চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আয়োজনে একুশে বইমেলা স্থগিত করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আগামী ২৯ মার্চ এ বইমেলা শুরু হওয়ার কথা ছিল।
আজ শনিবার (২৭ মার্চ) এক সংবাদ সম্মেলনে মেলা স্থগিতের পাশাপাশি নভেম্বরে বইমেলা আয়োজনের কথা জানান মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। বিডিনিউজ
গত ২ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়েছিল, ১৫ দিনের বইমেলা শুরু হবে ২৩ মার্চ কিন্তু মেলার জন্য নির্ধারিত এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম সংলগ্ন মাঠে জেলা প্রশাসন উন্নয়ন মেলার আয়োজন করে ২৭ ও ২৮ মার্চ।
এরপর একুশে বইমেলা পিছিয়ে ২৯ মার্চ থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়। শনিবার মেলা স্থগিত করা হলো।
মেলা আয়োজন বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন হলেও শনিবার বিকালে পুরনো নগর ভবনে অনুষ্ঠানের শুরুতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা মেলা কমিটির সদস্য সচিব সুমন বড়ুয়া সংক্রমণ পরিস্থিতি তুলে ধরে এ বিষয়ে উপস্থিতদের মতামত জানতে চান।
এসময় মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “সংক্রমণ বাড়ছে। আমরা সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে সচেতন করছি। এখন বইমেলা আয়োজন করতে গিয়ে যেন কোনো ব্যাপারে প্রশ্নবিদ্ধ না হই।”
এরপর আবীর প্রকাশনীর নূরুল আবছার বলেন, “ঢাকা বইমেলায় অনেক প্রকাশনীর স্টলে ১০-১২ দিনে পাঁচ হাজার টাকার বইও বিক্রি হয়নি। প্রকাশকরা লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা নানামুখী চাপে আছি।”
মেয়র রেজাউল করিম তার মতামত জানতে চাইলে নূরুল আবছার বলেন, “কোনো অবস্থাতেই বইমেলা করা উচিত নয়।”
মেলার উদ্যোক্তা সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদের পক্ষে মেলা আয়োজক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল উদ্দিন বলেন, “দুর্ভাগ্য, করোনা পরিস্থিতির কারণে ফেব্রুয়ারিতে মেলা আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। ২৩ মার্চ মেলা শুরু হলে এক সপ্তাহ হয়ে যেত। অনিবার্য কারণে হয়নি। ঢাকার প্রকাশকদের সাথে কথা হয়েছে। প্রতিদিন পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। তারাও বলেছেন পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে সরকারি কোনো ঘোষণা আসতে পারে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ঈদের পর মাসব্যাপী মেলা করা যেতে পারে।”
এবারের মেলায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের ১২৮টি প্রকাশনা সংস্থা অংশগ্রহণের কথা ছিল যেগুলোর মধ্যে ৮০টি ঢাকার।
এরপর আরও কয়েকজন সংবাদকর্মী ও সাংস্কৃতিক সংগঠক মেলা স্থগিতের প্রস্তাব করেন।
সাংস্কৃতিক সংগঠক দেওয়ান মকসুদ রোজার ঈদের পর বর্ষা শুরু হবে উল্লেখ করে সবদিক বিবেচনায় নভেম্বরে মেলা আয়োজনের প্রস্তাব করেন।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও লেখক শুকলাল দাশ মেলা স্থগিত করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেন, “মেলার সাথে সম্পৃক্ত নন এমন অনেকে এখানে এসেছেন। আজ মেলার সংবাদ সম্মেলন করার কথা ছিল অথচ এসে দেখলাম অন্য পরিস্থিতি। স্বাস্থ্যবিধির কথা বলা হচ্ছে, ঢাকা বইমেলা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের সাথে বৈঠকে জেলা প্রশাসক বলেছিলেন, ২৩ মার্চ মেলা শুরু করে মাঝের ২৭ ও ২৮ মার্চ বন্ধ রেখে পরে ২৯ মার্চ থেকে আবার মেলা করতে। তখন সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদের জামাল উদ্দিন সেটা মানেননি।”
সাংস্কৃতিক সংগঠক বিশ্বজিৎ পাল বলেন, “স্বাস্থ্যবিধি মেনেই মেলা করা যায়। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে চট্টগ্রামে তেমন কোনো আয়োজন নেই। এখন বইমেলাও স্থগিত করা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলন ডেকে যেভাবে মতামত চাওয়া হচ্ছে এবং যারা মতামত দিচ্ছেন তাতে মনে হচ্ছে এটা পূর্ব থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া।”
মেলা কমিটির আহ্বায়ক কাউন্সিলর নেছার উদ্দিন আহমদ মঞ্জু বলেন, “ঢাকা বইমেলায় জন সমাগম নেই। প্রকাশকরা মেলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কনফিউশন নিয়ে করার চেয়ে পরে করাটা কী উত্তম নয়? উন্নয়ন মেলার যে অবকাঠামো সেগুলো সরাতেও সময় লাগবে।”
শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া বলেন, “ঢাকা থেকে আমন্ত্রিত অতিথিরা আসতে চাইছেন না কোভিড পরিস্থিতির কারণে। সব প্রস্তুতি শেষ। মেলা না হলে সিটি করপোরেশনও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে।”
সবশেষে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে, সবাই চিন্তিত। সরকার, প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে, নির্দেশনাও জারি করা হচ্ছে অনুষ্ঠানে বেশি লোক সমবেত না হতে। মেলাকে সুন্দর সমৃদ্ধ করতে হবে। সবাই এগিয়ে না এলে মেলার অঙ্গহানি হবে। পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে আমরা সবার মতামত চাইছি। মেলা বন্ধের পক্ষপাতী আমি নই। হয়ত একটু পিছিয়ে নিতে হবে। দোটানা না রেখে আনন্দঘন মেলা করতে চাই।”
বোধনের সভাপতি আবদুল হালিম দোভাষ নভেম্বরে মেলা আয়োজনের প্রস্তাব করেন। পাশাপাশি ডিসেম্বরে বিজয় মেলা শুরুর আগেই যাতে বইমেলা শেষ করা যায় সেই প্রস্তাবনাও দেন।
সবশেষে মেয়র রেজাউল করিম নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে মেলা আয়োজনের বিষয়ে সম্মত হন।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হোসাইন কবীর, লেখক মাসুম চৌধুরী, সাংবাদিক আল রাহমান বক্তব্য রাখেন।