বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে যে, সারা দেশেই মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে এবং এটি আরো কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই তাপপ্রবাহের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা বেশ উদ্বেগজনক। এ বছর এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে গত ১৭ এপ্রিল পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নয় বছর আগে ২০১৪ সালে মারাত্মক তাপপ্রবাহ দেখা গিয়েছিল।
সে সময় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। এই মাঝের সময়টা বা গত আট বছরে দেশের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির নিচেই ছিল বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর আগে বরিশালে ১৯৫৬ সালে ৪৩.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছিল তাপমাত্রা। এছাড়া ১৯৮৯ সালে বগুড়ায় ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছিল তাপমাত্রা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বাংলাদেশে তাপমাত্রা ২০ এপ্রিল (আজ) পর্যন্ত বাড়বে অর্থাৎ তাপপ্রবাহ থাকবে। আগামীকাল শুক্রবার থেকে সারা দেশে তাপপ্রবাহ কিছুটা কমে আসবে। আবহাওয়াবিদদের সংগঠন সাউথ এশিয়ান মেটিওরোলোজিক্যাল এসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফিক অ্যান্ড মেরিটাইম ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. মোহন কুমার দাশ বলেন, বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে যে তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে তা উদ্বেগজনক। তাপপ্রবাহ দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকলে সেটা স্বাভাবিক নয় বলেও উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বাভাবিকের একটা মাত্রা আছে। ঐতিহাসিকভাবে দেখা গেছে বাংলাদেশে তাপপ্রবাহ চারদিন থেকে সর্বোচ্চ আটদিন স্থায়ী হয়। কিন্তু যখন দেখি ১৪ দিন, এটা ব্যতিক্রম। বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে। বিশেষ করে দেশের একটি জেলা চুয়াডাঙ্গায় গত ২ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ১৪ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এটাও উদ্বেগজনক বলে মনে করেন এই আবহাওয়া বিজ্ঞানী।
দেশের বেশ কিছু জায়গায় তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রিও ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া গত ১১–১২ দিন ধরে দেশের কোথাও বৃষ্টিও নেই। এর আগে গত ৫ এপ্রিল সিলেটের শ্রীমঙ্গলে ১৭ মিলিমিটিার বৃষ্টি হয়েছে। খবর বিবিসি বাংলার।
বাংলাদেশে এবার তাপপ্রবাহ হলেও প্রচণ্ড গরমেও ঘাম খুব কম হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ কমে যাওয়া। গত ১২ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলেও বাতাসের আর্দ্রতা ০৮ শতাংশে নেমে গিয়েছিল। যেখানে স্বাভাবিক আর্দ্রতা থাকে ৫০, ৬০, ৭০ কিংবা ৮০। আবহাওয়াবিদ ড. সমরেন্দ্র কর্মকার বলেন, তাপপ্রবাহের সময় যদি আর্দ্রতা কমে যায় এবং এটি যদি ২০–২৫% এর নিচে নেমে যায় তাহলে সেসময় মানুষের ঘাম হয় না। এর ফলে মানুষ তাপীয় অবস্থা বেশি অনুভব করে। এই অবস্থা মানুষের জন্য ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জলীয় বাষ্পটা খুবই কমে যায়, ওই দিকে তাপমাত্রাটাও বেড়ে যায়। এতে অস্বস্তি লাগে।
আবহাওয়া ও সমুদ্র বিজ্ঞানী ড. মোহন কুমার দাশ বলেন, বাংলাদেশের তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে সেটি বেশ উদ্বেগনজক এবং এভাবে বাড়তে থাকলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের তাপমাত্রা ইতিহাসের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যাবে। এই যে চৌদ্দদিন ধরে যে তাপমাত্রাটা বেড়েছে সেটা একেবারে হঠাৎ করেই বাড়েনি। বরং ধীরে ধীরে এটি বেড়েছে। আবার মাঝে কখনো হয়তো কমেছেও। তবে এখন থেকে ২০ বছর পর দেশের তাপমাত্রা যে আরো বাড়বে সেটি নিয়ে সন্দেহ নেই বলেও মনে করে তিনি বলেন, তাপমাত্রা কোন একটি কারণে বাড়ে না। বরং বিভিন্ন উপাদানের সমন্বিত পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বেশি হয়।