চট্টগ্রামে ১১ নমুনার মধ্যে আটটিতে ওমিক্রনের অস্তিত্ব

২৫ ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২১ জানুয়ারি, ২০২২ at ১১:০১ অপরাহ্ণ

ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ পরবর্তী চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তদের প্রায় ৭৩ শতাংশের শরীরে ভাইরাসের আফ্রিকা ধরন ওমিক্রনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। ২৫ ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সংগ্রহ করা ১১টি পজিটিভ নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সে এ তথ্য উঠে এসেছে। ১১টির মধ্যে ৮টি নমুনায় ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। আর বাকি তিনটি নমুনায় মিলেছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব। হিসেবে এই সময়ে আক্রান্তদের ৭৩ শতাংশের শরীরে ওমিক্রন ধরন শনাক্ত হয়েছে। অবশ্য, নভেম্বর-ডিসেম্বরে আক্রান্তদের প্রায় শতভাগের শরীরেই মিলেছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব। নভেম্বর থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৯টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সে শতভাগের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল থেকে সংগৃহীত এসব নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সের জন্য ঢাকার আইসিডিডিআরবি ল্যাবে পাঠান চট্টগ্রামের একদল গবেষক। সেখানেই চট্টগ্রামের মোট ৩০টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়। গতকাল (২০ জানুয়ারি) সার্স কভ-২ এর জিনোম সিকোয়েন্সের আন্তর্জাতিক ডাটাবেজ জার্মানির ‘গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডাটায়’ (জিআইএসএইড) এ সংক্রান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
ফলাফলে দেখা গেছে, ২০২১ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংগ্রহ করা ১৯ নমুনার শতভাগই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। তবে ২৫ ডিসেম্বর পরবর্তী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সংগ্রহ করা ১১ নমুনার ৮টিতে ভাইরাসের ওমিক্রন ধরণের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। শতকরা হিসেবে যা ৭৩ শতাংশ। বাকি ৩টি নমুনায় মিলেছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব।
এদিকে, ২ টি নমুনায় ওমিক্রনের সামপ্রতিক ধরণ ‘বিএ২’ বা ‘স্টেলথ ওমিক্র’র অস্তিত্ব পাওয়া গেছে বলে ফলাফলে জানানো হয়েছে। ‘বিএ২’ শনাক্তকরণের এ তথ্য চট্টগ্রামে এটি-ই প্রথম বলে দাবি করেছেন গবেষকরা। যুক্তরাষ্ট্রের টেঙাস ও হিউস্টন, ভারত, চীন ও ওমানে এই (বিএ২) ভ্যারিয়েন্টটি পাওয়া গেছে।
গবেষকরা জানান, ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীদের গলাব্যথা ও গলার স্বর বিকৃত হওয়ার উপসর্গ রয়েছে। প্রায় ৯০ ভাগ রোগীর মধ্যেই এ লক্ষণ পাওয়া গেছে। এছাড়া ৮৫ ভাগ রোগীর শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা ও মাথাব্যথা এবং ৮০ ভাগের জ্বরের উপসর্গ দেখা যায়। এ গবেষক দলের নেতৃত্বে রয়েছেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. এইচএম হামিদুল্লাহ মেহেদী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক ড. আদনান মান্নান।
গবেষক দলে আরো রয়েছেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও করোনা টিমের ফোকাল পারসন ডা. আব্দুর রব মাসুম, মা ও শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সঞ্জয় বিশ্বাস ও ডা. নাহিদ সুলতানা, আইসিডিডিআরবি’র ভাইরোলজি বিভাগের বিজ্ঞানী ড. মুস্তাফিজুর রহমান এবং ড. মোহাম্মদ এনায়েত হোসেন। গবেষণা সহকারী হিসেবে ছিলেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ডা. রাজদ্বীপ বিশ্বাস, ডা. মিনহাজুল হক এবং মা ও শিশু হাসপাতালের ডা. ফাহিম হাসান রেজা। সিকুয়েন্সিংয়ের সামগ্রিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন আইসিডিডিআরবির ভাইরোলজি ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা। গবেষণায় সহায়তায় ও পৃষ্ঠপোষকতা করেছে কানাডার ডালহৌসি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি অব ইমার্জিং ইনফেকশাস ডিজিজ। তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করেন অধ্যাপক ডেভিড কেলভিন এবং আব্দুল্লাহ মাহমুদ আল রাফাত।
গবেষক দলের নেতৃত্বদানকারী ডা. হামিদুল্লাহ মেহেদী বলেন, আমাদের চেষ্টা ছিল চট্টগ্রামে ওমিক্রনের প্রভাব কেমন তা জানা। মাত্র ৩০টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করে আমরা এ তথ্য পেয়েছি। তবে এত কম সংখ্যক নমুনার বিশ্লেষণে প্রকৃত চিত্র পাওয়া সম্ভব নয়। প্রকৃত চিত্র পেতে হলে আরো ব্যাপক সংখ্যায় নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করতে হবে।
এরইমাঝে ভাইরাসের ওমিক্রন ধরণটি ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে বলে মনে করেন বিআইটিআইডি ল্যাব প্রধান ডা. শাকিল আহমেদ। যেভাবে র‌্যাপিড সংক্রমণ এবং একই পরিবারের সবাই আক্রান্ত হচ্ছেন, তা ওমিক্রন ধরণেই হয়ে থাকে জানিয়ে ডা. শাকিল আহমেদ বলেন, অন্যান্য ধরণের চেয়ে ওমিক্রন কয়েকগুণ বেশি সংক্রামক। খুব দ্রুত ছড়ায়। এই সময়ে এসে সংক্রমণের যে চিত্র দেখছি, তা ওমিক্রণের কারণেই বলে আমরা মনে করছি। চট্টগ্রামে আক্রান্তদের সিংহ ভাগই ভাইরাসের এ ধরণে (ওমিক্রনে) আক্রান্ত বলে আমাদের ধারণা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নুসরাত মার্কিন বিচারপতি মনোনীত
পরবর্তী নিবন্ধসামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার বন্ধে আরো তৎপর হোন