ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার চাক্তাই–খাতুনগঞ্জে প্রবেশ করেছে ভারতীয় পেঁয়াজের ট্রাক। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত সেইসব পেঁয়াজ বেচাবিক্রি হয়নি। তবে আড়তদাররা বলছেন, খাতুনগঞ্জের বাজার পর্যন্ত আসতে আমদানিকারকের সম্ভাব্য খরচ পড়েছে ৩২ থেকে ৩৫ টাকা। কারণ হিলি স্থলবন্দরে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৮ থেকে ৩০ টাকায়। চট্টগ্রাম আসতে আরো ৫ টাকা মতো খরচ হয়। অন্যদিকে চাক্তাই–খাতুনগঞ্জে দেশীয় পেঁয়াজের বাজার নেমে গেছে ৫০ টাকায়। দুদিন আগে সেই পেঁয়াজ প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয়েছে। এদিকে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দরপতন হলেও খুচরা বাজারে ৮০ টাকার নিচে পেঁয়াজ মিলছে না। ভোক্তারা বলছেন, পাইকারিতে যখন পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায় তখন খুচরা ব্যবসায়ীরা দাম বৃদ্ধি করেন। কিন্তু এখন পাইকারির সাথে খুচরার পার্থক্য হয়ে গেছে ৩০ টাকা, যা অস্বাভাবিক। প্রশাসনের উচিত দ্রুত খুচরা বাজারে মনিটরিং করা।
জানা গেছে, বর্তমানে দেশে তাহেরপুরী, বারি–১ (তাহেরপুরী), বারি–২ (রবি মৌসুম), বারি–৩ (খরিপ মৌসুম), স্থানীয় জাত ও ফরিদপুরী পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। ফলে বছরজুড়ে কোনো না কোনো জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন। এর মধ্যে ১৮ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হয়। আর আমদানি করা হয় বাকি চার লাখ টন। মূলত এই আমদানিকৃত চার লাখ টন পেঁয়াজ বাজারের ওপর খুব বড় প্রভাব ফেলে।
চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আবুল কাশেম আজাদীকে বলেন, বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের একটি ট্রাক এসেছে। আমরা শুনেছি স্থলবন্দরে পেঁয়াজ ৩০ টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে। ভোক্তা পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম কেমন হবে সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। এটি আসলে নির্ভর করবে চাহিদা ও যোগানের ওপর। যেমন ৯০ টাকার দেশি পেঁয়াজ এখন ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ভারতীয় পেঁয়াজ মাত্র আসা শুরু হয়েছে। বাজারে যে ট্রাকটি এসেছে সেই পেঁয়াজ এখনো বিক্রি হয়নি। কোনো কোনো পত্রিকায় লিখেছে, ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানিতে প্রতি কেজি খরচ পড়েছে ২০ টাকা। আসলে সেটি সত্য নয়। কারণ সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩০–৩৫ টাকায়। চট্টগ্রামে আসতে আসতে সেটি ৪০ টাকা খরচ পড়তে পারে। এদিকে খুচরা বাজারে এখনো পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা দরে। দামপাড়া এলাকার খুচরা বিক্রেতা মোহাম্মদ শাহেদ বলেন, আমরা পেঁয়াজ কিনেছি প্রতি কেজি ৮৫ টাকায়। এখনো ৫ টাকা লোকসানে বিক্রি করছি।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন আজাদীকে বলেন, ভারতীয় পেঁয়াজের বুকিং দর বাড়েনি। তাই ব্যবসায়ীরা যাতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াতে পারে সেজন্য প্রশাসনকে মনিটরিং জোরদার করতে হবে। আমাদের জানা মতে, ভারতীয় পেঁয়াজ চাক্তাই–খাতুনগঞ্জের বাজারে আসতে দাম পড়ছে ২৬–২৭ টাকা।
উল্লেখ্য, সরকার দেশের কৃষক বাঁচাতে ১৫ মার্চ থেকে পেঁয়াজের আইপি (আমদানি অনুমতি) বন্ধ করে দেয়। পরে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে গত সোমবার থেকে আবারও পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়। গতকাল পর্যন্ত প্রায় ৬ লাখ টন পেঁয়াজের আইপি দিয়েছে সরকার।