চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের সংগঠন দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচনের কার্যক্রম চলছে। সংগঠনের আগামী নেতৃত্বের জন্য চার ক্যাটাগরি থেকে ২৪ জন পরিচালকের পদের বিপরীতে ৭১ জন ব্যবসায়ী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মোট ৭২ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও শেষ দিনে এসে একজন ব্যবসায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেননি। চারটি পৃথক প্যানেল থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ব্যবসায়ীরা।
চেম্বার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিনে উৎসবমুখর পরিবেশে সকলে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা বা বিশৃঙ্খলা হয়নি। জমাকৃত ৭১টি মনোনয়নপত্র আগামীকাল ২৩ সেপ্টেম্বর বাছাই ও ২৫ সেপ্টেম্বর খসড়া প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। ৮ অক্টোবর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ও চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। আগামী ১ নভেম্বর চেম্বারের ভোট হবে।
চট্টগ্রাম চেম্বার নির্বাচন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, চারটি ক্যাটাগরিতে মোট ৭১ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম জমা করেছেন। অর্ডিনারি গ্রুপ ক্যাটাগরিতে ৪৮ জন, অ্যাসোসিয়েট গ্রুপ ক্যাটাগরিতে ১৭ জন, ট্রেড গ্রুপে ৩ জন এবং টাউন অ্যাসোসিয়েশনে ৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
চেম্বারের সঙ্ঘবিধি অনুসারে, অর্ডিনারি গ্রুপ থেকে ১২ জন, অ্যাসোসিয়েট গ্রুপ থেকে ৬ জন, ট্রেড গ্রুপ থেকে ৩ জন ও টাউন অ্যাসোসিয়েশন থেকে ৩ জন পরিচালক নির্বাচিত হবেন। নির্বাচিত ২৪ পরিচালক পরবর্তীতে বৈঠক করে সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি ও সহসভাপতি অর্থাৎ প্রেসিডিয়াম নির্বাচিত করবেন।
এবারের নির্বাচনে চারটি প্যানেল থেকে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ী সূত্রগুলো বলেছে, এসব প্যানেলের টিম লিডার হিসেবে আমিরুল হক, এস এম নুরুল হক, মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন চৌধুরী এবং মোহাম্মদ মহিউদ্দিন নির্বাচনে লিড দিচ্ছেন।
গণ অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের মুখে গত বছর সেপ্টেম্বরে তৎকালীন পরিচালনা বোর্ড পদত্যাগ করে। এরপর থেকে প্রশাসক দিয়ে চেম্বারের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। চেম্বারের এবারের নির্বাচনে সাধারণ সদস্য হিসেবে ৪ হাজার ১ জন, সহযোগী সদস্য হিসেবে ২ হাজার ৭৬৪, টাউন অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হিসেবে ৫ জন এবং ট্রেড গ্রুপের সদস্য হিসেবে ১০ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
নির্বাচনে চারটি প্যানেলের একটিতে লিড দেয়া সীকম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক অর্ডিনারি গ্রুপে ২২ জন, অ্যাসোসিয়েট গ্রুপে ৮ জন এবং ট্রেড ও টাউন অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপে ৬ জন প্রার্থীর ফরম জমা দিয়েছেন জানিয়ে আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রামের বঞ্চনার ফিরিস্তি অনেক বড়। ১৫ বছরেও বে টার্মিনাল হয়নি, মীরসরাই পর্যন্ত বেড়িবাঁধ–কাম সড়ক হয়নি। একটি স্কেল নিয়ে আমাদের সমস্যা জিইয়ে রয়েছে বহুদিন ধরে। আরো নানাভাবে আমাদের ব্যবসায়ীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। শিল্পায়ন ব্যাহত হয়েছে। আমরা এসব নিয়ে কাজ করতে চাই। চট্টগ্রাম চেম্বারকে সত্যিকার অর্থে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের একটি কল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার চেষ্টা করব।
তিনি বলেন, চেম্বার নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে আনন্দমুখর অবস্থা, রীতিমতো উৎসব। এটা ব্যবসায়ীদের ব্যাপার, কোনো রাজনীতি নয়। এখানে আমরা ব্যবসায়ী। প্রত্যেকে তার যোগ্যতাবলে এখানে এসেছেন। বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রত্যেক ব্যবসায়ীর অবদান আছে। আমরা এক ছাতার নিচে থাকতে চাই। একটি টিম হিসেবে কাজ করব। চট্টগ্রামের ব্যবসা–বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান নিয়ে কাজ করব। চট্টগ্রামের প্রতি বৈষম্য দূর করতে আমরা কথা বলব।
তিনি আরো বলেন, বাণিজ্যিক রাজধানীর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন চাই আমরা। বে টার্মিনাল নির্মাণ, মীরসরাই শিল্পাঞ্চলের পানি সংকট দূর করতে কাজ করতে চাই। চট্টগ্রামকে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ হাব করতে চাই।
চট্টগ্রাম সচেতন ব্যবসায়ী সমাজের আহ্বায়ক এসএম নুরুল হক বলেন, চিটাগাং চেম্বারে গত ২০ বছর ধরে সুন্দর নির্বাচন কেউ পায়নি। আমরা চাই প্রত্যেক ব্যবসায়ী (ভোটার) যেন এসে ভোট দিতে পারেন। তারা যাকে পছন্দ করবেন তিনি নির্বাচিত হবেন। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব করবেন। নির্বাচনী কার্যক্রমে কোনো বাধা নেই। আমরা খুশি।
নির্বাচন উৎসবমুখর হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের ব্যবসা–বাণিজ্যের সমস্যা অনেক। আমরা এসব সমস্যার সমাধান করতে চাই। চেম্বার যাতে ব্যক্তিস্বার্থের পরিবর্তে সত্যিকারের ব্যবসায়ীবান্ধব হয়ে ওঠে সে লক্ষ্যে কাজ করব।
অপর একটি প্যানেল লিডার মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, চেম্বার ব্যবসায়ীদের সংগঠন। অথচ এটিকে যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা একটি ব্যবসায়ীবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে চেম্বারকে গড়ে তুলতে চাই। তিনি বলেন, নির্বাচন উৎসবমুখর হবে। ব্যবসায়ী, শিল্পপতিরা বহু বছর ভোট দিতে পারেননি। এবার সবাই এসে আনন্দের সাথে ভোট দেবে।
আরেক প্যানেল লিডার ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট অ্যান্ড বিজনেসম্যান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের (আইবিডব্লিউএফ) সেক্রেটারি শাহজাহান মহিউদ্দিন বলেন, আমি অনেকদিন ধরে ব্যবসায়ীদের জন্য কাজ করে আসছি। আমাদের সংগঠনটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধিত। ব্যবসায়ীদের কল্যাণে আমাদের সংগঠন কাজ করে। সামনের দিনগুলোতেও করবে। নিজেকে প্যানেল লিডার পরিচয় দিতে না চেয়ে তিনি বলেন, সবাই উৎসবমুখর পরিবেশে সৌহার্দ্যের মাধ্যমে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। অনেক যোগ–বিয়োগ, মেরুকরণ হবে। তবে যাই হোক না কেন ব্যবসায়ীদের কল্যাণেই হবে। এখানে কোনো আপোষ করা হবে না। তিনি চট্টগ্রাম চেম্বারকে আক্ষরিক অর্থে একটি ব্যবসায়ীবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে চান বলে উল্লেখ করেন।
নির্বাচন যাতে স্বচ্ছ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে হয় সকল প্রার্থী সেদিকে সজাগ থাকবেন বলে নির্বাচন কমিশন সূত্র আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।