সমপ্রতি শেষ হওয়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল বাতিল এবং নতুন করে ভোট গ্রহণের দাবিতে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন নগর বিএনপির সভাপতি ও মেয়র পদে পরাজিত প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। গতকাল বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক খায়রুল আমিনের আদালতে স্থানীয় সরকার আইন ২০০৯ ও নির্বাচন বিধিমালা ২০১০ এর ৫৩ এর ২ উপধারা মোতাবেক তিনি মামলাটি দায়ের করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডা. শাহাদাতের আইনজীবী মো. এরশাদ হোসাইন আসাদ। তিনি বলেন, মামলা দায়ের পরবর্তী আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী ২১ মার্চ শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করেছেন। ওইদিন বিবাদীদের প্রতি সমন জারির বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। মামলায় ডা. শাহাদাতের পক্ষে মো. এরশাদ হোসাইন আসাদ ছাড়াও আইনজীবী হিসেবে ছিলেন দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী।
মামলায় নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও নির্বাচিত মেয়র রেজাউল করিমসহ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা, নির্বাচন কমিশন সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচনে অংশ নেওয়া অপরাপর পাঁচ মেয়র প্রার্থীকে (আবুল মনজুর, এমএ মতিন, খোকন চৌধুরী, মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ, মো. জান্নাতুল ইসলাম) বিবাদী করা হয়েছে। মামলার এজহারে তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচন পরবর্তী ফলাফল সংক্রান্ত প্রকাশিত গেজেট বেআইনি, অবৈধ ও ন্যায় নীতির পরিপন্থী। নির্বাচনে নির্বাচিত প্রার্থী আচরণবিধি ২০১৬ এর ৩, ৭, ৮, ১১, ১২, ১৩, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ২১ ও ২৭ ধারা পুরোপুরিভাবে লঙ্ঘন করেছেন।
এছাড়া নির্বাচন থেকে যাবতীয় সুযোগ ও অধিকার পাওয়া সমীচীন থাকলেও তা পাননি বলে এজহারে উল্লেখ করেন ডা. শাহাদাত হোসেন। মামলার এজহারে তিনি বলেন, ২ থেকে ৪ নম্বর বিবাধী (চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা, নির্বাচন কমিশন সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার) নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টির কোনো প্রকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। যেটি নির্বাচনী বিধিমালা পরিপন্থী।
আইনজীবী মো. এরশাদ হোসাইন আসাদ বলেন, নির্বাচন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছুই বেআইনিভাবে হয়েছে। সে অর্থে ফলাফল সংক্রান্ত গেজেটও বোইনি ও অবৈধ। তাই আমরা আদালতে মামলা করেছি। আদালতও মামলাটি আমলে নিয়েছেন। আশা করি আদালত গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। মামলা দায়ের শেষে আদালত প্রাঙ্গণে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, চসিক নির্বাচনে মোট ৪৮৮৫টি বুথে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হলেও মাত্র ২০টি কেন্দ্রে মেশিনে প্রিন্টেড ফলাফল দিয়েছে। বাকি কেন্দ্রগুলোর ৪৬৬৫টি বুথে হাতে লেখা ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে সবগুলো কেন্দ্রের প্রিন্টেড ফলাফলের লিখিত আবেদন জানালেও তারা তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ২২টি কেন্দ্রে আমাকে শূন্য ভোট এবং ১৭৮টি কেন্দ্রে ১০টির কম ভোট দেখিয়েছে যা সম্পূর্ণ অবাস্তব ও ভোট জালিয়াতি জ্বলন্ত নমুনা। এসবের প্রতিকার চেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছি। এছাড়া নির্বাচনের পর প্রথমে আমাদের যে ফলাফলের তালিকা দিয়েছিল তাতে আমার শূন্য ভোট ছিল মাত্র দুই কেন্দ্রে, কিন্তু ফাইনাল তালিকায় শূন্য ভোট দেখানো হয়েছে ২২টি কেন্দ্রে। এর কারণ কি? এর থেকে তো বুঝতে হবে তারা ভোট ডাকাতি করলেও সেটা সুক্ষ্মভাবে করতে জানেনি।
তিনি বলেন, চসিক নির্বাচনে ভোটের দিন দুপুর ২টা পর্যন্ত ৪-৬ শতাংশ ভোট পড়েছে। কিন্তু দিন শেষে সাড়ে ২২ শতাংশ ভোট দেখানো হয়েছে। নির্বাচনের দিন প্রতি ঘণ্টার ভোটের হিসাব দেখতে চেয়েছিলাম। ৭ দিন সময়ও দিয়েছি। কিন্তু এই তথ্য কমিশন দিতে পারেনি। নির্বাচনে ৪ হাজার ৮৮৫টি ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে। সেখানে মাত্র ১০টি বুথে ইভিএমের প্রিন্টেড কপি দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ আর গুলিতে দুইজনের প্রাণহানির মধ্য দিয়ে গত ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। তাতে বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেনকে প্রায় তিন লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের এম রেজাউল করিম চৌধুরী।