চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) নতুন ল্যান্ডফিল বা বর্জ্যাগার হচ্ছে দক্ষিণ পাহাড়লীতে। সংস্থাটির বিদ্যমান দুটি ল্যান্ডফিল (বর্জ্যাগার) ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ায় শঙ্কা তৈরি হয় নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে। তাই নিজস্ব অর্থায়নে ভূমি কিনে ল্যান্ডফিল স্থাপনের উদ্যোগ নেয় চসিক। তবে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না পাওয়ায় সে উদ্যোগ থমকে ছিল। অবশেষে সে বাধা দূর হয়েছে। ল্যান্ডফিল স্থাপনে ৫০ একর ভূমি ক্রয়ে অনুমোদন দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। অনুমোদন পেয়েই দক্ষিণ পাহাড়তলীতে সে ভূমি ক্রয়ে প্রক্রিয়া শুরু করেছে চসিক।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, দক্ষিণ পাহাড়তলীতে ল্যান্ডফিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেখানে ল্যান্ডফিল হলে পরিবেশের জন্যও ভালো হবে। ওখানে বসতিও তেমন নাই। বর্তমানে আমাদের হালিশহর ও আরেফিন নগরে যে দুটি ল্যান্ডফিল আছে সেগুলোর অবস্থা বেশি খারাপ। হালিশহর যেটা আছে সেখানে ময়লা ফেলারও জায়গা নেই। তাই ল্যান্ডফিল নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম। এখন ভূমি কেনার জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেয়ে ক্রয় প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এর অংশ হিসেবে এসিল্যান্ড ও সার্ভেয়ারসহ সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে জায়গাটা পর্যালোচনা করে দেখছি। অবশ্য আগেও সার্ভেয়ার দিয়ে দেখেছিলাম।
চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম দৈনিক আজাদীকে বলেন, প্রথম দফায় ২৩ একর ভূমি কেনা হবে। এরপর বাকি ভূমি কেনা হবে। ভূমি কেনা হয়ে গেলে ল্যান্ডফিল স্থাপনে খুব বেশি সময় লাগবে না। অনুমোদন প্রক্রিয়া : চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটির বিদ্যমান ল্যান্ডফিল দুটি’র মধ্যে হালিশহরের আনন্দবাজার ল্যান্ডফিলটি গড়ে উঠেছে ৯ একর ভূমির উপর। এ ল্যান্ডফিলে নগরের ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে ২২ থেকে ২৩টি ওয়ার্ড থেকে সংগৃহীত বর্জ্য ফেলা হয়। এছাড়া ১১ একর জায়গার উপর গড়ে উঠা বায়েজিদ আরেফিন নগরের ল্যান্ডফিলে ১৮ থেকে ১৯টি ওয়ার্ড থেকে সংগৃহীত বর্জ্য ফেলা হয়। এ ল্যান্ডফিল দুটো প্রায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাই ২০২২ সালের ১৩ অক্টোবর নতুন ল্যান্ডফিল স্থাপনের লক্ষ্যে দক্ষিণ পাহাড়তলী তফশীলের ৫০ একর জমি ক্রয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে জানিয়ে এ ভূমি ক্রয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চেয়ে পত্র দেয় চসিক।
জানা গছে, চসিকের পত্র পাওয়ার প্রায় এক মাস পর ৮ নভেম্বর মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন তথ্য চাওয়া হয় চসিকের কাছে। গত ১ মার্চ চসিক তথ্যগুলো সরবরাহ করে। সর্বশেষ গত ১৯ মার্চ চারটি শর্ত দিয়ে ৫০ একর ভূমি ক্রয়ে প্রশাসনিক অনুমোদন দেয় মন্ত্রণালয়। শর্তগুলো হচ্ছে– জমির মালিকানা হবে নিস্কন্টক এবং কোনো প্রকার আইনি জটিলতা থাকলে তার দায় কর্পোরেশনের। ক্রয়মূল্য বিদ্যমান মৌজামূল্য ও বাজার দরের মধ্যে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। ল্যান্ডফিল স্থাপনের নূন্যতম পরিমাণ জমি কিনতে হবে এবং সকল প্রকার আর্থিক বিধি বিধান যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। এর আগে মন্ত্রণালয়ে সরবরাহকৃত চসিকের তথ্য পর্যালোচনা করে জানা গেছে, প্রস্তাবিত ভূমি ক্রয়ের আনুমানিক মূল্য ৫০ কোটি টাকা। এখানে প্রতি শতক জমির গড় মূল্য ধরা হয় এক লাখ টাকা। হাটহাজারী ও ফতেয়াবাদ সাব–রেজিস্ট্রার কার্যালয় হতে সংগৃহীত মৌজাসমূহের মূল্য তালিকা অনুযায়ী পাহাড় বা টিলা শ্রেণির মৌজামূল্য প্রতি শতক ২ লাখ ৫৭৭ টাকা এবং ছনখোলা শ্রেণির মৌজামূল্য প্রতি শতক সাড়ে ৪৯ হাজার টাকা বলে মন্ত্রণালয়কে জানায় চসিক।
ল্যান্ডফিলের প্রয়োজনীয়তা : জানা গেছে, চসিক প্রতিষ্ঠার পর শুরুতে শহরে নিচু এলাকা নাসিরাবাদে ল্যান্ডফিল গড়ে তোলা হয়। এলাকাটি ভরাট হয়ে গেলে এর ওপর গড়ে তোলা হয় সুগন্ধা আবাসিক এলাকা। পরে নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার রউফাবাদ এলাকায় ফেলা হতো আবর্জনা। সেটাও বর্জ্যে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এরপর শুরু হয় আরেফিন নগরে বর্জ্য ফেলা। আরেফিন নগরের জায়গাটি চসিক কবরস্থান করার নামে ক্রয় করেছিল। তাই সেখানে ময়লা ফেলায় বিভিন্ন মহল সমালোচনাও করে চসিকের। হালিশহর থাকা চসিকের আরেকটি ল্যান্ডফিলও বর্জ্যে পূর্ণ হয়ে গেছে।
গত অক্টোবর মাসে মন্ত্রণালয়ে লেখা চসিকের একটি পত্রে বলা হয়, কর্পোরেশনের বিদ্যমান হালিশহর ও আরেফিন নগরের ল্যান্ডফিল দুইটির বর্জ্য ধারণ ক্ষমতা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল এবং তা সর্বোচ্চ আগামী ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যেতে পারে। এজন্য নতুনভাবে ল্যান্ডফিল স্থাপনের পাশাপাশি বর্জ্য নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সুযোগ সৃষ্টি করা জরুরি।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত চসিকের আরেকটি চিঠিতে বলা হয়, কর্পোরেশনের বিশাল কর্মযজ্ঞের মধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। চট্টগ্রাম মহানগরীর জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে পারিবারিক, শিল্প, বাণিজ্যিক ও স্ট্রিট বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণ দিন দিন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে মোট বর্জ্যের পরিমাণ প্রতিবছর বেড়েই চলছে। বর্জ্য উৎপাদন যে হারে বাড়ছে সে হারে বর্জ্যের সুষ্ঠু বিন্যাস তথা ব্যবস্থাপনা সম্ভব হচ্ছে না।
জাইকার বর্জ্য বিষয়ক একটি প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, নগরের ৪১ ওয়ার্ডে দৈনিক ৩ হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ৮৩০ টন গৃহস্থালি, ৫১০ টন সড়ক ও অবকাঠামোগত এবং ৬৬০ টন মেডিকেল বর্জ্য। উৎপাদিত বর্জ্যের মধ্যে কর্পোরেশন সংগ্রহ করে দুই হাজার টন। বাকি বর্জ্য নালা–নর্দমা, খাল–বিল, নদী ও উন্মুক্ত স্থানে পড়ে থাকে।