ চারটি প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেলে খুনের রহস্যের কিনারা করতে পারবো আমরা। বলা চলে এ চার উত্তর পেয়েছি আমরা।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আফতাব আজাদীকে জানান, নূরনবীকে অপহরণে বন্ধুর জন্মদিন ছিল একটা টোপ। সেখান থেকে তাদের প্রতিবেশী এ যুবকের নেতৃত্বে নূরনবীর বন্ধু হোসেনসহ তারা প্রথমে ফেনী আসে। সেখানে ওই যুবকের ভাইয়ের গ্যারেজে একরাত ছিল। এরপর তাদের সেখানে রেখে যুবকটি চলে যায়। পরে চট্টগ্রামে তাদের তিনজনের সাক্ষাৎ হয়। ফেনীতে থাকাবস্থায় নূরনবীর বাবার কাছে মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল।
এদিকে থানার ওসি ও তদন্ত কর্মকর্তা স্বীকার না করলেও হন্যে হয়ে খোঁজা সেই যুবকের নাম কামরুল বলে জানিয়েছে সিএমপি ডিবির একটি সূত্র। ডিবির সূত্রটি জানায় কামরুলের দ্বারা নূরনবী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
নূরনবীর বাবা পাঁচ হাজার টাকা বিকাশে পাঠালেও তা না তোলার কারণ প্রসঙ্গে এসআই আফতাব বলেন, এতেই বোঝা যায় মুক্তিপণের জন্য তাকে খুন করা হয়নি। তাকে খুন করা হয়েছে মূলত যৌন নির্যাতনের ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য।
নূরনবীর বড় ভাই রমজান হোসেন আজাদীকে জানান, গত ২১ আগস্ট বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তার ছোট ভাই বন্ধুর জন্মদিন পালন এবং খেলাধুলা করতে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। আমরা পরিবারের সবাই মিলে তাকে আত্মীয়–স্বজনের বাসাসহ আশেপাশের সম্ভাব্য সকল স্থানে অনেক খোঁজাখুজি করি। একপর্যায়ে আমার ছোট ভাইয়ের কয়েকজন বন্ধু জানায়, ছোট ভাই তাদের কাছে বলেছিল যে, সে হোসেনের সাথে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যাচ্ছে। ২২ আগস্ট ঢাকা যাত্রাবাড়ী থানায় একটা নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়।
২২ আগস্ট দুপুর দুইটা ৫৫মিনিটে নূরনবীর পিতার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ফোন করে তার ছেলের সন্ধান পেতে হলে তার ইমো নম্বরে ফোন দিতে বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। মামলার বাদী রমজান বলেন, আমার পিতার ইমো আইডি থেকে এসএমএস পাঠালে আসামিরা জানায় যে, আমার ছোট ভাই বর্তমানে ইন্ডিয়া বর্ডারে আছে এবং তারা আমার ছোট ভাইয়ের একটি ছবি পাঠায়।
রমজান আরও জানায়, অজ্ঞাতনামা আসামিরা বিভিন্ন সময়ে তাদের মোবাইল নম্বর ০১৯৫২–৪৫৫৮৩০, ০১৫৮১–৫২৬০১৩, ০১৫৬৬–০০৯৬২১ থেকে আমার বাবার কাছে ফোন করে। গত ২৪ আগস্ট দুপুরে তারা ইমোতে এসএমএস এর মাধ্যমে জানায় যে, তাদেরকে বিকাশ একাউন্ট নম্বর ০১৮২৫–৬৬১৬১৬ তে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিলে আমার ছোট ভাইকে সকাল বেলা বাসায় পৌঁছে দেবে। পরে আমি ওই নম্বরে পাঁচ হাজার টাকা পাঠাই। তখন তারা বিভিন্ন ধরনের কথা বলে আমাকে আমার ছোট ভাইয়ের একটি ভিডিও পাঠায় এবং তাদের সাথে যোগাযোগ করতে নিষেধ করে দেয়।
উক্ত ভিডিও ফুটেজে আমার ছোট ভাইকে চট্টগ্রামে ষোলশহর রেল স্টেশনে দেখতে পাই। পরে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে ষোলশহর রেল স্টেশনে পৌঁছি। সেখান থেকে একজন পাঁচলাইশ থানায় যোগাযোগ করতে বলেন। থানায় গিয়ে জানতে পারি আমার ভাই আর নেই। তাকে মাথা ও পেটের বাম পাশে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে।