চট্টগ্রামে উপজেলা পর্যায়ে ডায়রিয়া রোগীর প্রকোপ বাড়ছে। অনেক উপজেলায় ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শয্যার দ্বিগুণ ডায়রিয়া রোগী ভর্তি আছে। এসব রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। হাসপাতালে বেড না পেয়ে ফ্লোরে চিকিৎসা চলছে পটিয়া আনোয়ারাসহ বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতালে। শহরে এই রোগের প্রাদুর্ভাব তেমন আশংকাজনক না হলেও উপজেলা পর্যায়ে উর্ধ্বমুখী। গত কয়েকদিনে কয়েকটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে রোগী ভর্তির চিত্রে দেখা গেছে ৫০ শয্যার হাসপাতালে দিনে ১১০ থেকে ১১৭জন পর্যন্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন।
গতকাল সরেজমিনে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায় হাসপাতালে মোট ৮০ জন রোগী ভর্তি ছিল। এরমধ্যে ৬৫ জন ডায়রিয়া রোগী। এর মধ্যে ৪০জনই গতকাল ভর্তি হয়েছেন। এদিকে আনোয়ারা উপজেলায় হাসপাতালেও গত এক সপ্তাহে ৩শ’র বেশি ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। দিনদিন বাড়ছে প্রকোপ। এ ব্যাপারে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সব্যসাচী নাথ আজাদীকে জানান, ডায়রিয়া রোগী তো আগের চেয়ে অনেক কমেছে। দুতিনদিন আগেও অনেক বেশি রোগী ভর্তি ছিল। গতকাল থেকে একটু কমেছে। গরমের কারনে নলকূপের পানির লেয়ার কমে যাওয়ায় অনেকেই বাধ্য হয়ে পুকুর ডোবার ময়লা-অপরিস্কার পানি ব্যবহার করছে। বাসি-খোলা খাবার খাচ্ছে এবং মৌসুমী ফল-মূলের উপর মাছি বসছে। এগুলো ভালো করে না ধুয়ে খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওয়ার্ড ইনচার্জ শাহিদা পারভিন ও পরিসংখ্যানবিদ আহসান হাবিবের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ২৪ মে হাসপাতালে ৫৪জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। ২৫ মে ৫১জন, ২৬ মে ৫১ জন, ২৭ মে ৪৩ জন, ২৮ মে ৩৯ জন, ২৯ মে ৩১ জন, ৩০ মে ৩৯ জন এবং গতকাল ৩১ মে ভর্তি হয়েছেন ৪০ জন রোগী।
এদিকে আনোয়ারা উপজেলা ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন ৭২ জন। যার মধ্যে ৬০জনের বেশি ডায়ারিয়া রোগী বলে জানা গেছে। অনেকে করোনা সংক্রমণের ভয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসছেন না বলেও জানা গেছে। গতকাল সোমবার সকালে স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে ভর্তি হয়েছেন ৪৫জন জন ডায়রিয়া রোগী। এরমধ্যে সুস্থ হয়ে ৩৭ জন বাড়ি ফিরেছেন বলে জানান আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার ডা. আবু জাহিদ মো. সাইফ উদ্দিন। তিনি দৈনিক আজাদীকে জানান, প্রতিদিনই ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হচ্ছেন। এখন আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ থেকে জানা গেছে, গত শুক্রবার থেকে প্রতিদিনই ৩০-৪০ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই বয়স্ক, নারী ও শিশু। ডুমুরিয়া গ্রাম থেকে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগী বলেন, আমি গত তিনদিন ধরে ভর্তি আছি। ডাক্তাররা দেখাশোনা করলেও হাসপাতালের চারপাশ থেকে দুর্গন্ধ আসে। টয়লেট খুবই অপরিস্কার।
হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স জয়া দাশ বলেন, নার্স সংকট রয়েছে। তাই কয়েকদিন ধরে রোগীর চাপ বেশি থাকায় সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও আমরা রোগী ভর্তিসহ ওষুধ দিয়ে সেবা প্রদান করে যাচ্ছি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে দায়িত্বরত সহকারী সার্জন ডা. শিমু মহাজন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ডায়রিয়া রোগীর চাপ। খাবার স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়ে ডাক্তার নার্সরা সার্বক্ষণিক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
বোয়ালখালী উপজেলায়ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে এক মাসে ৯শ’ জনের মতো ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এই ব্যাপারে বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জিলু্লর রহমান আজাদীকে জানান, প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৩৫জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। বর্তমানে ৭৬ জনের মতো রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আমরা সার্বক্ষনিক চিকিৎসা দিচ্ছি।
বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শফিকুর রহমান জানান, বাঁশখালী উপজেলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে গত ১ সপ্তাহে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন ৬৮ জন। এরমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫৯ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন আরো ৯ জন।