চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পচা পেঁয়াজের স্তূপ

প্রয়োজনের অতিরিক্ত আমদানি, এসেছে নিম্নমানেরও

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৬ নভেম্বর, ২০২০ at ৯:২৬ পূর্বাহ্ণ

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের অধিকাংশ দোকান ও গুদামের সামনে এখন পচা পেঁয়াজের স্তূপ। এসব পেঁয়াজের গন্ধে পথচারীরা নাক চেপে হাঁটতে বাধ্য হচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্দর থেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেফার কন্টেনারে চীন, মিশর, মিয়ানমার, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ এসেছে। কিছু কিছু পেঁয়াজ আসার পথে শিকড় গজিয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু চালানে নিম্নমানের পেঁয়াজও আসে। আবার কন্টেনারে বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে পেঁয়াজ পচে যেতে পারে। সব মিলিয়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজে ব্যবসায়ীদের কম করে হলেও ২০ টাকা পর্যন্ত লোকসান দিতে হচ্ছে। এদিকে পচে যাওয়া পেঁয়াজ ভ্রাম্যমাণ অনেক ফেরিওয়ালা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তারা এসব রোদে শুকিয়ে ভ্যানগাড়িতে বিক্রি করছেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পচা পেঁয়াজের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়। তাই এসব পেঁয়াজ খেলে খাদ্যে বিষক্রিয়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, গত এক মাসে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। তার মধ্যে আবার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পেঁয়াজ এসেছে নিম্নমানের। তাই ব্যবসায়ীদের বাধ্য হয়ে আমদানিমূল্যের অর্ধেক দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে। পেঁয়াজের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং বিক্রি কমে যাওয়ায় দোকান ও গুদামে পচে গেছে পেঁয়াজ। পচা পেঁয়াজ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন প্রায় ব্যবসায়ী। পচা পেঁয়াজের সংস্পর্শে ভালো পেঁয়াজটিও নষ্ট হয়ে যায়।
গতকাল খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দোকান ও গুদামের সামনে পচা পেঁয়াজের বস্তা স্তূপ করে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। কিছু পেঁয়াজ আবার নালায়ও পড়ছে। এসব পেঁয়াজ কিনতে ভ্যানগাড়ি নিয়ে এসেছেন ফেরিওয়ালারা। তারা এসব পেঁয়াজ রাস্তার ধারে রোদে শুকিয়ে মোটামুটি মানের পেঁয়াজগুলো আলাদা করে বস্তায় ভরছেন। কয়েকজন আড়তদারকেও একই কাজ করতে দেখা গেছে।
খাতুনগঞ্জে আলী হোসেন নামের একজন ফেরিওয়ালা জানান, পচা পেঁয়াজের বস্তায় অনেক ভালো পেঁয়াজও পাওয়া যায়। তাই আমরা ১০ টাকা কেজিতে এসব পেঁয়াজ কিনে বিভিন্ন অলিগলির হোটেলে বিক্রি করছি। ৫০ কেজি পেঁয়াজের মধ্যে বাছাই করে ২০ কেজির মতো পাচ্ছি।
চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়, চীনা পেঁয়াজ ৩০-৩৫ টাকা, তুরস্কের পেঁয়াজ ৩৫-৪০ টাকা, পাকিস্তানি পেঁয়াজ ২০-৪০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকায়।
হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস আজাদীকে বলেন, পেঁয়াজের বাজার অনেকদিন ধরে নিম্নমুখী। এখন পেঁয়াজ নিয়ে কারোর আগ্রহ নেই। বর্তমানে বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ রয়েছে। একসাথে প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ চলে আসায় অনেক পেঁয়াজের শিকড় এসে গেছে। আবার কিছু পরিমাণ নিম্নমানের পেঁয়াজও এসেছে। যেগুলো ইতোমধ্যে পচে গেছে। আড়তদাররা বাধ্য হয়ে নামমাত্র মূল্যে এসব বিক্রি করে দিচ্ছেন।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে। রপ্তানি বন্ধের জেরে দেশের বাজারে বেড়ে যায় পেঁয়াজের দাম। এবার আমদানিকারকরা চীন, মিয়ানমার, পাকিস্তান, মিশর, তুরস্ক, নেদারল্যান্ডস ও নিউজিল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আনতে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র থেকে ৪৭৮টি আইপির বিপরীতে ২ লাখ ৬ হাজার ৭৮৮ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন। এসব দেশ থেকে আসা ৪৮ হাজার ৩৮৯ টন পেঁয়াজের ছাড়পত্র ইস্যু করেছে সংগনিরোধ কেন্দ্র।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযেভাবে বাংলাদেশি থেকে ভারতীয় হলেন সৌমিত্র
পরবর্তী নিবন্ধস্বাস্থ্যবিধি মেনে অসমাপ্ত পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত চবির