সেশনজট, শিক্ষকদের স্বেচ্ছাচারিতা ও নানা জটিলতা নিরসনসহ ৭ দফা দাবিতে আন্দোলন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার দ্বিতীয় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। এর আগে তারা বিভাগের সভাপতি বরাবর বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে একটি চিঠি দেয়। আন্দোলনের মুখে তাদের সকল দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিভাগের সভাপতি। জানা যায়, গত ১৮ আগস্ট প্রকাশিত মাস্টার্সের অফিসিয়াল রেজাল্টে ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে ফেল দেখানো হয়। এছাড়া ১৭ জন ফার্স্ট ক্লাস বাকি সকলের রেজাল্ট সেকেন্ড ক্লাস দেখানো হয়। ফলাফল আরো ভালো হওয়ার কথা ছিল বলে দাবি শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা জানান, ব্যক্তিগত আক্রোশের বশবর্তী হয়ে পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান যাকীয়াহ তাসনীম শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট বিপর্যয় ঘটিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা আরও জানান, এ রেজাল্ট গত ৫ বছরে আমাদের ডিপার্টমেন্টের রেজাল্টের সাথে কোনো পরিসংখ্যানে মিলে না। আমাদের ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেন, ওখানে সিজিপিএ ৩.৫০ থেকে ৩.৮০ পর্যন্ত রেজাল্ট নিয়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষ করে। এছাড়াও দেশের সকল পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের রেজাল্ট হয় ৪.০০, ৩.৫০, ৩.৮০ বা ন্যূনতম ৩ নিয়ে পড়ালেখা শেষ করে শিক্ষার্থীরা। শুধুমাত্র আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা সেশনজট ও এমন রেজাল্ট নিয়ে বাংলাদেশের স্বনামধন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে ব্যাংকের ফরমও সংগ্রহ করার যোগ্যতা রাখি না। তাহলে আমরা কি এটাই ধরে নিব যে, শুধু আমরা ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরাই মেধাহীন? আমরা এ হয়রানি থেকে মুক্তি চাই। এসময় তারা ৭ দফা দাবি পেশ করে। দাবিগুলো হলো, বর্তমান পরীক্ষা কমিটি বাতিল করে নতুন পরীক্ষা কমিটির মাধ্যমে মাস্টার্সের রেজাল্ট পুনর্মূল্যায়ন করা এবং ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে রেজাল্ট মেনিপুলেশনের অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা, অপ্রত্যাশিত কিংবা ব্যক্তিগত আক্রোশে অকৃতকার্য এর বিষয়টি অধিক গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় এনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাথে সামঞ্জস্য রেখে খাতা মূল্যায়ন করা, বিভাগকে সেশনজট মুক্ত করা এবং কিভাবে সেশনজট মুক্ত করা হবে তার একটা রোডম্যাপ বা প্ল্যান বর্তমান চেয়ারম্যান কর্তৃক সবার সামনে উপস্থাপন করা, প্রতি ব্যাচের পরীক্ষা শেষে দুই মাসের মধ্যে রেজাল্ট প্রকাশ করা এবং পরবর্তী ব্যাচের ক্লাস ১৫ দিনের মধ্যে শুরু করা, শিক্ষার্থীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং হয়রানি করার অভিযোগে অফিস সহায়ক আবু মঞ্জুর চৌধুরীকে ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রত্যাহার করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক নিয়মবহির্ভূতভাবে কোনো জরিমানা কিংবা অন্য টাকা আদায় করা যাবে না, থিসিস যারা নিয়েছে তাদের সবার রেজাল্ট রেগুলার ব্যাচের সাথে প্রকাশ করা।
শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে এদিন দুপুরে ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান, দুইজন ডিন ও শিক্ষকগণ মিটিংয়ে বসেন। মিটিং শেষে শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। আগের পরীক্ষা কমিটি বাতিল করে নতুন করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়াও অফিস সহায়ক আবু মঞ্জুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের হয়রানির অভিযোগে তাকে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিভাগের সভাপতি প্রফেসর মাহ এ নূর কুদসী ইসলাম এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন।