বন্দরের অভ্যন্তরে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কন্টেনার থাকায় কর্তৃপক্ষ চার গুণ মাশুল আদায় শুরু করেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ কন্টেনারের চাপ সামলাতে বাড়তি মাশুল আরোপের কথা বললেও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলেছে, অবৈধ মজুতদারি ঠেকাতেই কর্তৃপক্ষ মাশুল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রমজান উপলক্ষে আমদানি করা বিপুল পরিমাণ পণ্য কন্টেনারে বোঝাই করে বন্দরের অভ্যন্তরে রাখা হয়েছে। অভিযোগ আছে, দাম বাড়ানোর অপেক্ষা করে এসব পণ্য খালাস করা হচ্ছে না। মজুতকৃত পণ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন শিল্পের প্রচুর কাঁচামাল বোঝাই কন্টেনারও বন্দরে রয়েছে। এতে বন্দরের স্বাভাবিক উৎপাদনশীলতা ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গতকাল থেকে ৪ দিনের ফ্রি টাইমের মধ্যে কন্টেনার ডেলিভারি না নিলে ৪ গুণ হারে মাশুল আদায় শুরু করেছে।
সূত্র বলেছে, আমদানিকৃত পণ্য বোঝাই কন্টেনার বন্দরের ইয়ার্ডে চার দিন বিনা মাশুলে রাখা যায়। অর্থাৎ জাহাজ থেকে কন্টেনার খালাস করে ইয়ার্ডে রাখার পর ৪ দিন কোনো ভাড়া নেওয়া হয় না। কিন্তু এরপর থেকে প্রতিদিনের জন্য ২০ ফুটের কন্টেনারের জন্য ৬ ডলার, ৪০ ফুটের কন্টেনারের জন্য ১২ ডলার মাশুল পরিশোধ করতে হয়। পরবর্তীতে নির্দিষ্ট দিন শেষে এই ভাড়ার হার বাড়তে থাকে। সর্বশেষ হিসেবে ২০ ফুটের একটি কন্টেনারের জন্য প্রতিদিন ২৪ ডলার এবং ৪০ ফুটের কন্টেনারের জন্য প্রতিদিন ৪৮ ডলার ভাড়া আদায় করা হয়। গতকাল থেকে তা ৪ গুণ বাড়তি হারে আদায় করা হচ্ছে। অর্থাৎ একটি কন্টেনার নির্দিষ্ট সময়ের পরে ইয়ার্ডে রাখলে ২৪, ৪৮ এবং ৯৬ ডলার পর্যন্ত প্রতিদিন ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। ৪০ ফুটের কন্টেনারের ক্ষেত্রে ৪ দিনের ফ্রি টাইমের পর প্রতিদিনের জন্য ৪৮ ডলার, পরবর্তী সপ্তাহের প্রতিদিনের জন্য ৯৬ ডলার এবং পরবর্তীতে প্রতিদিনের জন্য ১৯২ ডলার হারে ভাড়া গুনতে হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, আমদানিকারকরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কন্টেনার খালাস করলে বাড়তি মাশুল দিতে হবে না। আমরা চাই আমদানিকারকেরা দ্রুত পণ্য খালাস করুক। এতে সবার উপকার হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে গতকাল প্রায় ৩০ হাজার টিইইউএস কন্টেনার ছিল। এসব কন্টেনারের অনেকগুলো নানা পণ্যে ঠাসা। কন্টেনারের পণ্য খালাস না করে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারার অভিযোগ শোনা যাচ্ছে কয়েকদিন ধরে। ইতোমধ্যে প্রশাসন নগরীর বাজারগুলোতে অভিযান চালিয়েছে। শীর্ষ কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করেছেন। কিন্তু বন্দরের সংরক্ষিত এলাকায় কন্টেনারে বোঝাই থাকা পণ্যগুলো দেশের সরবরাহ নেটওয়ার্কে না এলে বাজার পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হবে না। এ অবস্থায় বন্দর কর্তৃপক্ষ গতকাল থেকে চার গুণ হারে মাশুল আদায় শুরু করেছে। ৪ গুণ মাশুল দিয়ে দিনের পর দিন কন্টেনার ইয়ার্ডে ফেলে রাখা সম্ভব হবে না বিধায় এসব পণ্য দ্রুত বাজারে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
অবশ্য ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, বন্দরের কন্টেনারগুলোর অধিকাংশ গার্মেন্টসের কাঁচামাল। চার গুণ হারে মাশুল নির্ধারিত হলে গার্মেন্টস সেক্টরে খরচ বাড়বে। ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকদের খুব বেশি কন্টেনার বন্দরের ইয়ার্ডে নেই বলেও দাবি করেন তারা।
অবশ্য ভোক্তা শ্রেণি বন্দর কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তারা বলেন, অনেকে ‘সস্তা গুদাম’ খ্যাত ইয়ার্ডে কন্টেনার ফেলে রেখেছে। এসব পণ্য দ্রুত বাজারে আনার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা অভিনব হলেও অপ্রত্যাশিত নয়। এমন পদক্ষেপকে কৌশলী এবং গণমুখী।