চাকসু ভবন সাজানো হলেও অপ্রস্তুত হল সংসদগুলো

চবি প্রতিনিধি | শনিবার , ৪ অক্টোবর, ২০২৫ at ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসজুড়ে এখন উৎসবের আমেজ। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন হতে যাচ্ছে, চলছে প্রাণবন্ত আলোচনা, প্রার্থীদের প্রচারণাও গতি পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা চাকসুর সাদা ভবনটি আবারও সাদা রঙে নতুন করে সাজানো হচ্ছে যেন এক দীর্ঘ শীতঘুম ভেঙে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। সর্বশেষ সিন্ডিকেটে চাকসু ভবন সংস্কারের জন্য বাজেট ছিলো প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা। সেখানে হল সংসদের জন্য কোনো বরাদ্দ ছিল না বলে জানা যায়। চাকসু নির্বাচনী আমেজের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো ঘুরে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। চাকসু ভবন যখন নবজাগরণের সাজে সেজে উঠছে, তখন হল সংসদগুলো পড়ে আছে পরিত্যক্ত, অচল কিংবা রুম সংকটে আবাসন ও খেলার ঘরে পরিণত হয়ে।

প্রথমে যাওয়া হলো শাহজালাল হলে। ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ল যে কক্ষে একসময় ছাত্রদের প্রতিনিধিত্বের আলোচনায় জমজমাট পরিবেশ ছিল, সেখানে এখন ধুলো আর অচলাবস্থার ছাপ। নির্বাচনপরবর্তী কার্যক্রম চালানোর মতো কোনো পরিবেশ নেই। শাহ আমানত হলে চিত্র আরও ভিন্ন। সেখানে সংসদ রুমের অস্তিত্বই নেই। যে কক্ষটি হল সংসদের জন্য নির্ধারিত ছিল সেটি শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য বরাদ্দ হয়ে গেছে তাও অজানা।

সোহরাওয়ার্দী হলে গিয়ে দেখা যায়, সংসদ রুম এখন আর রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক কার্যক্রমের জন্য নয়, বরং সেটি রূপ নিয়েছে ক্যারাম খেলার ঘরে। অন্যদিকে শহীদ আব্দুর রব হলে সংসদ রুমে থাকছেন শিক্ষার্থীরাই। আলাওল হলে যদিও সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে, তবে সংসদ কক্ষ এখনো প্রস্তুত হয়নি। পাশের এএফ রহমান হলের অবস্থা আরও বিবর্ণ। দরজায় ঝুলছে একটি বিশাল তালা, সংসদ কার্যক্রমের কোনো চিহ্ন নেই। মেয়েদের হলের পরিস্থিতি আরও জটিল। শামসুন্নাহার হলে আলাদা কোনো সংসদ কক্ষই নেই। আপাতত টিভি রুম বা কমন রুমকে সংসদ রুম হিসেবে ব্যবহারের কথা ভাবছে কর্তৃপক্ষ। বিজয় ২৪ হলেও নির্দিষ্ট কোনো সংসদ কক্ষ নেই। তবে নির্বাচনের আগেই ব্যবস্থা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

পরিদর্শনের সময় কথা হলো বিভিন্ন হল প্রভোস্টের সঙ্গে। প্রত্যেকে সংসদ কক্ষ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন পরিকল্পনার কথা জানালেন। আলাওল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ এনামুল হক বলেন, ‘আমাদের হল সংসদের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে, আশা করি শীঘ্রই সম্পন্ন হবে। আমাদের হল সংসদের জন্য কিছু ফার্নিচার লাগবে, প্রশাসনের সাথে কথা বলে শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী একটি হল সংসদ রুম উপহার দিব আমরা।’

শাহজালাল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ফুয়াদ হাসান বলেন, ‘যেহেতু দীর্ঘদিন হল সংসদ চালু ছিল না তাই আমাদের ছেলেদের জন্য যে হল সংসদের রুমটি ছিল সেটি প্রস্তুত না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও এ পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পাইনি। তবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি নির্বাচনের আগেই শিক্ষার্থীদের জন্য সংসদ রুমকে উপযোগী করে প্রস্তুত করব।’

সোহরাওয়ার্দী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আগে সংসদ নির্বাচন হোক, তারপর আমরা ব্যবস্থা করব। রুম নেই রুম দিব, সমস্যা নেই। হল সংসদের রুম ব্যবস্থা করা হবে।’

শাহ আমানত হলের প্রভোস্ট ড. চৌধুরী মোহাম্মদ মনিরুল হাসান বলেন, ‘হল সংসদের জন্য আমরা আলাদা একটি রুম বরাদ্দ করেছি। নিচতলায় লাইব্রেরি রুমকে আমরা সংসদ কক্ষ হিসেবে ব্যবহার করব।’ লাইব্রেরির বিকল্প স্থান বিষয়ে তিনি বলেন, হলের উত্তর পাশে বড় একটি রুম আছে, সেটিকে লাইব্রেরি রুম হিসেবে প্রস্তুত করা হবে।

এএফ রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাছলিম উদ্দিন বলেন, ‘হল সংসদ অনেকদিন থেকে পরিত্যক্ত, এগুলো ঠিকঠাক করতে হবে। রুম টাইলস করা আছে তবে প্রতিনিধিরা বসে কার্যক্রম চালানোর জন্য চেয়ারটেবিল লাগবে। আমাদের পরিকল্পনা আছে।’ তিনি আরও যোগ করে বলেন, নতুন যারা নির্বাচিত হবে তারা যাতে বেইজ্জতি না হয় সেটা দেখা আমাদের দায়িত্ব।

শামসুন্নাহার হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. বেগম ইসমত আরা হক বলেন, ‘এখানে আলাদাভাবে হল সংসদের রুম ছিল না। এখন আমরা পরিকল্পনা করছি কোন রুমটা সংসদ করা যায়। মেয়েদের হলে রুম সংকট থাকায় আপাতত টিভি রুম বা কমন রুম ব্যবহার করা হবে। এরপর দেখা যাক কোনো আলাদা রুম ব্যবস্থা করা যায় কিনা।’

বিজয় ২৪ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. জান্নাত আরা পারভীন বলেন, ‘হল সংসদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো রুম নেই, যেহেতু বিগত সময়ে কোনো নির্বাচন হয়নি। তবে আমরা প্রয়োজনে ব্যবস্থা করে নেব।’

প্রস্তুত চাকসু ভবন আর অপ্রস্তুত হল সংসদ এই বৈপরীত্য নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রতিনিধি নির্বাচিত হলেও তারা কোথায় বসবেন, কোথায় কার্যক্রম চালাবেন এটাই এখন বড় প্রশ্ন।

কলা অনুষদের শিক্ষার্থী মো. সাদেক বলেন, চাকসু ভবনটি যেভাবে সংস্কার করা হচ্ছে কিন্তু বিপরীতে হল সংসদগুলো অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল প্রশাসনের উচিত চাকসু নির্বাচনের আগে দ্রুত হল সংসদগুলো সংস্কার করা। যাতে হল সংসদে যারা নির্বাচিত প্রতিনিধি হবেন, তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে বেগ পোহাতে না হয়।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, এই ব্যাপারে প্রভোস্টবৃন্দ উদ্যোগ নিবেন। সংশ্লিষ্ট প্রভোস্টবৃন্দ সংস্কারের প্রয়োজন হলে প্রস্তাবনা দিবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬