আবদুল হক চৌধুরী। চট্টলতত্ত্ববিদ, গবেষক ও আঞ্চলিক ইতিহাস লেখক। তিনি চট্টগ্রাম, সিলেট এবং আরাকানের ইতিহাস সম্পর্কে গবেষণা করে খ্যাতি অর্জন করেন। ইতিহাসবিদ হিসেবে তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে একুশে পদক দেয়া হয়। আবদুল হক চৌধুরী ১৯২২ সালের ২৪ আগস্ট চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার নওয়াজিশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শরফুদ্দীন চৌধুরী ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার। রাউজান হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন করে আবদুল হক পিতার প্রতিষ্ঠিত নওয়াজিশপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন (১৯৪২-৪৩)। পরে চাকরি ছেড়ে তিনি ব্যবসা শুরু করেন এবং একইসঙ্গে বিদ্যাচর্চাও চালিয়ে যান।
প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চশিক্ষা না থাকলেও আবদুল হক চৌধুরী বাংলাদেশের আঞ্চলিক ইতিহাসচর্চায় যে অবদান রাখেন তা রীতিমতো বিস্ময়কর। রাউজান হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্রীশচন্দ্র চৌধুরীর প্রেরণায় তিনি প্রথম আঞ্চলিক ইতিহাস সম্পর্কে উৎসাহিত হন। এ বিষয়ে তিনি চট্টগ্রামের অপর কৃতী সন্তান আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের নিকট থেকেও অনুপ্রেরণা লাভ করেন। তারপর স্বীয় অঞ্চলের নশরত শাহের কোতোয়ালির ধ্বংসাবশেষ, ঈসা খাঁর দিঘি, আরাকানি দুর্গকোট এবং প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় বিভিন্ন পুরাকীর্তি তাঁকে এ সম্পর্কে আরও কৌতূহলী করে তোলে। তিনি একসময় চট্টগ্রাম, সিলেট, আরাকান ও ত্রিপুরার সামাজিক ও নৃতাত্ত্বিক তথ্য সংগ্রহ শুরু করেন এবং তার ভিত্তিতে উক্ত অঞ্চলের ইতিহাস রচনায় ব্রতী হন।
ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিষয়ে আবদুল হক চৌধুরী রচিত মোট এগারোটি গ্রন্থ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ‘চট্টগ্রামের ইতিহাস প্রসঙ্গ’, ‘চট্টগ্রামের সমাজ ও সংস্কৃতির রূপরেখা’, ‘চট্টগ্রাম-আরাকান’, ‘প্রাচীন আরাকান রোহাইঙ্গা, হিন্দু ও বড়ুয়া বৌদ্ধ অধিবাসী’ প্রভৃতি। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তিনি বহু প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আবদুল হক রাউজান অঞ্চলে সাংগঠনিক ভূমিকা পালন করেন। চট্টগ্রামের ইতিহাস গবেষণার জন্য তাঁকে ‘চট্টলতত্ত্ববিদ’ উপাধি দেওয়া হয়। ১৯৯৪ সালের ২৬ অক্টোবর আবদুল হক চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেন।