চাকরি হারালেন রেলের ৮ হাজার অস্থায়ী কর্মী

স্থায়ীকরণের দাবিতে ট্রেন অবরোধ, আটকা পড়েছিল ২৬টি ট্রেন ৫ ঘণ্টা পর পূর্বাঞ্চলের জিএমের আশ্বাসে স্বাভাবিক হয় যোগাযোগ

শুকলাল দাশ | সোমবার , ১৭ জুলাই, ২০২৩ at ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ

তীব্র জনবল ঘাটতি সত্ত্বেও বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রায় ৮ হাজার অস্থায়ী কর্মী জুলাই মাসে চাকরি হারিয়েছেন। রেলওয়েতে বর্তমানে ৪৭ হাজার ৬৩৭ জনবলের অনুমোদন রয়েছে। এর বিপরীতে কর্মরত আছেন প্রায় ২৫ হাজার। বাকি প্রায় ২২ হাজার পদ শূন্য। চলতি বাজেটে (২০২৩২৪ অর্থবছর) অস্থায়ী কর্মীদের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই উল্লেখ করে কর্মী ছাঁটাই শুরু করে রেল কর্তৃপক্ষ। এর প্রতিবাদে গতকাল সকাল ১০টার দিকে রেলের অস্থায়ী শ্রমিকরা তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি ও আউটসোর্সিংয়ের প্রতিবাদে রাজধানীর এফডিসি এলাকায় ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে অস্থায়ী শ্রমিকবৃন্দ’ এর ব্যানারে রেললাইন অবরোধ করেন। শ্রমিকদের অবরোধের কারণে ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সকাল ১০টার পর থেকে প্রায় ৫ নঘণ্টা কোনো ট্রেন ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে প্রবেশ করতে পারেনি এবং সেখান থেকে ছেড়েও যায়নি। এর প্রভাব পড়ে চট্টগ্রামেও। ঢাকাচট্টগ্রামসহ সারাদেশে ২৬টি ট্রেন আটকে ছিল বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের জিএম জাহাঙ্গীর হোসেন। অস্থায়ী কর্মচারীদের অভিযোগ আইন অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্নভাবে তিন বছর অস্থায়ী পদে কর্মরতদের রাজস্ব খাতে স্থায়ীকরণের নিয়ম রয়েছে। অস্থায়ী বা টেম্পোরারি লেবার রিক্রুটমেন্ট (টিএলআর) কর্মচারীদের কেউ কেউ ১০ বছরও রেলে কাজ করছেন। তাদের বেশিরভাগের নতুন করে চাকরিতে আবেদনের বয়স নেই।

রেলওয়ের তথ্যমতে, প্রায় ৮ হাজারের বেশি অস্থায়ী কর্মী গেইটকিপার, পিম্যান, ওয়েম্যান, খালাসীসহ বিভিন্ন পদে কাজ করছেন দীর্ঘদিন। দৈনিক ভিত্তিতে তাদের মজুরি ৫০০৫৭৫ টাকা পর্যন্ত। রেলের জনবল সংকট দীর্ঘদিনের। জনবল সংকটে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদগুলো টেম্পোরারি লেবার রিক্রুটমেন্টটিএলআর (কাজ নেই, মজুরি নেই) ভিত্তিতে অস্থায়ী নিয়োগ দিয়ে চলছে।

২০২০ সালে প্রণীত রেলের নিয়োগবিধিতে অস্থায়ী নিয়োগের ক্ষেত্রে আউটসোর্সিংয়ের (চুক্তিভিত্তিক) পরিকল্পনা করা হয়। গত বছর এ লক্ষ্যে হিসাব শাখা থেকেও টিএলআর কর্মচারী ছাটাই করে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে নিয়োগ শুরু করা হয়। আউটসোর্সিং পদ্ধতি অর্থাৎ ঠিকাদারের মাধ্যমে শ্রমিকদের কাজে নিয়োজিত করা হবে। যেন পরবর্তীতে তারা স্থায়ী নিয়োগের দাবি তুলতে না পারেন।

গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন আন্দোলনরত রেল শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তেজগাঁওয়ের এডিসি হাফিজ আল ফারুকও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে শ্রমিকদের দাবি বিবেচনার আশ্বাস দেন তিনি। সেই আশ্বাসের পর পরই শ্রমিকেরা অবরোধ তুলে নেন। বেলা ২টা ৪৫ মিনিটের দিকে রেল চলাচল শুরু হয়।

রেলশ্রমিকরা বলছেন, নিয়োগ পাওয়া অস্থায়ী শ্রমিকদের (টিএলআর) চাকরি ফেরত দেওয়া, স্থায়ীকরণ, আউটসোর্সিং প্রথা বাতিল করা এবং নিয়োগবিধি ২০২০ সংশোধন করে আগের মতো চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অষ্টম শ্রেণি পাস বহাল রাখার দাবিতে ট্রেন আটকে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।

শ্রমিকদের আশ্বস্ত করতে গিয়ে জিএম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল জুনের পর আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ার। সেই আউটসোর্সিং কোম্পানির জন্য টেন্ডার ডকুমেন্টে আমরা শর্ত দিয়ে দিয়েছি অভিজ্ঞ লোক চাই। আপনারা যারা এখানে আন্দোলন করছেন তাদের অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট দেব। একইসঙ্গে আমরা আউটসোর্সিং কোম্পানিকে বলব যেন আপনাদের তারা নিয়োগ দেয়। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আমরা আপনাদের রেলওয়েতে নিয়োগ দেব, এটা আমাদের ইচ্ছা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা ট্রেন আটকে মানুষকে হয়রানি করছেন সেখান থেকে সরে আসবেন বলে আশা করব। আমরা আইনের ভেতর থেকে আপনাদের সর্বোত্তম সহযোগিতা করব।’

এই ব্যাপারে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের জিএম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমরা শ্রমিকদের কথা শুনলাম। তাদেরকে আইন মানতে বললাম। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তাদের সাথে বসে আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলেছি। আইনের মধ্যেদিয়ে যেটা করা যায় সেটা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছি। অবরোধের কারণে ২৬ টি ট্রেন আটকে ছিল।

জানা গেছে সুবর্ণ, চট্টলাসহ বেশ কয়েকটি ট্রেন চট্টগ্রামে নির্দিষ্ট সময়ে আসতে পারেনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদোহাজারী পৌরসভার প্রথম নির্বাচন আজ
পরবর্তী নিবন্ধনৌবাহিনীর নতুন প্রধান নাজমুল হাসান