চমেক হাসপাতালে জোনায়েদ সাকীর ওপর হামলা

আহত ১৫

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৮ জুন, ২০২২ at ৬:২২ পূর্বাহ্ণ

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে জোনায়েদ সাকীসহ ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে এই হামলা হয়। সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় আহতদের দেখতে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এই হামলা চালিয়েছে বলে গণসংহতির নেতৃবৃন্দ দাবি করেছেন।

হামলায় আহতরা হলেন- গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কারের ইমরান ইমু, গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদ খান, কেন্দ্রীয় যুগ্ম-আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন, কার্যকারী সদস্য কামরুন নাহার ডলি, যুব অধিকার পরিষদের ডা. রাসেল, মহানগর ছাত্র অধিকার পরিষদের নাহিন ইসলাম গাজী, চট্টগ্রাম গণসংহতির জেলা সমন্বয়ক হাসান মারুফ রুমী, চট্টগ্রাম মহানগর ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শ্রীধাম কুমার শীল প্রমুখ। আহতরা সবাই বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

জোনায়েদ সাকী বলেন, সকালে কয়েকজন নেতাকর্মী মিলে আমরা সীতাকুণ্ডে গিয়েছিলাম। এরপর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের দেখে আমরা গাড়িতে উঠতে যাবো, এমন সময় হামলার শিকার হই। তারা ইট দিয়ে হামলা করেছে। নেতাকর্মীদের গাড়ি থেকে নামিয়ে হামলা করেছে তারা। আমাদের সাতটি রাজনৈতিক দলের ২০ নেতাকর্মী এসময় হামলার শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, হামলার সময় দুইজন পুলিশ সদস্য এগিয়ে এসে রক্ষা করেছেন। অন্যদের তেমন ভূমিকা ছিলো না।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতারা দাবি করেছেন, জোনায়েদ সাকী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা শেষে দলবল নিয়ে বিভিন্ন বুথে ঘুরছিলেন। ইমার্জেন্সি থেকে মেইন গেইটে যাওয়ার সময় জোনায়েদ সাকীর সঙ্গে যাওয়া লোকজনের পেছনে দুটি অ্যাম্বুলেন্স আটকা পড়ে। তাই পাবলিক ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের দিকে তেড়ে যায়। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর বলেন, তিনি কোনো রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী নন, তার ওপর কেনো হামলা হবে? গত তিন দিন বিভিন্ন সংগঠন থেকে শুরু করে হাজার হাজার মানুষ আসছে। কই কারো তো কোনো সমস্যা হয়নি। ছাত্রলীগ কেন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে হামলা করতে যাবে?

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল তিনটার দিকে বিএম কন্টেনার ডিপো পরিদর্শন করতে গিয়ে জোনায়েদ সাকী বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনায় তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ যে নাশকতার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাতে অন্যের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা দেখছেন বলে মন্তব্য করেছেন।

জোনায়েদ সাকী সেখানে বলেন, অতীতে নাশকতার যত কথা বলা হয়েছে শেষ পর্যন্ত তার কোনোটাই নাশকতা বলে প্রমাণ হয়নি। প্রতিটি ঘটনায় অনেক অব্যবস্থাপনা, তদারকির অভাব ও নানা রকম দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। এত বড় একটি দুর্ঘটনাকে নাশকতা বলে কোনো একটি পক্ষের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা চলছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের সাথে আমরা কথা বলেছি। তাদের কাছে রাসায়নিকের তথ্য গোপন করা হয়েছে। সম্ভবত এ ডিপোতে রাসায়নিক রাখার অনুমোদন ছিল না। তাই আগুন লাগার পর কোনোভাবে তারা পার করে দিতে চেয়েছিল। শুরুতে তথ্য দিলে হতাহতরা অনেকে হয়ত রেহাই পেত, বলেন সাকী।
দুর্ঘটনাটিকে রাজনৈতিক প্রলেপ দেয়ার চেষ্টা চলছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা সঠিক ছিল কি না এবং যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠানের দেখাশোনা করার কথা তারা দায়িত্ব পালন করেছে কিনা খতিয়ে দেখার দাবি জানান তিনি। গণসংহতি আন্দোলনের ওই শীর্ষ নেতা বলেন, মালিকপক্ষের দায় আছে। পুরো কাঠামোগত সমস্যা আছে। আর মালিকপক্ষ যদি সরকারি দলের সঙ্গে যুক্ত হয় তাহলে ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে দৃষ্টি ফেরানোর চেষ্টা চলে। এসব চেষ্টা বন্ধ করতে হবে।

দেশে ভয়াবহ অপশাসন চলছে এবং সরকারের কোনো জবাবদিহিতা নেই দাবি করে সাকী বলেন, তারই পরিচায়ক এ ঘটনা। আর ক্ষতিপূরণ পাওয়া নিহত ও আহতদের অধিকার। দয়া বা দাক্ষিণ্য নয়। এক জীবনের আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ দিতে হবে অবশ্যই। ক্ষতিপূরণ আইন বদলাতে হবে।

গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির উপর ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হামলায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট চট্টগ্রাম জেলা নেতৃবৃন্দ। বাম গণতান্ত্রিক জোট চট্টগ্রাম জেলা সমন্বয়ক ও বাসদ (মার্কসবাদী) জেলা সদস্যসচিব শফি উদ্দিন কবির আবিদ ও সিপিবি জেলা সভাপতি অশোক সাহা, বাসদ জেলা ইনচার্জ আল কাদেরি জয় সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আজ ন্যূনতম গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ রাখছে না। সীতাকুণ্ডের ভয়াবহ দুর্ঘটনার সাথে যুক্তদের আড়াল করতে দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে তারা। নেতৃবৃন্দ দুর্বৃত্তদের প্রশ্রয় দেয়া এবং প্রতিবাদের কণ্ঠ রুদ্ধ করার ফ্যাসিবাদী এই দুঃশাসনকে রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচোখের সমস্যা নিয়ে ৫ জনসহ ৭ জনকে ঢাকায় প্রেরণ
পরবর্তী নিবন্ধইন্টার্ন ডাক্তারদের বিরুদ্ধে নার্সদের মারধরের অভিযোগ, বিক্ষোভ