চার কারণে বোয়ালখালীতে লেবু উৎপাদন কম

বাজার চড়া, দাম শুনে অনেক ক্রেতা না কিনে ফিরে যান

বোয়ালখালী প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ২৮ মার্চ, ২০২৩ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

বাজারে বেড়ে চলেছে বোয়ালখালীর লেবুর চাহিদা। এ উপজেলার পূর্বাঞ্চলে পাহাড়ে উৎপাদিত লেবু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ হয় ঢাকার শ্যামবাজার, কারওয়ান বাজার, কুমিল্লার নিমসা বাজার, নোয়াখালী বাজার ও চট্টগ্রামের রিয়াজুদ্দিন বাজার ও বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন পাইকারি আড়তে।

এখানকার শ্রীপুরখরণদ্বীপ ইউনিয়নের জ্যৈষ্ঠপুরা, আমুচিয়া ও কড়লডেঙ্গা ইউনিয়নে ছোটবড় প্রায় হাজারখানেক বাগানে এখন লেবুর চাষ হচ্ছে। চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্যান্য সময় তারা লেবু চাষ করে লাভবান হলেও গত মৌসুমে লেবুর যথাযথ দাম না পাওয়া, অনাবৃষ্টি, কাজের লোকের অভাব ও পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের উৎপাতের কারণে এবার লেবু চাষে তেমন আগ্রহ ছিল না। ফলে উৎপাদন কম হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। তাই এখন চড়া মূল্যে লেবু কিনতে হচ্ছে রোজাদারসহ অন্যদের।

বোয়ালখালীর পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার কর্ণফুলী থেকে শুরু করে বোয়ালখালীপটিয়া সীমান্ত পর্যন্ত জ্যৈষ্ঠপুরা গুচ্ছগ্রাম, আমুচিয়া নয়া বাজার, কড়লডেঙ্গা মৌলভীবাজার, তালুকদার পাড়া, লুদি সিকদার পাড়ার পয়েন্টে আগে দৈনিক ৯০০ থেকে এক হাজার বস্তা লেবু পাওয়া যেত। এখন পাওয়া যাচ্ছে ৩৪শ বস্তা।

জ্যৈষ্ঠপুরা পাহাড়ের লেবু চাষি জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত মোজাম্মেল হক বকুল জানান, পাহাড়ি ভূমিতে তার লেবু বাগান রয়েছে প্রায় ১৫০ একর। এবার সেচের অভাবে ফলন হয়েছে অর্ধেকেরও কম। চলতি রমজান ও গ্রীষ্মের চাহিদামতো লেবু সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বাজারে দাম একটু বেশি। তিনি অভিযোগ করেন, লেবু চাষে সরকারি কোনো সহযোগিতা নেই বললেই চলে। সরকারি সহযোগিতা ও কৃষি অধিদপ্তরের মনিটরিং থাকলে উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পেত।

করলডেঙ্গার পাইকারি লেবু ব্যবসায়ী মো. সাকিব বলেন, জেলার মধ্যে বেশিরভাগ লেবুর বাগান করলডেঙ্গায় অবস্থিত। কিন্তু গত মৌসুমে এখানকার চাষিরা সঠিক দাম না পাওয়া এবং কাজের লোকের মজুরি বেশি হওয়ায় অনেকেই বাগান পরিষ্কার করেনি। তাই ফলন কম হয়েছে। বাজারে ঘাটতি রয়েছে, দামও একটু বেশি। এর উপর গরম ও রোজার চাহিদা বাজার অস্তির করে তুলেছে। অনাবৃষ্টি ও কামলার অভাবে বাগান পরিচর্যা করা যায়নি। ফলে উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাজারে এখন লেবুর দাম বাড়তি। আড়াই থেকে ৩শ লেবুর ভার আগে কেনা পড়ত ১৩১৪শ টাকা। এখন তা কিনতে হচ্ছে ২৮ থেকে ৩৫শ টাকায়। মাঝারি আকারের লেবুর হালি কয়েকদিন আগে ছিল ১০ থেকে ১৫ টাকা। সেই লেবু এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা করে।

বহদ্দারহাটের খুচরা লেবু বিক্রেতা সোনা মিয়া বলেন, এখন লেবু বিক্রি করে পোষায় না। যে দরে কিনি সে দরে বিক্রি করতে হয়। মাঝখানে ক্রেতাদের নানা কথা শুনতে হয়। পাইকারি বিক্রেতারাও চাহিদামতো লেবু দিতে পারে না।

বাচ্চু মিয়া নামে এক পাইকারি বিক্রেতা জানান, প্রতি পিস এলাচি লেবু কিনে আনছেন ১৫ টাকা করে। বিক্রি করছেন ১৭ টাকা। নিম্নমানের লেবু প্রতি পিস কিনতে হচ্ছে ৫৬ টাকা করে। তাই এই জাতের লেবু বিক্রি করছেন ৯১০ টাকা। মাঝখানে গাড়িভাড়া ও দোকান ভাড়া দিয়ে হাতে কিছু থাকে না। আরো এক মাস বাড়তি দাম থাকবে। এরপর দাম কমতে পারে। বৃষ্টি হলেই ১৫২০ দিনের মধ্যে দাম কমে যাবে।

বাজারে লেবু কিনতে এসেছিলেন বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করা আবদুর রহমান। কিন্তু দাম শুনে তিনি লেবু না কিনেই বাড়ি ফিরে যান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহ্‌ বলেন, এবার বাগানে পর্যাপ্ত পরিচর্যা না করায় লেবুর ফলন ভালো হয়নি। ফলন বাড়াতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি চাষিদের প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রতিদিন একসঙ্গে দুই হাজার মানুষের ইফতার
পরবর্তী নিবন্ধচবির স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান বর্জন শিক্ষক সমিতির