আগামীকাল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পঞ্চম সমাবর্তন। একক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমাবর্তন হতে যাচ্ছে। এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান করা হবে। বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচন ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে এ ডিগ্রি প্রদান করা হবে। একইসাথে সমাবর্তন বক্তাও থাকবেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই ড. ইউনূসের প্রথম চট্টগ্রাম সফর। এ সফর এবং সমাবর্তন ঘিরে পুরো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সেজেছে নতুন রূপে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে গত এক মাস ধরে কাজ করা হচ্ছে। এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে সনদ নেবেন প্রায় ২৩ হাজার সমাবর্তী। শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অতিথিসহ প্রায় ২৫ হাজার লোকের সমাগম হবে। এছাড়া এদিন সমাবর্তীসহ প্রায় এক লাখ মানুষের সমাগম হতে পারে চবি ক্যাম্পাসে। গতকাল সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সমাবর্তনের সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে এসব তথ্য বিস্তারিত জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ৫ম সমাবর্তন আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার, কমিটির সদস্য সচিব ও চবি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. এনায়েত উল্যা পাটোয়ারী, উপ–উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. শামীম উদ্দিন খান, উপ–উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও ফটোগ্রাফি শাখার প্রশাসক ড. মো. শহীদুল হক প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এদিন সমাবর্তীরা নিজ নিজ বিভাগ/ইনস্টিটিউট থেকে সকাল ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে খাবার ও গিফট আইটেম সংগ্রহ করতে পারবে। গিফটের মধ্যে থাকবে ব্যাগ, স্মরণিকা, কলম, পিন, ওয়ালেট ইত্যাদি। কনভোকেশন টুপি গিফট হিসেবে বিবেচিত হবে জানান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শহর থেকে ক্যাম্পাস দূরত্ব ২২ কিলোমিটার হওয়ায় শাটল ট্রেনের পাশাপাশি ১০০ বাস সকাল ৬টা থেকে যাতায়াত শুরু করবে। এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ব্যতীত ক্যাম্পাসে আর কোনো যানবাহন প্রবেশ করবে না, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং গেইট থেকে ক্যাম্পাসে থাকবে শাটল বাসের ব্যবস্থা।
৫ম সমাবর্তনে ৪২ জন পিএইচডি এবং ৩৩ জন এম. ফিল, ডিগ্রিসহ মোট ২২ হাজার ৫৮৬ জন শিক্ষার্থীকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হবে। কলা ও মানববিদ্যা ৪৯৮৮ জন, বিজ্ঞান ২৭৬৬ জন, ব্যবসায় প্রশাসন ৪৫৯৩ জন, সমাজ বিজ্ঞান ৪১৫৮ জন, জীববিদ্যা ১৬৮৫ জন, ইঞ্জিনিয়ারিং ৭৯৬ জন, আইন ৭০৩ জন, শিক্ষা ৩১৭ জন, মেরিন সায়েন্স ২৮৪ জন, চিকিৎসা ২২৯৬ জন বিভিন্ন ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এই সমাবর্তনের প্রাক্কলিত বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় ১৪ কোটি টাকা। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা আবেদন হিসেবে পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে প্যান্ডেল, সাজ–সজ্জা ও আসন ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে।
ক্যাম্পাসে গাউন–টুপিতে কনভোকিদের উচ্ছ্বাস : সমাবর্তন শুরু হওয়ার আগেই কনভোকিদের আনন্দ উচ্ছ্বাস শুরু হয়ে গেছে। গতকাল থেকে কনভোকিদের অগ্রিম গাউন, হুড ও টুপি দেওয়া শুরু হয়েছে। এদিন গাউন নেওয়ার জন্য প্রতিটি বিভাগে কনভোকিরা ভিড়তে করতে দেখা গেছে। প্রিয় আঙ্গিনায় উপস্থিত হয়েছে হাজারো গ্র্যাজুয়েট। দীর্ঘদিন পর বন্ধুদের দেখা পেয়ে উচ্ছ্বসিত তারা। কেউ সেলফি তুলছেন। কেউ ব্যস্ত আড্ডায়। কারও গল্পের সঙ্গী বন্ধু–বান্ধব, পিতা–মাতা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হচ্ছে। গতকাল সোমবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাস্পাস মুখরিত হয়ে ওঠে গ্রাজুয়েটদের পদচারণায়। মাথায় কালো টুপি, গায়ে গাউন আর হুড। দল বেঁধে ছোটাছুটি করছেন প্রিয় আঙ্গিনাজুড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠ, শহীদ মিনার, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী, ক্যাম্পাসের আকর্ষণীয় স্থানগুলো সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। ক্যাম্পাসের আনাচে–কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন গ্রাজুয়েটরা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পার করে কেউ চাকরিতে প্রবেশ করেছেন আবার কেউবা এখনও বেকারত্ব ঘুচানোর চেষ্টায় আছেন। তবে সমাবর্তনের অনুষ্ঠানে চাকরি বা বেকারত্ব কোন কিছুরই যেন ছাপ নেই। সবাই মেতেছেন আনন্দ উল্লাসে।
কানিজ ফাতেমা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার আইন অনুষদের শিক্ষার্থী। কলেজের লেকচারার হিসেবে চাকরি করছেন তিনি। এরমধ্যে বিয়েও করেছেন। ফুটফুটে কন্যা সন্তান নিয়ে এসেছেন সমাবর্তনের গাউন নিতে। এসেছেন স্বামীও। তিনি বলেন, এটি এক অন্যরকম মুহূর্ত। আমি মেয়েকে নিয়ে এসেছি, মেয়ের বাবা এসেছে, আমার বাবা–মা এসেছেন। এখন ভিড় কম থাকায় স্বস্তিতে ইচ্ছে মতো ছবি তুললাম। ইয়াসিন আরাফাত নামের এক গ্র্যাজুয়েট বলেন, অনেক আগেই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে গিয়েছি। আমরা সবাই বিভিন্ন স্থানে কর্মরত। সমাবর্তন উপলক্ষে ক্যাস্পাসে এসেছি, সবার সাথে দেখা হচ্ছে। বুধবার আরও সবার সাথে দেখা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সময়গুলো অনেক সুন্দর ছিলো। অনেক মিস করি।