চট্টগ্রামের ছেলে কায়সার এখন এএফসি প্রো লাইসেন্সধারী কোচ

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শনিবার , ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ

একজন ফুটবলারের জীবনে অনেক স্বপ্ন থাকে ভাল একজন কোচ হওয়ার। যদিও সব ভাল ফুটবলারের পক্ষে ভাল কোচ হওয়া সম্ভব হয়না। বিশ্বের অনেক বড় বড় ফুটবলার বড় কোচ হতে পারেনি। কিন্তু একজন সাধারণ মানের ফুটবলার বা ক্রিকেটার অনেক নামী দামি কোচ হয়ে সুনাম কুড়িয়েছেন। যার ফুটবল খেলেছেন দীর্ঘদিন ধরে তারা নিজেকে সব সময় ফুটবলের সাথে জড়িয়ে রাখতে চায়। আর তখন দুটি পথ খোলা থাকে। যার একটি কোচ হিসেবে থাকা আর অপরটি হচ্ছে সংগঠক হয়ে থাকা। তাই অনেকেই সংগঠক হয়ে থাকতে চায়। তবে চট্টগ্রামের অনেক ফুটবলার যারা জাতীয় পর্যায়ে খেলেছেন তাদের অনেকেই কোচিং পেশার সাথে যুক্ত হয়েছেন। আর তাদের মধ্যে অন্যতম মাসুদ পারভেজ কায়সার। খেলোয়াড় হিসেবে যেমন খেলেছেন দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তেমনি কোচ হিসেবেও নিজেকে নিয়ে গেছেন দেশের ফুটবলের একেবারে চুড়ায়। এশিয়ান ফুটবলের কোচদের সর্বোচ্চ সনদ এ এফ সি প্রো লাইসেন্স অর্জন করেছেন কায়সার কয়দিন আগে। দেশের মাত্র ছয়জন ফুটবল কোচ এই সনদ লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন। তাদের মধ্যে চট্টগ্রামের ছেলে কায়সার অন্যতম।

অবশ্য এই লাইসেন্স অর্জন করতে কায়সারকে পাড়ি দিতে হয়েছে অনেক পথ। খেলা ছেড়ে যখন কোচ হিসেবে আবির্ভূত হলেন তখন ২০০৯ সালে ইরানে একটি কোর্সের মাধ্যমে এশিয়ান কোচ হিসেবে ‘সি’ লাইসেন্স লাভ করে। এরপর ২০১১ সালে মালয়েশিয়ায় এএফসি ‘বি’ লাইসেন্স লাভ করেন। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার মাধ্যমে এএফসি ‘এ’ লাইসেন্স লাভ করেন কায়সার। এরপর আরো সামনে যায়ার পালা। বলা যায় একেবারে চুড়ায় উঠার পালা। আর সেটি করলেন এবারে। চট্টগ্রামের পাইওনিয়ার ফুটবল থেকে উঠে আসা ফুটবলার কায়সারের। তখন অবশ্য তাদের একটা গ্রুপ ছিল। আর তাদের প্রায় সবাই খেলেছে জাতীয় দলে। চট্টগ্রামের গন্ডি পেরিয়ে ঢাকায়ও বড় বড় দলগুলোতে রাজ করেছেন কায়সাররা। মোহামেডান, আবাহনী, মুক্তিযোদ্ধা, শেখ জামাল কিংবা শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের মত দলেও খেলেছেন কায়সার এবং তার বন্ধুরা। ২০০৯ সালে খেলা শেষ করে কায়সার যোগ দেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে। সেখান থেকে তার কোচিং জীবনও শুরু।

ফুটবল ফেডারেশনে চাকরি করতে গিয়ে যুবকদের নিয়ে কাজ করেন কায়সার। ২০১৫ সালে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের সহকার্রী কোচের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের হেড কোচ। ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ছিলেন শেখ রাসের ক্রীড়া চক্রের সহকারী কোচ। এরপর ২০২২ সালে যোগ দেন ঢাকার ফুটবলে সাড়া জাগানো নতুন দল ফরটিস এস সি লিঃ এ। এখনো পর্যন্ত সে দলের হয়েই কোচিং করাচ্ছেন কায়সার। পাশাপাশি ২০১৪ সাল থেকে জাতীয় দলেও হয়েও কাজ করছেন। এবারে যেমন অনূর্ধ্ব২৩ জাতীয় দল নিয়ে থাইল্যান্ড যাচ্ছে এশিয়া কাপে। খেলোয়াড়ী জীবনের মত কোচিং জীবনটাকে নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে নিয়ে ফেলেছেন কায়সার। নিজের কোচিং ক্যারিয়ারটাকে আরো অনেক লম্বা করতে চান কায়সার। আর সেজন্য কোচ হিসেবে সব ধরনের পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়া যেকোন দেশের জাতীয় দলের কোচের দাািয়ত্ব পালন করতে হলে এই প্রো লাইসেন্স থাকতে হবে। আর আগামীতে হয়তো ঘরোয়া ফুটবলেও এই প্রো লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করতে পারে বাফুফে। আর সে ক্ষেত্রে সবার আগে নিজেকে এগিয়ে রাখলেন কায়সার। বিশ্বের অনেক নামী দামি কোচকে অনুসরণ করেন কায়সার। তাদের মধ্যে স্যার আলেক্স ফার্গুসন, হোসে মরিনহো, ক্লফ কিংবা গার্দিওলা। আবার দেশে মারুফুল হক, সাইফুল বারী টিটু কিংবা জুলফিকার মাহমুদ মিন্টুদের কোচিং দেখে অনুপ্রাণিত হন। তবে কায়সারের তারই ক্যারিয়ারের শুরু দিকের কোচ চট্টগ্রামের আরেক কৃতী কোচ নজরুল ইসলাম লেদু। তার কাছ থেকেই ফুটবলারের পাশাপাশি কোচ হিসেবেও অনেক কিছু শিখেছেন বলে জানালেন কায়সার। তবে চট্টগ্রামের একজন সন্তান হিসেবে এশিয়ান ফুটবলের কোচদের সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করায় নিঃসন্দেহে গর্বিত চট্টগ্রামও। চট্টগ্রামবাসীর নানা অর্জনের খাতায় যোগ হলো কায়সারের এই অর্জনও।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশ্রীলঙ্কা ছেড়ে এখন পাকিস্তানে টাইগাররা
পরবর্তী নিবন্ধগুয়াতেমালায় ডেঙ্গু, জরুরি অবস্থা ঘোষণা