চার দফা দাবিতে নগরীর ফয়’স লেক মোড়ের অদূরে চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অবস্থিত ইনস্টিটিউট অব কমিউনিটি অপথালমোলজি (আইসিও) প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের বাসভবন ঘেরাও করেছে। গতকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা এই কর্মসূচি পালন করেন। এরমধ্যে দুপুরে কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক চক্ষু হাসপাতালের পাশে অবস্থিত ডা. রবিউল হোসেনের বাসায় প্রবেশ করে উদ্ভূত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের ছেলে ইনস্টিটিউট অব কমিউনিটি অপথালমোলজির (আইসিও) উদ্যোক্তা ডা. রাজীব হোসেন, পরিচালক অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম, শিক্ষার্থীদের অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে স্টাম্পে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে, আগামী দুই মাসের মধ্যে কারিকুলামের মানোন্নয়নসহ চারটি দাবির সুরাহা করা হবে। লিখিত আশ্বাসের প্রেক্ষিতে দুই মাসের জন্য আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, নতুন শিক্ষাবর্ষের ভর্তির প্রসপেক্টাস (বিজ্ঞপ্তি) থেকে কেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্র্যাকটিস কথাটি উঠিয়ে দেওয়া হলো তার জবাবদিহিতা করতে হবে এবং তা পুনর্বহাল করতে হবে। অপটোমেট্রি বিষয়টিকে ‘ফ্যাকাল্টি অব হেলথ টেকনোলজি’ থেকে সরিয়ে ‘ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিন’ এ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে অথবা অপটোমেট্রির জন্য একটি পৃথক ফ্যাকাল্টি গঠন করতে হবে। এছাড়া কারিকুলামে এক বছর ইন্টার্নশীপ অন্তর্ভুক্তি করতে হবে, কারিকুলাম মান উন্নীত করে আন্তর্জাতিকমানের করতে হবে, ক্লিনিক্যাল সংযুক্তি দ্বিতীয় বর্ষ থেকে কোর্স কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের অভিাবকদের সাথে আলোচনা শেষে বাসা থেকে বের হয়ে আসেন ইনস্টিটিউট অব কমিউনিটি অপথালমোলজির (আইসিও) ডা. রাজীব হোসেন। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সাথে দীর্ঘ সময় আলোচনা করেছি। ৪ হাজার মার্কসের যে বি.অপটম কোর্স কারিকুলাম, সেই কোর্স কারিকুলাম বানানোর জন্য একটা এঙপার্ট টিম লাগবে। আমার জানা মতে, বাংলাদেশে চার হাজার মার্কসের পাশ করা কোনো বি.অপটম নাই। যদি না থাকে বাইরে থেকে এঙপার্ট আনতে হবে। কোর্সের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে হলে আন্তর্জাতিক কোর্স কারিকুলাম বানাতে হবে। এ সময় তিনি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলমকে ইঙ্গিত করে বলেন, আপনি আগামী সপ্তাহের মধ্যে অভিভাবকসহ চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি স্যারের কাছে যাবেন। বি. অপটম কোর্সের জন্য এঙপার্ট আনার কথা বলবেন। এক মাসের মধ্যে কোর্সটা জমা দিয়ে সিন্ডিকেটে পাশ করাবেন। পাশ করালে ৪ হাজারের মার্কসের যখন বি. অপটম কারিকুলাম হবে, তখন অটোমেটিক এক বছরের ইন্টার্নশীপ চলে আসবে। তখন এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী সমস্বরে চিৎকার করে বলেন, ১৫ টা ব্যাচ চলে যাওয়ার পরে এখন কেন কোর্স জমা দিয়ে পাশ করানোর কথা বলছেন। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, আমাদের সিনিয়রদের ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন অপটোমেট্রি কোর্সে সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে। অথচ এটি কোন প্রফেশনাল কোর্স না। আবার আমরা পড়ছি বি–অপটম কারিকুলামে। যদিও আমরা ১ বছরের ইন্টার্নশীপ এবং ক্লিনিক্যাল সংযুক্তি ঠিকভাবে পাচ্ছি না। বি.অপটম মানে হচ্ছে ব্যাচেলর অব অপটোমেট্রি। এই কোর্সটি কোনোভাবেই টেকনোলজি অনুষদের অধীনে হওয়ার কথা নয়। বিশ্বের সব দেশে এই কোর্সটি হচ্ছে মেডিসিন অথবা স্বতন্ত্র অনুষদের অধীনে।
ইনস্টিটিউট অব কমিউনিটি অপথালমোলজি’র ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন অপটোমেট্রি কোর্সের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী উম্মে সাদিয়া ইসলাম বলেন, এখানে আমরা যারা ভর্তি হয়েছি, সবাই অপটোমেট্রিস্ট হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু আমাদের কোর্স কারিকুলামটা আন্তর্জাতিক মানের না। সার্টিফিকেট দেয়া হচ্ছে ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন অপটোমেট্রির (বিএসএসি ইন অপটোমেট্রি)। আবার কোর্স পড়ছি ব্যাচেলর অব অপটোমেট্রি (বি.অপটম)। এই কোর্সটা পৃথিবীর কোথাও টেকনোলজি অনুষদের অধীনে না। আমরা ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা খরচ করে পড়ছি টেকনোলজি অনুষদে অধীনে থেকে ডাক্তারের সহকারী হওয়ার জন্য নয়। ভর্তির আগে আমাদের প্রসপেক্টাসে লেখা ছিল পাশ করার পর আমরা স্বাধীনভাবে প্র্যাকটিস করতে পারবো। এখন দেখা যাচ্ছে, এবার ১৬তম ব্যাচের ভর্তির প্রসপেক্টাসে সেটি তুলে দেয়া হয়েছে। সেটি বাকি ১৫ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সাথে একপ্রকার প্রতারণা করা। আমরা সব সময় চেয়েছি আমাদের কারিকুলামটা যেন আন্তর্জাতিকমানের হয়। যাতে ভবিষ্যতে মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি করার সময় সেই কারিকুলাম আমাদের সাপোর্ট করে। আমাদের সমস্যা সমাধানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি স্যার গত ৮ জুলাই টেকনোলজি অনুষদের ডিন ডা. ইব্রাহিম চৌধুরী স্যারকে সভাপতি করে একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করে দেন। সেই কমিটিতে ইনস্টিউিউটের পৃষ্ঠপোষক প্রতিনিধি হিসেবে অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেন স্যার এবং ডা. রাজীব হোসেন স্যারকেও রাখা হয়েছিল। গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে অনুষ্ঠিত ওয়ার্কিং কমিটির সভায় পৃষ্ঠপোষক প্রতিনিধি হিসেবে ওনারা যাননি।
উল্লেখ্য, এর আগে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ইনস্টিটিউট পরিচালক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, অপটোমেট্রি একটি স্বাধীন হেলথ কেয়ার প্রফেশন এবং এটি কোনো প্রযুক্তি বিষয় নয়। বরং এটি আইএসসিও কোড ২২৬৭ অনুযায়ী একটি স্বীকৃত স্বাস্থ্যসেবা পেশা যা দন্তচিকিৎসা (বিডিএস), ফিজিওথেরাপি বা ফার্মেসির মতোই মেডিকেল সায়েন্সের একটি শাখা। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অপটোমেট্রি বিষয়টি নিম্নলিখিত মেডিসিন অনুষদের অধীনে পরিচালিত হয়, এরমধ্যে রয়েছে ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টো, ইউএনএসডব্লিউ অস্ট্রেলিয়া এবং হংকং পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটি।