চন্দনাইশের জাফরাবাদ ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসার অধ্যক্ষের পুনর্বহাল নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে ৯ জন আহত হয়। গতকাল রবিবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে চন্দনাইশে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী ও চন্দনাইশ থানা পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
জানা যায়, বিগত ৫ আগস্ট পরবর্তী জাফরাবাদ ফাজিল মাদাসার অধ্যক্ষ আবদুল গফুর রিজভীকে নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। ২৫ আগস্ট তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। এ বিষয়ে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা), চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, মাদরাসা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়। গত ১৭ এপ্রিল জাফরাবাদ মাদরাসার সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এল.এ) গোলাম মোরশেদ খান অধ্যক্ষ আবদুল গফুরকে স্বপদে পুনর্বহালের ব্যবস্থা নিয়ে তাকে স্বপদে পুনর্বহাল এবং দায়িত্ব অপর্নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দেন মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে। এদিকে গতকাল রবিবার সকাল ১০ টায় মাদরাসার অধ্যক্ষ আবদুল গফুর মাদরাসায় উপস্থিত হলে পুনর্বহালের বিষয়টি নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। এক পর্যায়ে দুইপক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা–ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে শিক্ষার্থীসহ উভয়পক্ষের কমপক্ষে ৯ জন আহত হয়। আহতরা হলো জাহেদুল ইসলাম (২২), আরমানুল হক মানিক (২১), মো. আরিফ (২৭), মো. জাহেদুল ইসলাম (২০), মো. জমির (২৫), মো. শাহজাহান (৪০), মো. হাসান (৪৫), মো. হিরু (২৬), এনামুল হক (৩৫)। আহতদের চন্দনাইশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে ৩ জনকে চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বৈলতলী ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর কায়েদে আজম আবু বক্কর জানান, অধ্যক্ষ পদে আবদুল গফুরকে পুনর্বহালের ব্যাপারে মাদরাসা গভর্নিং বডির পরবর্তী মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে পত্র প্রেরণ করা হয়। অথচ এর আগেই অধ্যক্ষ হিসেবে পুনর্বহালের ব্যবস্থা নিতে দেয়া চিঠিকে ইস্যু করে আবদুল গফুর গতকাল বহিরাগত লোকজন নিয়ে এসে মাদরাসার নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়। আহতদের মধ্যে ফাজিল ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী জাহেদুল ইসলাম (২২), ফাজিল ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী আরমানুল হক মানিক (২১) এবং ফাজিল ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী জাহেদুল ইসলাম (২০)কে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ আবদুল গফুর রিজভী জানান, বিগত ২৫ আগস্ট কিছু বহিরাগত মানুষ ও মাদরাসার কতিপয় শিক্ষার্থী অফিস ঘেরাও করে তাকে লিখিত পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন। ওই লিখিত পদত্যাগ পত্রে লেখা ছিল আমি অসুস্থতাজনিত কারণে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলাম। তখন বিষয়টি তিনি তৎকালীন সভাপতিকে জানিয়ে থানায় জিডি করেন এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। একই সাথে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা), চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, মাদরাসা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন। পরে তদন্তে জোরপূর্বক অধ্যক্ষ থেকে পদত্যাগপত্রে সই নেয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয়। এতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমি স্বপদে পুনর্বহাল হই। পরে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করলে ইউএনও গতকাল রবিবার অধ্যক্ষকের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নুরুচ্ছফাকে নির্দেশ দেন। গতকাল রবিবার তিনি মাদরাসায় গিয়ে অফিস কক্ষ তালাবদ্ধ পান এবং তার বিরুদ্ধে অশ্লীল ভাষায় শ্লোগান দেয় বহিরাগত ও মাদরাসার কতিপয় শিক্ষার্থী। তাছাড়া হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়।
এ ব্যাপারে চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুজ্জামান জানান, জাফরাবাদ ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষকে পুনর্বহাল ও মাদরাসায় যোগ দেয়ার বিষয় নিয়ে দুইপক্ষের সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয় এবং দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এ ব্যাপারে উভয়পক্ষকে শান্ত থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কোনো পক্ষই থানায় অভিযোগ দেয়নি বলে জানান তিনি।