চসিক স্বাস্থ্য বিভাগে গতি আসুক নিশ্চিত হোক মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা

| রবিবার , ১৭ আগস্ট, ২০২৫ at ৬:৫০ পূর্বাহ্ণ

সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন জনবল বৃদ্ধি, স্থাপনা সংস্কার, নতুন যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগকে ঢেলে সাজাতে চান। চট্টগ্রামবাসীর মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন বলে আজাদীতে ১৫ আগস্ট প্রকাশিত খবরে জানা যায়। এতে বলা হয়, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাকর্মচারীদের কাছে সিটি মেয়র চসিক স্বাস্থ্য বিভাগের মানোন্নয়নে করণীয় জানতে চাইলে সভায় চিকিৎসকরা বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন। তাঁরা জানান, সিটি কর্পোরেশন বন্দরটিলা মাতৃসদন হাসপাতাল, ছাফা মোতালেব মাতৃসদন হাসপাতাল ও মোস্তফা হাকিম মাতৃসদন হাসপাতালে লিফটের অভাবে রোগী, বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের মারাত্মক কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া চসিকের অনেক হাসপাতালে কনসালটেন্ট সংকট, কর্মী সংকট, লজিস্টিক ঘাটতি, যন্ত্রপাতির অভাব, অ্যাম্বুলেন্স সংকট ও পুরাতন ভবনের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিও তারা উল্লেখ করেন।

জবাবে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, ‘চট্টগ্রামের প্রতিটি নাগরিকের জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাই আমার মূল লক্ষ্য। এজন্য হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, পর্যাপ্ত জনবল ও উন্নত অবকাঠামো নিশ্চিত করা হবে। চিকিৎসকদের যেসব সমস্যা আছে, সেগুলো সমাধানে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নেব। বিশেষ করে যেখানে কনসালটেন্ট ও ডাক্তার সংকট রয়েছে, সেখানে প্রয়োজন ভেদে নতুন ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হবে। হাসপাতালের পুরাতন ভবনগুলো সংস্কার এবং লিফট, অ্যাম্বুুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সুবিধা যুক্ত করা হবে। আমি চাই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত হাসপাতালগুলো যেন রোগীর আস্থা অর্জন করতে পারে এবং এখানে এসে কেউ যেন চিকিৎসা বঞ্চিত না হয়।’ মেয়র আরও বলেন, ‘চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। অথচ, এ বিভাগটিকে সুন্দরভাবে গড়লে এটি চসিকের জন্য একদিকে আয়বর্ধক হবে অন্যদিকে নগরবাসীর জন্য স্বল্প ব্যয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং লোকবল দিয়ে চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগকে ঢেলে সাজানো হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বহুদিন ধরেই নানা সমস্যা ও অদক্ষতায় ভুগছে, যেখানে লাখ লাখ মানুষ পর্যাপ্ত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত। জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত সরকারি হাসপাতালগুলো জনাকীর্ণ, অপ্রতুল অর্থায়নপ্রাপ্ত এবং প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি ও মানবিক সংবেদনশীলতার অভাবে জর্জরিত। এসব প্রতিষ্ঠানে অবহেলা, রোগীদের প্রতি অমানবিক আচরণের মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটে যা জনগণের আস্থার অভাব সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত যদিও তুলনামূলকভাবে উন্নত। কিন্তু এটি অধিক বাণিজ্যিকীকরণ দ্বারা প্রভাবিত। এখানে ব্যয়বহুল চিকিৎসাসেবা হওয়ায় তা বেশির ভাগ মানুষের নাগালের বাইরে। অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা, অতিরিক্ত বিল ও মুনাফাকেন্দ্রিক চিকিৎসার অভিযোগও প্রায়ই শোনা যায়, যা দেশীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার প্রতি আরো অবিশ্বাস তৈরি করেছে। ফলে অনেকেই চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়াকে একমাত্র উপায় মনে করেন। ভারত, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলো বাংলাদেশীদের কাছে উন্নত মানের চিকিৎসাসেবা পাওয়ার জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে। উন্নত চিকিৎসা প্রযুক্তি, নির্ভরযোগ্য ডায়াগনস্টিক সুবিধা এবং সেবায় পেশাদারত্বএসব কারণ মানুষকে বিদেশমুখী করছে। উদাহরণস্বরূপ ভারতে হার্ট অপারেশন ব্যয় প্রায় ৫ হাজার ডলার, যা পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় স্বল্প খরচে উন্নত মানের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করে। ২০২২ সালে প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশী চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলেন। এতে প্রায় চিকিৎসা বাবদ ২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছেন। এ স্বাস্থ্য পর্যটনের প্রবণতা শুধু বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের দুর্বলতাকেই প্রতিফলিত করে না, বরং এটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও বড় প্রভাব ফেলে।

সেহিসেবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগকে ঢেলে সাজানোর অভিপ্রায়কে আমরা অভিনন্দিত করতে চাই। সিটি মেয়র যেহেতু নিজে চিকিৎসক, সেহেতু স্বাস্থ্যসেবায় বাড়তি সুবিধা পাবে নগরবাসী। তাছড়া স্বাস্থ্যখাতকে উর্বর ও সমৃদ্ধ করার প্রয়াস ফলপ্রসূ হলে এ জনপদের বাসন্দিরাই উপকৃত হবেন। স্বাস্থ্যখাত সংস্কার করা হলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের হারানো ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করি। আমরা চাই দ্রুত এ কাজ সম্পন্ন হবে এবং জনগণের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার বাস্তবায়ন হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে