চট্টগ্রাম জেলার ১৫ উপজেলার ৪ হাজার ৩৮৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পঞ্চম–নবম শ্রেণির ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৩৩০ জন কিশোরী এবং স্কুল বহির্ভূত কমিউনিটির ১০ হাজার ২১৯ জন কিশোরীকে এইচপিভি (হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস) টিকা দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে।
গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এসব তথ্য জানান। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে চট্টগ্রাম জেলায় অনুষ্ঠিত হবে মাসব্যাপী জাতীয় হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকাদান ক্যাম্পেইন–২০২৪। এদিকে চট্টগ্রাম জেলার পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশন এলাকায়ও প্রায় ১ লাখ ৩৬ হাজার কিশোরীকে এইচপিভি দেওয়া হবে। গতকাল সকালে মেমন জেনারেল হাসপাতাল মিলনায়তনে এডভোকেসি সভায় এ তথ্য জানানো হয়। সাংদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বন্ধ্যাত্ব হতে পারে বলে যা ফেসবুকে ছড়ানো হচ্ছে সেটা অপপ্রচার। এইচপিভি টিকার এ ধরনের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। দেশে যখনই কোনো টিকা প্রোগ্রাম নেওয়া হয় একটা পক্ষ ভুল তথ্য দিয়ে মিডিয়াকে উত্তেজিত করে। এ ধরনের তথ্যের কোনো ভিত্তি নেই। এটা নতুন কোনো টিকা না। দেশে এ টিকা আগে থেকেই দেয়া হচ্ছে। আজকেও ফেসবুকে একটা নেগেটিভ স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছে। সেখানকার ওসি এবং ইউএনও মহোদয় নিশ্চিত করেছেন ওই মাদ্রাসায় সবাই টিকা দেবেন। এটা বাঁশখালীতে। কোভিড ভ্যাকসিন নিয়েও বিরাট আতঙ্ক ছিল শুরুতে। আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। এটা প্রথম না, আগে থেকে প্রাইভেটলি চালু আছে। ঢাকা বিভাগে পুরোপুরি এই টিকা চালু হয়েছে ২০২৩ সালে। এবার চট্টগ্রামসহ ৭টি বিভাগে ২৪ অক্টোবর থেকে শুরু হবে।
সিভিল সার্জন বলেন, শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া চার সপ্তাহে মোট ১৮ দিনে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির ছাত্রীদের (১০–১৪ বছর বয়সী) এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত কমিউনিটির ১০–১৪ বছর বয়সী কিশোরীদেরকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এইচপিভি টিকা দেয়া হবে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জন্ম নিবন্ধনের তথ্য দিয়ে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে টিকা দেয়ার সুযোগ পাবে। স্কুল বহির্ভূত কমিউনিটির কিশোরীরাও রেজিস্ট্রেশন করে স্থায়ী ইপিআই টিকা দান কেন্দ্রে টিকা দিতে পারবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ক্যান্সারে মৃত্যুর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয় জরায়ুমুখ ক্যান্সারে। একটি টিকা দিলেই এর ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এটা আগামী বছর থেকে রুটিন টিকার অংশ হয়ে যাবে।
অপরদিকে মেমন জেনারেল হাসপাতাল মিলনায়তনে এডভোকেসি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, সারাদেশের ন্যায় চট্টগ্রাম নগরীতেও আগামী ২৪ অক্টোবর হতে ১০ দিনব্যাপী জরায়ুমুখ ক্যান্সার টিকা প্রথম ডোজ এইচপিভি কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। এর আওতায় নগরীর সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত ৫ম থেকে ৯ম শ্রেণি পড়ুয়া ছাত্রীদের এই টিকা দেয়া হবে এবং পরবর্তীতে মহানগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে স্থায়ী ও অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে ৮ দিন ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী বিদ্যালয় বর্হিঃভূত কিশোরীদের টিকা প্রদান করা হবে। কোন কিশোরী যাতে টিকা গ্রহণ থেকে বাদ না পড়ে সেদিকে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাই। কারণ এইচপিভি টিকা কিশোরী মাতৃ মৃত্যুর ঝুঁকি হ্রাস করে।
তিনি জানান, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বিদ্যালয় ও বিদ্যালয় বর্হিঃভূত কিশোরীদের ১ লাক্ষ ৩৬ হাজার জরায়ুমুখ ক্যান্সারের টিকা ১ ডোজের এইচপিভি প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে।