বর্তমান সরকারের সুদক্ষ পরিচালনায় বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন করেছে, যার মূলে অন্যতম ভূমিকা রেখেছে স্বাস্থ্য খাতে আমাদের অর্জনগুলো। এ সরকারের আমলেই স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে গতিশীল করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ নামে দুটি নতুন বিভাগ সৃষ্টি করা হয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা সেবা ও মাঠ পর্যায়ে মা ও শিশুস্বাস্থ্য রক্ষায় প্রাথমিক সেবা প্রদানে বাংলাদেশ প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছে বিগত এক দশকে। শিশুমৃত্যু উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় চার বছর আগে ২০১০ সালে সরকার সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-৪-এর স্বাস্থ্যসংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তাপ্রসূত কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প বর্তমান সরকারের আমলে পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় নতুন নতুন বিশেষায়িত ও জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। দুর্নীতি ও নানা রকম অনিয়মের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও বলা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাস্থ্য সেবায় অনেক উন্নতি হয়েছে। যতগুলো পুরস্কার এই দেশ পেয়েছে, এর অধিকাংশই এসেছে স্বাস্থ্য সেবার মাধ্যমে।
এ অবস্থায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালিত ৫৩টি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নানা সংকটের সংবাদ আমাদের আশাহত করে। এই কেন্দ্রগুলোর সাম্প্রতিক হালহকিকত জানা গেছে দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত একটি খবরে। বর্ণনা করা হয়েছে অবকাঠামোগত নানা সমস্যার কথা। ‘স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোরই চিকিৎসা প্রয়োজন, মাতৃসদনসহ চসিকের ৫৩টি কেন্দ্রে নানা সমস্যা’ শীর্ষক গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চসিক পরিচালিত ৫৩টি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রয়েছে অবকাঠামোগত নানা সমস্যা। এর মধ্যে বেশিরভাগ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। টয়লেটের অবস্থাও বেহাল। কোনোটিতে আছে পানির সমস্যা এবং কোনোটিতে আছে বিদ্যুতের সমস্যা। চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকট তো আছেই। অবস্থা দেখে মনে হবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোরই ‘চিকিৎসা’ প্রয়োজন।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যা থাকলেও আর্থিক সংকট থাকায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে চসিকের পদস্থরা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো পরিচালনায় প্রতি বছর ৩০ কোটি টাকা খরচ হয়। অথচ এ খাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কোনো অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায় না। এদিকে দিন দিন রোগীর চাপ বাড়ছে। বিপরীতে সংকট তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামেরও।
এক সময় সিটি করপোরেশনের দুটি খাতে খুব সুনাম ছিল। একটা হলো শিক্ষা, অন্যটা স্বাস্থ্য। দুটোর এখন অবস্থা অবনতির দিকে বলে অনেকে অভিযোগ করেন। সিটি কর্পোরেশনের মাতৃসদন হাসপাতালগুলো ব্যাপক আস্থা অর্জন করেছিল। প্রসূতি মায়েদের সেবা প্রদানে হাসপাতালগুলোর সেবা কার্যক্রম ছিল উল্লেখ করার মতো। নগরবাসী আস্থা রেখেছিল এতে। চিকিৎসা ব্যবস্থার দক্ষতা ও সক্ষমতা সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল। তৎকালীন মেয়র এই সেবামূলক খাতকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখা যায় নি। অবহেলা ও গুরুত্বহীনতার কারণে সে সুনাম আর ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। সেই সুনাম আবার ফিরিয়ে আনার জন্য সিটি করপোরেশনকে দায়িত্ব নিতে হবে। সেবামূলক স্বাস্থ্যখাতকে এমনভাবে সাজানো কিংবা তুলে ধরা উচিত যাতে নগরবাসী আস্থা পায়, যাতে জনগণ সেবা পায়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেশের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে একসময় বলেছিলেন, ‘আমরা ঢেলে সাজিয়ে সবকিছু করতে চাচ্ছি, এই কথাটা শুনি। কী ঢালবেন? ঢালার জন্য বস্তুটা আনবেন কোথা থেকে? সব তো দেশের লোক। দেশের লোক দিয়েই কাজ করতে হবে। আমরা যদি আরও যোগ্য লোক বসাতে পারি, সঠিক নিয়ম, সিস্টেমটা যদি আমরা পালন করি, অপরের জন্য নয় নিজের জন্য, তা হলে ইনশাআল্লাহ উন্নয়ন অবশ্যই হবে।’
এটা ঠিক যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নানা সমস্যায় জর্জরিত। আর্থিক সংকটের কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধান সম্ভব হচ্ছে না। যোগ্য লোকের অভাব, সদিচ্ছার অভাব ও টাকার অভাব মিলে একসঙ্গে সিটি করপোরেশনকে গ্রাস করছে। ৫৩টি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মূলেও আর্থিক সমস্যা আছে, যা চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন স্বীকার করেছেন। তিনি মাতৃসদন ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও ক্লিনিক্যাল যন্ত্রপাতি সংগ্রহে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চেয়েছেন। আমরা আশা করি, নগরবাসীর সার্বিক কল্যাণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সহযোগিতা প্রদানে এগিয়ে আসবে।