চলে গেলেন বাংলা চলচ্চিত্রের ‘মিয়া ভাই’ খ্যাত অভিনেতা সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। মৃত্যুকালে রেখে গেছেন স্ত্রী ও দুই সন্তান। অভিনেতা ফারুক দীর্ঘদিন সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আট বছর ধরে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন এই অভিনয়শিল্পী ও রাজনীতিবিদ। সর্বশেষ ২০২১ সালের মার্চ মাসের প্রথম দিকে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিঙ্গাপুরে যান তিনি। পরীক্ষায় রক্তে সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর থেকেই শারীরিকভাবে অসুস্থতা অনুভব করছিলেন তিনি। সিঙ্গাপুরে নিজের পরিচিত চিকিৎসকের পরামর্শে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। হাসপাতালে ভর্তির কয় দিন পর তাঁর মস্তিষ্কেও সংক্রমণ ধরা পড়ে। সেখানে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চিকিৎসা ব্যর্থ হয়। গতকাল সোমবার সিঙ্গাপুর স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। অভিনেতা ফারুকের মরদেহ আজ মঙ্গলবার ভোরের ফ্লাইটে ঢাকায় আনা হবে। সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুক এমপির মরদেহ আজ শহীদ মিনারে নেয়া হবে। তাঁর মরদেহ সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। এরপর দুপুর দেড়টায় নেয়া হবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র কর্পোরেশনে (বিএফডিসি)। সেখানে বাদ জোহর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল ৫টায় বাদ আসর গুলশান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে সন্ধ্যা ৭টায় গ্রামের বাড়ি কালিগঞ্জে তাকে দাফন করা হবে।
চিত্রনায়ক ফারুকের ইন্তেকালে সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক শোকবার্তায় বলেন, ফারুকের ইন্তেকালে চলচ্চিত্র অঙ্গনে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তারা মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
অপর এক বার্তায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, চিত্রনায়ক ফারুকের ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেন। তিনি প্রয়াতের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালের ১৮আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন ফারুক। এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে ঢাকাই সিনেমায় তাঁর অভিষেক। প্রথম সিনেমায় তাঁর বিপরীতে ছিলেন কবরী। এরপর ১৯৭৩ সালে খান আতাউর রহমানের পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘আবার তোরা মানুষ হ’ এবং ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘আলোর মিছিল’ দুটি সিনেমায় পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। প্রায় পাঁচ দশক ঢালিউডে অবদান রেখেছেন অভিনেতা ফারুক। অভিনয় থেকে অবসর নেওয়ার পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা–১৭ আসনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। অভিনয়ের জন্য ১৯৭৫ সালে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ২০১৬ সালে ভূষিত হয়েছেন আজীবন সম্মাননায়। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে ‘সারেং বৌ’, ‘লাঠিয়াল’, ‘সুজন সখী’, ‘নয়নমনি’, ‘মিয়া ভাই’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সাহেব’, ‘আলোর মিছিল’, ‘দিন যায় কথা থাকে’ ইত্যাদি। পাঁচ দশকের বেশি সময়ের অভিনয় ক্যারিয়ারে অভিনয় করেন বহু দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্রে। ‘মিয়া ভাই’ চলচ্চিত্রের সাফল্যের পর তিনি চলচ্চিত্রাঙ্গনে ‘মিয়া ভাই’ হিসেবে খ্যাতি পান।