বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হামলায় দৃষ্টিশক্তি হারানো মাদ্রাসার একজন ছাত্র হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকসহ ১৬৭ জনকে আসামি করে চট্টগ্রামে মামলা করেছেন। হামলায় আহত মাদ্রাসার ছাত্র সাইফুদ্দীন মুহাম্মদ এমদাদ গত মঙ্গলবার রাতে নগরীর খুলশী থানায় এ মামলা করেন। তবে মামলাটির তথ্য সামনে আসে গতকাল বৃহস্পতিবার। খুলশী থানার ওসি আফতাব হোসেন মামলা হওয়ার তথ্য দিয়ে বলেন, ১৬৭ জনকে আসামি করে মামলাটি করা হয়েছে। তদন্ত করে এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মামলার বাদী এমদাদ ঢাকা সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার আলিম বিভাগের শিক্ষার্থী। এজাহারে তার বর্তমান ঠিকানা হিসেবে নগরীর পাঁচলাইশ থানার আল আমিন হাউজিং সোসাইটি দেওয়া হয়েছে। তিনি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার হারামিয়া ইউনিয়নের মো. বেলালের ছেলে। খবর বিডিনিউজের।
আসামির তালিকায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ ১৬৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন– সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক সংসদ সদস্য এম এ মোতালেব, নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন নদভী ও এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এবং তার ছেলে ফারাজ করিম চৌধুরী। মামলার আসামিদের মধ্যে আছেন– চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও এম মনজুর আলম, সাবেক কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, শৈবাল দাশ সুমন, বিজয় কিষাণ চৌধুরী ও মোবারক আলী। এছাড়া মামলায় আসামি করা হয়েছে জাতীয় পার্টির নেতা সোলায়মান আলম শেঠ, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি সুকুমার চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকদের।
মামলায় আসামি তালিকায় আরো আছেন–হামীম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য এ কে আজাদ, পিএইচপি গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, তার ছেলে আমির হোসেন সোহেল, ইকবাল হোসেন চৌধুরী ও আকতার পারভেজ চৌধুরী, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মাহবুবুল আলম ও তার মেয়ে রাইসা মাহবুব এবং জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমাস শিমুল। মামলায় একুশে টেলিভিশন চট্টগ্রামের সাবেক আবাসিক সম্পাদক রফিকুল বাহার, দৈনিক আমাদের সময়ের ব্যুরো প্রধান হামিদ উল্লাহ, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মো. মহিউদ্দিন এবং ডিবিসি টেলিভিশনের ব্যুরো প্রধান মাসুদুল হককে আসামি করা হয়েছে। তবে মামলায় তাদের সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া হয়নি।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরীর নিউ মার্কেট মোড়ে ছাত্র–জনতার আন্দোলনে অংশ নেন মাদ্রাসা ছাত্র এমদাদ। সেদিন আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগ–যুবলীগের নেতাকর্মীরা গুলিবর্ষণ করলে তিনি গুরুতর আহত হন। পায়ে আঘাত পেয়েও পরদিন ৫ আগস্ট নগরীর ওয়াসার মোড়ে মিছিল করার সময় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের আরেক দফা আক্রমণের শিকার হন।
এজাহারে অভিযোগ করা হয়, এতে এমদাদের মাথা, মুখ ও চোখসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে ছররা গুলির আঘাত লাগে। আহত অবস্থায় তিনি শুরুতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এরপর বেসরকারি শেভরন হসপিটাল, ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতাল ও সবশেষ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তবে চিকিৎসার পরও তার ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি ফেরেনি এবং বাম চোখের দৃষ্টিও কমে আসছে বলে এজাহারে বলা হয়।
হত্যাচেষ্টার এ মামলার আসামিদের মধ্যে প্রথম ১৭ জন নির্দেশদাতা, পরের ৭০ জন সরাসরি হামলায় অংশগ্রহণকারী এবং বাকি আসামিরা হামলার অর্থদাতা, পরামর্শদাতা ও সহযোগিতাকারী বলে এজাহারে তুলে ধরা হয়।