গ্যাস সংকট এবং যান্ত্রিক ত্রুটিতে চট্টগ্রামের চারটি সার কারখানা বন্ধ আছে। এর ফলে চট্টগ্রাম থেকে সারের যোগানে ধস নেমেছে। এতে করে দেশের কৃষি সেক্টরে সার সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের চারটি কারখানা থেকে প্রতিদিন ৪ হাজার টনের বেশি সার যোগানোর রেকর্ড থাকলেও এখন গড়ে হাজার–বারোশ টনে নেমে এসেছে। ঘোড়াশাল থেকে সার এনে সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে চট্টগ্রাম থেকে। চট্টগ্রামের ৪টি কারখানা একযোগে বন্ধ থাকায় কৃষি সেক্টরে সার সরবরাহ নেটওয়ার্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশের কৃষি উৎপাদনের প্রধান উপকরণ হচ্ছে সার। দেশে বর্তমানে প্রায় ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টন রাসায়নিক সারের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ২৬ লাখ ৫০ হাজার টন ইউরিয়া সার ব্যবহৃত হচ্ছে। পাশাপাশি ৭ লাখ টন টিএসপি, ৭ লাখ টন এমওপি এবং সাড়ে ১৬ লাখ টন ডিএপি সার ব্যবহার করা হয়।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে সার ব্যবহারের ফলে জমির চরিত্র পাল্টে গেছে। সার ব্যবহার না করে কিংবা হ্রাস করে কৃষিক্ষেত থেকে প্রত্যাশিত ফলন পাওয়ার কথা চিন্তাও করা যায় না। এতে করে কৃষির ভর মৌসুমে সারে সংকট তৈরি হয়। প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকেরা ধার করে হলেও সময়মতো জমিতে সার দেওয়ার জন্য মরিয়া থাকেন।
চট্টগ্রামের বহুজাতিক সার কারখানা কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি (কাফকো) এবং বিসিআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডে (সিইউএফএল) উৎপাদিত সার দেশের নানা অঞ্চলে পরিবহন করা হয়। এর মধ্যে কাফকো থেকে বছরে গড়ে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টন সার বিভিন্ন গুদামে স্থানান্তর করা হয়। বিসিআইসির নিয়োগকৃত পরিবহন ঠিকাদাররা মূলত কাফকোর সার বিভিন্ন বাফার ও কারখানা গুদামে স্থানান্তর করেন। ওখান থেকে পরে ডিলারের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়। চট্টগ্রাম থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ২ হাজার টন সার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহন করার কথা। স্বাভাবিক অবস্থায় দুই হাজার টনের বেশি সার পরিবাহিত হয়। কিন্তু চট্টগ্রামে সার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে সারের যোগান কমে গেছে।
গ্যাস সংকট এবং যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে চট্টগ্রামের কাফকো এবং সিইইউএফএল কারখানায় সার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে সিইউএফএল যান্ত্রিক ত্রুটিতে এবং কাফকো গ্যাসের অভাবে বন্ধ। ডিএপি–১ এবং ডিএপি–২ সার কারখানার উৎপাদনও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ রয়েছে। বছরের বেশিরভাগ সময় ডিএপি–১ এবং ডিএপি–২ বন্ধ থাকে।
নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতির কারণে সিইউএফএল শেষ হতে চলেছে মন্তব্য করে সূত্র বলেছে, নানাভাবে লুটের শিকার হওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত এই কারখানা বছরের বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকছে। গ্যাস থাকলে যান্ত্রিক ত্রুটি, ত্রুটি সারালে গ্যাস নেই। এক দুষ্টচক্র সম্ভাবনাময় কারখানাটিকে ধংস করে দিচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, সিইউএফএল বা কাফকোতে উৎপাদন নেই। বর্তমানে আশুগঞ্জ থেকে সার এনে সিইউএফএল থেকে সরবরাহ দিয়ে নেটওয়ার্ক সচল রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শ্রমিক–কর্মচারীকে বসিয়ে রেখে বেতন–ভাতার যোগান দেওয়া হচ্ছে।