তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনসহ বিভিন্ন উপনির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু নির্বাচনের মাঠে ছিল না। একইভাবে চট্টগ্রামের নির্বাচনেও মাঠে ছিল না। কিন্তু বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও রিজভী আহমেদর সংবাদ সম্মেলনে যেসব কথা বলেছেন, হেরে যাবার পর মুখ রক্ষার জন্য এসব কথা তারা বলছেন। নির্বাচনে হেরে গেলে বিএনপির অভ্যাসটা হচ্ছে সেরকম, ‘নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা’। এছাড়া চসিক নির্বাচনে বিএনপি সন্ত্রাস করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় নগরীর বাসায় সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। তথ্যমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন চলাকালীন বিএনপি সংবাদ সম্মেলন করেছে, নির্বাচন শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে আমীর খসরু মাহমুদ চট্টগ্রামে ও রিজভী আহমেদ ঢাকায় বসে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এবং নানা ধরনের প্রশ্ন তুলেছেন।
আমরা আগে থেকেই জানতাম এই সমস্ত প্রশ্ন তোলার জন্যই তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তারা সব নির্বাচনেই এই সমস্ত গৎ বাঁধা প্রশ্ন উপস্থাপন করেন এবং অভিযোগের বাঙ খুলে সবসময় বসে থাকেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম শহরের ডাটাটা একটু দেখুন, ১৯৯৪ সালের পর থেকে কার্যত বিএনপি কোনো ভোটে জিতেনি। মনজুর আলম সাহেব একবার বিএনপির পক্ষ হয়ে নির্বাচন করেছিলেন। আসলে মনজুর তো আওয়ামী লীগের মানুষ, বিএনপির কাছে তিনি ভাড়ায় খেলতে গিয়েছিলেন। যেহেতু তিনি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ করেছেন সে কারণে আওয়ামী লীগের অনেক লোক তার পক্ষে কাজ করেছে, সেই কারণে তিনি জয়লাভ করেছিলেন। তিনি আবার কিন্তু আওয়ামী লীগে ফেরত চলে এসেছেন। সুতরাং ৯৪ সালের পর থেকে এই শহরের কোনো নির্বাচনেই বিএনপি জয়লাভ করেনি।
নির্বাচন কমিশনের বৈষম্যমূলক বিধান আশেপাশের কোনো দেশে নেই উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশে এমন একটি বিধি করেছে, যারা এমপি তারা কোনো প্রচারণা চালাতে পারছেন না, কিছুই করতে পারছেন না। অথচ এই শহরে আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা এবং এই শহর থেকেই আমার রাজনীতি শুরু। এই শহরের জামালখান ওয়ার্ড ছাত্রলীগের মিছিলের কর্মী হিসেবে আমার রাজনীতির জীবন শুরু। আমি চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদকও ছিলাম। দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও কিন্তু এই নির্বাচনে আমরা কোনো ভূমিকাই রাখতে পারিনি দলের পক্ষে।
তিনি বলেন, ভারতে রাজ্য ও কেন্দ্রের এমপি-মন্ত্রীরা তাদের প্রটোকল ও সুযোগ-সুবিধা বাদ দিয়ে সব ধরনের নির্বাচনে দলের পক্ষে প্রচার-প্রচারণাসহ অন্যান্য কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারে। ইংল্যান্ড, কন্টিনেন্টাল ইউরোপসহ অন্যান্য দেশেও পারে। কিন্তু আমাদের দেশে পারে না। তাকিয়ে থাকা ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারি না। সরকারি দলের জন্য এটি অদ্ভুত ও বৈষম্যমূলক বিধান বলে আমি মনে করি।
চসিক নির্বাচনে বিএনপি সন্ত্রাস করেছে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, নগরীর পাহাড়তলী ইউসেপ কেন্দ্রে বিএনপির আক্রমণে দুজন আওয়ামী লীগ কর্মী আহত হয়েছে, আমবাগান কেন্দ্রে একজন আওয়ামী লীগ কর্মী খুন হয়েছে। পাথরঘাটা কেন্দ্রে বিএনপির আক্রমণে ইভিএম মেশিন ভেঙে দিয়েছে। দেওয়ানবাজার কেন্দ্রে বিএনপি সংখ্যালঘু ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছে। ল্যাবরেটরি স্কুল কেন্দ্রে একজন আওয়ামী লীগ কর্মীর এজেন্ট এখনো নিখোঁজ। লালখান বাজার কেন্দ্রে নগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের ছেলেকে আক্রমণ করে রক্তাক্ত করেছে। আরো পাঁচজন আহত হয়েছে। চান্দগাঁও মৌলভী পুকুর পাড় কেন্দ্রে বিএনপির আক্রমণে যুবলীগ কর্মীসহ পাঁচজন আহত হয়েছে। অভিজিৎ নামের এক আওয়ামী লীগ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছে। কাজেম আলী স্কুল কেন্দ্রে যুবলীগ কর্মী সোলাইমান আহত হয়েছে বিএনপির আক্রমণে।
বিএনপি প্রার্থী শাহাদাত বলেছেন, ওনারা আওয়ামী লীগের সাথে নির্বাচন করেননি। নির্বাচন করেছেন পুলিশের সাথে। সাংবাদিকরা এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে হাছান মাহমুদ বলেন, কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালালে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে সেখানে পুলিশ দলমত নির্বিশেষে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। লালখান বাজার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগের অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, লাঠিচার্জ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যেখানে বিএনপি হাঙ্গামা করেছে সেখানেও ব্যবস্থা নিয়েছে। যেখানে আওয়ামী লীগ করেছে সেখানেও ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। পুলিশের দায়িত্বই তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, শান্তি স্থাপন করা।
নির্বাচনের নামে তামাশা হয়েছে-রিজভী আহমেদের এমন বক্তব্যের ব্যাপারে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি এ কথা বলেছেন দুপুরবেলা। তখন নির্বাচন শেষ হয়নি। আসলে তারা যে হেরে যাচ্ছিলেন, তাদের নেতাকর্মীদের নির্বাচনের মাঠে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, সেটি ঢাকার জন্য দুপুরবেলা এটা বলেছেন তিনি। আগামীকালও বহু কথা বলবেন। হেরে গেলে অজুহাত দাঁড় করানোর চেষ্টা রিজভী আহমেদ সবসময় করেন। আমি বিএনপিকে অনুরোধ জানাব, অজুহাত দাঁড় করানোর অপচেষ্টা না চালিয়ে তাদের দুর্বলতাটুকু কোথায় সেটি খুঁজে বের করার জন্য।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, সংসদ সদস্য সাইমুম সরোয়ার কমল ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন।