চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদন শুরু

এবারও শতভাগ জমিতে প্রয়োগ হচ্ছে পলিথিন প্রযুক্তি লক্ষ্যমাত্রা ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন

ফরিদুল আলম দেওয়ান, মহেশখালী | শনিবার , ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ at ৫:১৮ পূর্বাহ্ণ

দেশে লবণের জাতীয় চাহিদা ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন নির্ধারণ করে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের আশা নিয়ে চলতি মৌসুমে শুরু হয়েছে লবণ উৎপাদন। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে লবণ উৎপাদন। ইতিমধ্যে কুতুবদিয়ায় উৎপাদিত হয়েছে ৫৫ মেট্রিক টন। আশা করা যাচ্ছে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আবারও লবণ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। দেশে ৪ লাখ ১ হাজার ৭৮৫ টন লবণ উদ্বৃত্ত রয়েছে। ফলে বিদেশ থেকে কোনো লবণ আমদানির প্রয়োজন নাই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সূত্র।

জানা যায়, কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, সদর ও টেকনাফ এবং পাশের জেলা চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও পটিয়া উপকূলের প্রায় ৬৮ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হয়। গত ৪ নভেম্বর কুতুবদিয়ায় চলতি মৌসুমে প্রথম লবণ উৎপাদন শুরু হয়। এ উপকূলের ৭০ শতাংশ জমিই এখন লবণ চাষের জন্য প্রস্তুত। এছাড়া পেকুয়ায় ৫০ শতাংশ, টেকনাফে ১০ শতাংশ ও বাঁশখালী উপজেলায় ৪০ শতাংশ মাঠ প্রস্তুত হয়েছে। বাকি উপজেলার চাষিরাও মাঠে নামতে শুরু করেছেন। এরই মধ্যে চলতি মৌসুমে কুতুবদিয়া ও বাঁশখালী উপজেলা থেকে ৫৫ টন লবণ সংগৃহীত হয়েছে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত চলতি মৌসুমে টেকনাফ, সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া, ঈদগাঁও ও বাঁশখালীতে ৬৯ হাজার একর জমিতে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত মৌসুমে ৬৮ হাজার ৫০৫ একর জমিতে লবণ উৎপাদিত হয়েছিল ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন, যা বাণিজ্যিক লবণ উৎপাদন শুরুর পরবর্তী ৬২ বছরের সর্বোচ্চ রেকর্ড। পাশাপাশি এক দিনে সর্বোচ্চ ৩৯ হাজার টন লবণ উৎপাদনের নতুন রেকর্ডও সৃষ্টি হয়। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত মাসে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ডানার প্রভাবে বৈরী আবহাওয়া ছিল। ফলে লবণ উৎপাদনের জন্য মাঠ প্রস্তুত করতে চাষিদের সময় লেগে যায়।

বিসিক কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া জানান, গত মৌসুমে লবণ উৎপাদিত হয়েছিল ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯০ টন। চাষ হয়েছিল ৬৮ হাজার ৫০৫ একর জমিতে। দেশে ৪ লাখ ১ হাজার ৭৮৫ টন লবণ উদ্বৃত্ত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ বছরও লবণ চাষের জমির আওতা বাড়বে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও ছাড়িয়ে যাবে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা।

বিসিকের তথ্য মতে, গত বছর ৬৮ হাজার একরের বেশি জমিতে আধুনিক পলিথিন প্রযুক্তি পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদন হয়েছে। এবারও শতভাগ জমিতে পলিথিন প্রযুক্তিতে লবণ উৎপাদিত হবে। এ বিষয়ে চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সনাতন পদ্ধতির তুলনায় পলিথিন প্রযুক্তিতে লবণ উৎপাদন আড়াই গুণ বেশি হয়। জেলার ৪৪ হাজার প্রান্তিক চাষি, ১ লাখ শ্রমিকসহ অন্তত ১০ লাখ মানুষ লবণ উৎপাদন, বিপণন, পরিবহন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বিশিষ্ট লবণ ও চিংড়ি চাষি এনামুল করিম চৌধুরী বলেন, আমি আমার নিজস্ব ও অন্যান্য জমি মালিকদের কাছ থেকে অগ্রিম লাগিয়ত নেওয়া কয়েক শত একর জমিতে লবণ চাষ করি। ১০ দিন আগে থেকে লবণের মাঠ তৈরির কাজ শুরু করেছি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে লবণ উৎপাদন শুরু করতে পারব বলে আশা করছি। তবে চলতি মৌসুমে পলিথিনসহ লবণ উৎপাদনের আনুষঙ্গিক সরঞ্জামের মূল্য বৃদ্ধির কারণে এবার উৎপাদন খরচ গত বছরের চেয়ে বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছি। তিনি লবণের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএকটি কলার দাম ৭৪ কোটি টাকা!
পরবর্তী নিবন্ধপাঁচ দেশে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতা