চন্দনাইশের অধিকাংশ নলকূপে উঠছে না পানি

অনাবৃষ্টি-তাপদাহ

চন্দনাইশ প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ২০ এপ্রিল, ২০২৩ at ৮:৩১ পূর্বাহ্ণ

চলতি শুষ্ক মৌসুমে চন্দনাইশের অধিকাংশ নলকূপে পানি উঠছে না। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় উপজেলার দুইটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়নের শত শত অগভীর নলকূপে পানি উঠছে না। কিছু কিছু নলকূপে অল্পবিস্তর পানি উঠলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।

এতে গৃহস্থালির কাজে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। খাওয়ার ও ব্যবহারের পানি না পেয়ে বিপাকে পড়েছে শত শত পরিবার। অপরিকল্পিতভাবে অধিকাংশ জলাশয়, পুকুর ভরাট করে ফেলায় তাতেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। চন্দনাইশসাতকানিয়া উপজেলা সীমান্তের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত শঙ্খনদও প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ শুকিয়ে গেছে। পাশাপাশি শুকিয়ে গেছে উপজেলার প্রত্যেকটি ছড়া ও খাল। চলমান প্রচন্ড তাপদাহের ফলে জনজীবনে নেমে এসেছে অচলাবস্থা। নলকূপগুলোতে পানি না উঠায় জনগণের দুর্ভোগ বেড়েছে বহুগুণ।

উপজেলার ২টি পৌরসভা চন্দনাইশ ও দোহাজারী, ৮টি ইউনিয়নকাঞ্চনাবাদ, জোয়ারা, হাশিমপুর, বরকল, বৈলতলী, বরমা, সাতবাড়িয়া, ধোপাছড়ির প্রায় ১৫ হাজারেরও অধিক নলকূপের অধিকাংশতেই পানি উঠছে না। তবে গভীর নলকূপগুলোতে পানি উঠলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে পানি না উঠায় অনেক নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগে কোনো কোনো নলকূপে সামান্য পানি উঠলেও চলতি এপ্রিলের প্রচন্ড তাপদাহের সময়ে এসে একেবারেই অকেজো হয়ে গেছে। একই চিত্র চন্দনাইশের পার্শ্ববর্তী সাতকানিয়া উপজেলার কালিয়াইশ, ধর্মপুর, বাজালিয়া, পুরানগড়, খাগরিয়াসহ আশেপাশের এলাকাগুলোতেও। অগভীর (স্যালো) নলকূপগুলোতে পানি না উঠায় বিপাকে পড়েছে জনগণ। এরমধ্যে বেশ কয়েকটি সাব মার্সিবল পাম্পযুক্ত গভীর নলকূপেও পানি উঠছেনা বলে জানা গেছে।

জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী উপজেলায় সরকারিভাবে স্থাপিত সাব মার্সিবল পাম্পযুক্ত গভীর নলকূপ রয়েছে প্রায় দেড় হাজার। সেসব নলকূপে পানির কোনো ঘাটতি নেই। তবে অস্বাভাবিকভাবে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় উপজেলার কিছু কিছু অগভীর নলকূপে অল্প বিস্তর পানি উঠলেও কোনো কোনো নলকূপে মোটেও পানি উঠছে না।

উপজেলার দোহাজারী পৌরসভার খানবাড়ির আবু তৈয়ব বলেন, তাদের অগভীর নলকূপে বর্ষাকালে নিরবচ্ছিন্নভাবে পানি উঠলেও শুষ্ক মৌসুমে পানি উঠে না। বিশেষ করে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অল্প অল্প পানি উঠলেও বিগত এক মাস ধরে কোনো পানিই উঠছে না। চন্দনাইশ পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের গৃহবধূ শাহিন আকতার জানান, নিজেদের ভিটের নলকূপে পানি উঠছে না দীর্ঘদিন। তাই রান্নাবান্না, হাঁড়িপাতিল পরিষ্কার,গোসল ও খাবারের পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে অনেক দূরের গভীর নলকূপ থেকে।

জানা গেছে, সরকারি নিয়ম হচ্ছে এক কিলোমিটারের মধ্যে গভীর নলকূপ করা যাবে না। কিন্তু এই নিয়ম কেউ মানছেন না। পানিপ্রবাহের উৎস নদনদী, জলাশয়, পুকুর, ডোবা ভরাট করে দখল করা হচ্ছে। ফলে অস্বাভাবিকভাবে পানি স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। গভীরঅগভীর নলকূপ স্থাপনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নিয়ম মানলে এ সমস্যা অনেকাংশে কমে আসবে।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. ফরহাদ হোসেন জানান, সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যায়। চলতি শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর যে পরিমাণ নিচে নামার কথা তার চেয়ে দ্বিগুণ নিচে নেমে গেছে। তার কারণ গত বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হওয়া। যার ফলে অগভীর নলকূপগুলোতে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া, বৃক্ষ নিধনসহ বিভিন্ন কারণে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংসের কারণেই আস্তে আস্তে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅ্যামোনিয়া সিলিন্ডার বিস্ফোরণে উড়ে গেল ভবনের বড় অংশ
পরবর্তী নিবন্ধনাইক্ষ্যংছড়িতে এক হাজার প্যাকেট সিগারেটসহ গ্রেপ্তার ২