চণ্ডী লাহিড়ী (১৯৩১– ২০১৮)। সাংবাদিক, ব্যঙ্গচিত্রী ও লেখক। তিনি ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ১৩ মার্চে বৃটিশ ভারতের নদীয়ার নবদ্বীপের বুড়ো শিবতলায় তাঁর মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মোহিনীমোহন লাহিড়ী ছিলেন বর্ধমান জেলার চণ্ডীপুরের বাসিন্দা। নবদ্বীপ হিন্দু স্কুলে তাঁর লেখাপড়ার হাতেখড়ি। নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে চলে আসেন কলকাতায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম.এ.করেন। দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে বাংলা কার্টুন চর্চার সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৫২ সালে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় দৈনিক লোকসেবক পত্রিকায় সাংবাদিকতার কাজে। এরপর ১৯৬১ সালে ব্যঙ্গচিত্রী হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায় কার্টুনচর্চা শুরু করেন। ১৯৬২ সালে যোগ দেন আনন্দবাজার পত্রিকায়। এছাড়াও সর্বভারতীয় নানা পত্রিকায় কার্টুন এঁকেছেন। তাঁর অসংখ্য ব্যঙ্গচিত্র ভারতের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। চণ্ডী লাহিড়ীর সৃষ্ট পকেট কার্টুন ‘তির্যক‘ ও ছোটোদের জন্য সৃষ্ট কমিকস ছিলো জনপ্রিতার তুঙে। রাজনৈতিক ও সামাজিক দুই ধরনের কার্টুন আঁকতেন চণ্ডী লাহিড়ী। তিনি কার্টুন নিয়ে বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। যার মধ্যে রয়েছে কার্টুনের ইতিবৃত্ত, বাঙালির রঙ্গব্যঙ্গচর্চা, গগনেন্দ্রনাথ: কার্টুন ও স্কেচ। তাঁর কার্টুন সংগ্রহের নাম চণ্ডী লুকস অ্যারাউন্ড এবং ভিজিট ইন্ডিয়া উইথ চণ্ডী। ব্যঙ্গচিত্রী হিসেবে ডেভিড লোয়ির অনুরাগী ভক্ত ছিলেন তিনি। কেবল ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কন নয়, নিজের দক্ষতায় অনেকগুলি অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রও নির্মাণ করেছেন তিনি, যার মধ্যে ‘হংসরাজ‘, ‘ধন্যিমেয়ে‘, ‘মৌচাক‘, ‘চারমূর্তি‘ প্রভৃতি খুবই বিখ্যাত। তাঁর মেয়ে তৃণার সঙ্গে যৌথভাবে ‘মানুষ কি করে মানুষ হল’ নামে তাঁর একটি নৃবিজ্ঞান বিষয়ক কাজের জন্য দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে নরসিংহ দাস পুরস্কারে সম্মানিত হন চণ্ডী লাহিড়ী। ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি চণ্ডী লাহিড়ী মৃত্যুবরণ করেন।