সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা সাধারণ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ৩৫ এবং কোটার প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ৩৭ বছর করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেনকে আধা–সরকারি পত্র (ডিও লেটার) দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কর্মকর্তারা চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। খবর বাংলানিউজের।
চিঠিতে বলা হয়, সরকারি/বেসরকারি/আধা সরকারি/রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান/স্বায়ত্তশাসিতসহ বাংলাদেশে বিদ্যমান সকল ধরনের চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছরকে মানদণ্ড হিসেবে অনুসরণ করে। এমতাবস্থায় চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ন্যূনতম ৩৫ বছর করার দাবির বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। সরকার বিষয়টি উপলব্ধি করে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের পাতা নং ৩৩–এর শিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি অনুচ্ছেদে ‘সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মেধা ও দক্ষতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরীখে যুক্তিসংগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।
বর্তমান বাস্তবতার কথা উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশের সকল পর্যায়ে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আজ থেকে ৩৩ বছর আগে ১৯৯১ সালে ২৭ বছর থেকে ৩০ বছরে উন্নীত করা হয়, যখন বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৫৭ বছর। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে ৭৩ বছর বিধায় চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা যৌক্তিক। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড ও বাংলাদেশ : বাংলাদেশ বর্তমানে তার অপ্রতিরোধ্য উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় এ বিশেষ ধাপ অতিক্রম করেছে। এই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের যথাযথ সুফল পাওয়ার জন্য প্রধান শর্ত হচ্ছে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে জনসংখ্যাকে মানবসম্পদে রূপান্তরিত করা। ভারত ও চীনসহ উন্নত বিশ্ব এই স্ট্রাটেজিই অনুসরণ করে সফল হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, কোভিড–১৯ এর কারণে প্রায় আড়াই বছর যাবৎ তেমন কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়নি বা নিয়োগ পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হয়নি। উপরন্তু, লকডাউন উঠিয়ে নেওয়ার পর থেকে প্রতি সপ্তাহান্তে ১০–১৫টি বা ততোধিক পরীক্ষা একই দিনে, একই সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার ফলস্বরূপ পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে অজস্র চাকরি প্রত্যাশী। কোভিড–১৯ এর শুরুতে যাদের বয়স ২৭–২৯ বছর ছিল তাদের বয়স এখন ৩০ বা ততোধিক। ফলে চাকরি প্রার্থীগণ বাস্তবিক অর্থে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ৩০ বছরের পরিবর্তে সাড়ে ২৭ বছর পেয়েছে। উক্ত ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার ৩৯ মাসের ব্যাকডেট ধরে একটি বয়স ছাড় প্রদান করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ব্যাকডেট কার্যকর ছিল ১৩ মাস, বাকি ২৬ মাস তা অকার্যকর অবস্থায় ছিল। তাই স্থায়ীভাবে বয়স বৃদ্ধি অতীব জরুরি।
পত্রে বলা হয়, বিশ্বের প্রায় ১৬২টি দেশে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা কমপক্ষে ৩৫ বছর, তার মধ্যে কিছু দেশে তা উন্মুক্ত। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দেশ হয়েও বিভিন্ন রাজ্যভেদে চাকরিতে আবেদনের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৪৫ বছর, মালদ্বীপে ৪৫ বছর, শ্রীলঙ্কায় ৪৫ বছর, নেপালে ৩৫ বছর, আফগানিস্তানে ৩৫ বছর। ভারতসহ বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলো অনেক গবেষণা করেই চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে ন্যূনতম ৩৫ বছর করেছে। বেকারত্ব দূরী করতে ও মেধাভিত্তিক একটি উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করতে হলে শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক মানের দক্ষ করে গড়ে তোলা এবং সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারে প্রবেশের সুযোগ তৈরি করা দরকার। এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষিত যুবসমাজকে মানবসম্পদ হিসেবে কাজে লাগাতে পারলে সেটি হবে যুগোপযোগী ও যুগান্তকারী একটি সিদ্ধান্ত এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কয়েক ধাপ অগ্রসর হওয়া যাবে। ভারতসহ বিশ্বের সব উন্নত রাষ্ট্র এই নীতি অনুসরণ করে বেকারত্ব কমিয়েছে এবং মেধা রপ্তানি করে রেমিটেন্স বাড়িয়েছে। চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ করে রাখার কারণে দেশে দক্ষ জনবল, গবেষক গড়ে উঠছে না এবং বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীরা আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারে প্রবেশ করতে পারছে না। আমাদের উচিত সফল ও উন্নত বিশ্বকে অনুসরণ করা। পৃথিবীর দ্বিতীয় জনবহুল, এক নাম্বার অর্থনীতি ও উদীয়মান পরাশক্তি রাষ্ট্র চীনেও চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৪০ বছর পর্যন্ত।
‘এমতাবস্থায়, সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও এর অধীন দপ্তর/অধিদপ্তর/পরিদপ্তর এবং সংবিধিবদ্ধ/স্বশাসিত/জাতীয়কৃত প্রতিষ্ঠানসমূহে বিভিন্ন পর্যায়ের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে আবেদনের সর্বোচ্চ বয়সসীমা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুয়ায়ী সর্বনিম্ন ৩৫ বছর (বিজেএস, ডাক্তার, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে ৩৭ বছর), পুলিশের এসআই ও সার্জেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে ৩০ বছর পর্যন্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান; সরকারি নীতি অনুযায়ী গবেষণা ও বিবিধ বিশেষ দক্ষতামূলক ক্ষেত্রে উক্ত বয়সসীমা উন্মুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনাপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।