চসিকের নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি

বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার ।। প্রকৌশলী চেয়ে চুয়েট ও সওজকে চিঠি চালু হয়নি যান চলাচল

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৯ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:২৪ পূর্বাহ্ণ

নগরের বহদ্দারহাট এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের কালুরঘাটমুখী আরকান সড়কের সাথে সংযুক্ত র‌্যাম্পে গতকালও বন্ধ রাখা হয় যান চলাচল। র‌্যাম্পটির দুটি পিলারে ‘ফাটল’ দেখা গেছে এমন তথ্য প্রচার হওয়ার পর গত সোমবার দিবাগত রাত ১১টায় সিএমপির সহযোগিতায় যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এই ‘ফাটল’ সৃষ্টির কারণ উদঘাটন ও প্রতিকার নির্ণয়ে গতকাল সংস্থাটি দুই সদস্যের একটি ‘নিরপেক্ষ’ তদন্ত কমিটি গঠন করে। এদিকে গঠিত কমিটিতে প্রতিনিধি হিসেবে একজন অভিজ্ঞ অধ্যাপক প্রেরণের অনুরোধ জানিয়ে গতকাল চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) উপাচার্য এবং একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রেরণের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীকে চিঠি দিয়েছে চসিক। এতে স্বাক্ষর করেন চসিকের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ শহীদুল আলম। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, চুয়েটের অভিজ্ঞ অধ্যাপকই হবেন কমিটির আহ্বায়ক।
মোহাম্মদ শহীদুল আলম বলেন, বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের হক মার্কেট সংলগ্ন দুটি পিলারে সৃষ্ট ফাটলের কারণে জনগণের মধ্যে আতংক সৃষ্টিসহ যানবাচন চলাচল বন্ধ রয়েছে। দুর্ঘটনা সৃষ্টির পূর্বে ফাটল সৃষ্টির কারণ উদঘাটন ও প্রতিকারের বিষয়ে চুয়েটের একজন অভিজ্ঞ অধ্যাপক এবং সওজের একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর সমন্বয়ে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনে মেয়র নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার সকালে ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান সিডিএ দাবি করে, র‌্যাম্পটি নির্মাণ করা হয়েছিল হালকা যানবাহন চলাচলের জন্য। কিন্তু ভারী যানবাহন চলাচল করার কারণে ফাটল দেখা দেয়। আবার একইদিন বিকেলে দাবি করে, এটা ফাটল নয়। এটা ঢালাইকালীন চার্টারে ব্যবহৃত ফোম সরে যাওয়ার দাগ।
সর্বশেষ গত বুধবার র‌্যাম্পটির নকশা প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান ডিজাইন প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (ডিপিএম) কনসালটেন্টস লিমিটেডের বিশেষজ্ঞ দল পরিদর্শন শেষে দাবি করে, ফাটল নাই। তারা হালকা যান চলাচলের জন্য র‌্যাম্পটি খুলে দেয়া যেতে পারে বলে জানায়। অবশ্য প্রথম দিন থেকেই নির্মাণ অথবা ডিজাইনের ত্রুটির কারণে ফাটল হতে পারে বলে দাবি করে আসছিল চসিক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চসিকের এক প্রকৌশলী বলেন, সিডিএ ভিন্ন ভিন্ন কথা বলায় নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। নিরপেক্ষতার স্বার্থে চসিক বা সিডিএর কাউকে কমিটিতে রাখা হচ্ছে না। তাছাড়া নকশা প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান ডিপিএম এটাও জানিয়েছে, এখানে ক্যান্টিলিভারের (মূল কাঠামোর সাথে সংযোগ করা অংশ) মাথায় ১০০ মি.মি. দেবে গেছে। যেহেতু ব্রিজে ক্র্যাক বা দেবে যাওয়ার বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে তাই অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার জন্য কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নেয়া যায়। গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ফ্লাইওভারটি বিদ্যামান তাই চূড়ান্ত পরীক্ষা না করে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না।
এদিকে গতকাল বিকেলে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, র‌্যাম্পের প্রবেশ পথে হাইট ব্যারিয়ার (ভারী যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা) নির্মাণে কাজ করছে চসিকের লোকজন। গত রাতে এটার নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা। র‌্যাম্প দিয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকায় বহাদ্দারহাট মোড়ে গাড়ির চাপ ছিল বেশি। ফলে সেখানে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।
কবে নাগাদ যান চলাচলের জন্য র‌্যাম্পটি খুলে দেয়া হবে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম মানিক দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের কমিটির রিপোর্ট পেতে হয়তো সময় লাগবে। তাই এর আগে সিডিএর সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিব। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, হালকা যান চলাচল করলে কোনো সমস্যা হবে না।
প্রসঙ্গত, ১০৬ কোটি টাকায় নির্মিত এম এ মান্নান ফ্লাইওভারটি উদ্বোধন করা হয়েছিল ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর। তখন র‌্যাম্পটি ছিল না। পরে ২০১৬ সালে কালুরঘাটমুখী র‌্যাম্পটি যুক্ত করার উদ্যোগ নেয় সিডিএ। নির্মাণ শেষে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে সেটি চালু হয়। ২০১৯ সালে ফ্লাইওভারটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চসিককে হস্তান্তর করে সিডিএ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১ নভেম্বর থেকে কিশোর শিক্ষার্থীদের টিকাদান
পরবর্তী নিবন্ধভারতের সঙ্গে চালু হচ্ছে আরও তিন রেল সংযোগ