চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে (চসিক) নিয়োগ দেওয়া ১১ জন সহকারী প্রকৌশলীর মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল শিট ও মেধা তালিকার হদিস মিলছে না। নিয়োগ না পাওয়া এক প্রার্থী ‘বৈষম্যের স্বীকার’ দাবি করার পর ফলাফল সংশ্লিষ্ট নথির (ফলাফল ও মেধা তালিকা) খোঁজ করেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। কিন্তু সচিবালয় শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মচারী এসব নথি দিতে পারেননি। এমনকি পরীক্ষা সংক্রান্ত ফাইলেও সংরক্ষিত নেই মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল ও মেধা তালিকা। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় সংস্থাটিতে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা সেটা নিয়েও গুঞ্জন শুরু হয়। এ অবস্থায় চসিকের তৎকালীন সচিব (বর্তমানে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর পরিচালক) খালেদ মাহমুদকে তলব করা হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে উপস্থিত হয়ে তাকে মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল শিট না থাকার বিষয়টি স্পষ্ট করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
খালেদ মাহমুদকে তলব করার বিষয়টি নিশ্চিত করে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, একজন পরীক্ষার্থী নিয়োগের বিষয়টি পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে উনাকে আসতে বলেছি। চসিক সূত্রে জানা গেছে, সহকারী প্রকৌশলী নিয়োগের জন্য ২০২২ সালের ২ সেপ্টেম্বর লিখিত পরীক্ষা এবং ১৭ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ১১ জন প্রকৌশলীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে সিভিলে পুরকৌশলে ৫ জন, যান্ত্রিকে ৩ জন এবং বিদ্যুৎ শাখায় নিয়োগ দেওয়া ৩ জন প্রকৌশলী।
এদিকে গত ৮ আগস্ট অনুপম আজিম দৃষ্টি নামে বিদ্যুৎ বিভাগের এক সহকারী প্রকৌশলী প্রার্থী নিয়োগ পরীক্ষার সকল পরীক্ষার্থীর ফল পুনঃনিরীক্ষণ করার দাবি করেন। তার দাবি, তিনি লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। পরীক্ষাও আশানুরূপ ভালো হয়েছে। তাই তিনি নিয়োগ পাওয়া নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন।
লিখিত অভিযোগে অনুপম বলেন, ‘যাচাই কমিটির সুপারিশের আলোকে প্রদত্ত নিয়োগে আমাকে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত করা হযেছে। মেধাক্রম বিবেচনা না করে আমার চেয়ে কম মেধাসম্পন্ন পরীক্ষার্থীকে নিয়োগ প্রদান করা হয়। প্রদত্ত নিয়োগে আমি কোটা বৈষম্যের শিকার হয়েছি। প্রকৃতভাবে মেধা অনুসরণ করে নিয়োগ প্রদান হলে আমি নিয়োগপ্রাপ্ত হতাম বলে দৃঢ় বিশ্বাস।’
এদিকে নিয়োগ নিয়ে এ প্রার্থী প্রশ্ন তোলার পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ও বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য নির্দেশনা দেয় চসিকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে। তাই ফল পুনঃনিরীক্ষণের উদ্যোগ নেন প্রধান নির্বাহী। এর অংশ হিসেবে পরীক্ষার যাবতীয় তথ্যের তালাশ করেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চসিকের সচিবালয় শাখার এক কর্মচারী আজাদীকে বলেন, তৎকালীন সচিব খালেদ মাহমুদ ওই নিয়োগের ফলাফল ও মেধা তালিকার নথি সংশ্লিষ্ট শাখায় বুঝিয়ে দেননি। প্রধান নির্বাহীর নির্দেশনার পর মেয়র দপ্তরে অনেক খোঁজ করে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া যায় যায়নি।
এ বিষয়ে খালেদ মাহমুদকে তলব করে যে অফিস আদেশ করা হয় সেখানে উল্লেখ করা হয়, চসিকের সাংগঠনিক কাঠামোভুক্ত সহকারী প্রকৌশলী পদে লিখিত পরীক্ষা এবং মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনবল নিয়োগ করা হয়। এ বিষয়ে পুনঃনিরীক্ষণের জন্য সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) পদের একজন পরীক্ষার্থী মেয়র বরাবরে আবেদন করেন। এ বিষয়ে সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের অফিস হতেও চসিকের কার্যক্রম জানতে চাওয়া হয়েছে। পরীক্ষার মার্কশিট এবং মেধা তালিকা বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জিজ্ঞেস করলে তারা ওই পদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল তাদের দেওয়া হয়নি বলে জানায়।
ওই অফিস আদেশে বলা হয়, দাপ্তরিক প্রধান হিসেবে কাগজপত্র সংরক্ষণ করা তার (খালেদ মাহমুদ) কার্যপরিধিভুক্ত বিষয়। নিয়োগ কার্যক্রম সম্পাদন করলে মেধা তালিকা নথিতে থাকা আবশ্যিক হলেও নথিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানার জন্য চসিকের সাবেক সচিব খালেদ মাহমুদকে কল দিলেও রিসিভ করেননি।