চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) গত রবিবার ১৮ পদ থেকে ১৬ জনের পদত্যাগের পর এবার ৪ পদ থেকে আরও তিনজন পদত্যাগ করেছেন। একসাথে এতজন পদত্যাগের ঘটনা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনো হয়েছে কিনা কেউ জানে না। বিষয়টিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের জন্য নেতিবাচক বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই। মূলত প্রশাসনিক নানা স্বার্থের দ্বন্দ্বে এমন ঘটনা ঘটছে বলেও মন্তব্য তাদের। এ ঘটনাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চরম ব্যর্থতা বলে মন্তব্য করেছেন চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী। তিনি আজাদীকে বলেন, দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ অনিয়ম ও অর্ডিন্যান্সকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সিদ্ধান্তের বহিঃপ্রকাশ হলো এ গণপদত্যাগ। এছাড়া প্রশাসন ও পদত্যাগকারীদের পাল্টাপাল্টি যে বক্তব্য আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি, এতে বুঝা যায় তাদের মধ্যে একটা বৈষয়িক লেনদেনের অমিল আছে। হয়ত তারা তাদের যে চাওয়া বা উপাচার্যের সঙ্গে তাদের বনিবনা হচ্ছিল না, তারই প্রতিক্রিয়ায় এমনটা হয়েছে। এমন ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক কোনো প্রভাব না ফেললেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ক্ষেত্রে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এবং জাতির কাছে একটা প্রশ্নের তৈরি হয়েছে। পদত্যাগপত্রে ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করলেও বর্তমান প্রশাসনের উপাচার্যের ওপর অসন্তোষ হয়েই একযোগে এ পদত্যাগ করেছেন বলে জানা যায়। পদত্যাগকারীরা সবাই দীর্ঘ সময় বর্তমান প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করে আসছেন।
এসময়ে শিক্ষকদের দাবি–দাওয়াসহ নানা বিষয়ে সিদ্ধান্তের কথা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন তারা। তাদের সেসব বিষয় আমলে না নেওয়ায় এমনটি করেছেন বলে কয়েকজন সহকারী প্রক্টর জানিয়েছেন। পদত্যাগকারী কয়েকজন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় আগের কর্তৃপক্ষ প্রক্টরদের সঙ্গে আলাপ করতেন। এখন অনেক কিছুই কিন্তু আমরা জানি না, পরে জানতে পারি এটা হয়েছে। অনেক সময় আমাদের ওপর দোষ চাপিয়ে দেয়া হয়। বলা হতো আমরা এটি করিয়েছি বা আমাদের সম্মতিতে এমনটা হয়েছে। আসলে আমরা কিছুই জানতাম না। আমরা শিক্ষকদের কাছে নানা বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম। আমাদের অনেক সুপারিশ সিন্ডিকেটে আলোচ্যসূচি পর্যন্ত করা হয়নি। এজন্য নিজ থেকে সরে গেলাম। আদর্শিক কারণে নতুন প্রক্টর ড. মোহাম্মদ নূরুল আজিম সিকদারকে মেনে নিতে না পেরে পদত্যাগ করেছেন সহকারী প্রক্টর মুহাম্মদ ইয়াকুব। এছাড়া পদত্যাগ করেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট ও পরিবহন দপ্তরের প্রশাসক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম এবং অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হলের প্রভোস্ট ড. সুমন বড়ুয়া।
গতকাল সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে রেজিস্ট্রার বরাবর পদত্যাগ পত্র জমা দেন তিনি। এর আগে গত রবিবার প্রক্টর প্রফেসর ড. রবিউল হাসান ভুইঁয়া, ছয় সহকারী প্রক্টর, বিভিন্ন হলের ১০ জন আবাসিক শিক্ষক এবং আইকিউএসির অতিরিক্ত পরিচালকসহ ১৮টি পদে থাকা ১৬ জন শিক্ষক একযোগে পদত্যাগ করেন।
পদত্যাগকারী সহকারী প্রক্টর মুহাম্মদ ইয়াকুব বলেন, আদর্শিক কারণে আমি নতুন প্রক্টরের বিষয়টি মেনে নিতে পারিনি। আমাদের জানা মতে, তিনি বিএনপিপন্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রজীবনে উনার ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার গুঞ্জন রয়েছে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে এরকম কাউকে মনোনীত করা আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব না। তাই আদর্শিক কারণে আমি পদত্যাগ করেছি। ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়ার পদত্যাগের ঘন্টাখানেকের মধ্যে নতুন প্রক্টর নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নিয়োগপ্রাপ্ত নতুন প্রক্টর হলেন, মেরিন সাইন্স ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নূরুল আজিম সিকদার। এছাড়া দুই সহকারী প্রক্টরকে নিয়োগ দেয়া হয়। এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ বলেন, ব্যক্তিগত বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে আজ তিনজন শিক্ষক তাদের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন। সর্বমোট চারটি প্রশাসনিক পদ থেকে তারা পদত্যাগ করেছেন। এদের মধ্যে দুজন হল প্রভোস্ট ও একজন সহকারী প্রক্টর রয়েছেন। এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।