চট্টগ্রামে কোরবানির পৌনে তিন লাখ কাঁচা চামড়া বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন আড়তদাররা। তবে এবার ঢাকার কোনো ট্যানারি মালিক চট্টগ্রামের আড়তদারদের কাছ থেকে চামড়া কেনার জন্য আসেনি। লোকাল পার্টি এসে আড়তদারদের কাছ থেকে চামড়া নিয়ে গেছেন বলে জানান আড়তদার সমিতির নেতারা।
চট্টগ্রামে কাঁচা চামড়া আড়তদারদের অভিযোগ, সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আড়তদারদের বিক্রির জন্য প্রতিফুট গরুর চামড়ার দাম ৬০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও ঢাকার কোনো ট্যানারি মালিক চামড়া কেনার জন্য না আসায় এই দামে বিক্রি করতে পারেননি তারা। এবার আড়তদারদের কাছ থেকে প্রায় চামড়া লোকাল পার্টি এসে কিনে নিয়ে গেছেন। লোকাল পার্টির কাছে প্রতিফুট লবণ দেয়া কাঁচা চামড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে; যার কারণে এবারও অনেক আড়তদার লোকসানের মুখে পড়বে বলে জানান চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির আহ্বায়ক আবদুল জলিল।
চট্টগ্রামের শুধুমাত্র রিফ লেদার ছাড়া আর কোনো ট্যানারি না থাকায় ঢাকার ট্যানারির ওপর ভরসা করতে হয় চট্টগ্রামের আড়তদারদের। চট্টগ্রামের আতুরার ডিপো, মুরাদপুর–বিবিরহাট, হামজারবাগের আড়তগুলোতে প্রতি বছর ৪ লাখ থেকে সাড়ে ৪ লাখ কোরবানির চামড়া সংগ্রহ করে থাকেন আড়তদাররা।
এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির আহ্বায়ক আবদুল জলিল গতকাল আজাদীকে বলেন, প্রতি বছর আমরা ঢাকার ট্যানারি মালিক এবং চট্টগ্রামের রিফ লেদারের কাছে সাড়ে ৩ লাখ থেকে ৪ লাখের মত কাঁচা চামড়া বিক্রি করে থাকি। কিন্তু এ বছর ঢাকার কোনো ট্যানারি মালিক চট্টগ্রাম থেকে চামড়া কেনার জন্য আসেনি; শুধুমাত্র ঢাকার রাইসা ট্যানারি মালিক এসে ৩০ থেকে ৪০ হাজারের মত চামড়া কিনেছেন। আর কোনো ট্যানারি মালিক চট্টগ্রামের আড়তদারদের কাছ থেকে চামড়া কেনার জন্য আসেনি। সব আমরা লোকাল পার্টির কাছে বিক্রি করেছি। যারা আমাদের কাছ থেকে কিনে ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করে–এসব লোকাল পার্টি এসে আমাদের কাছ থেকে মাল নিয়ে গেছেন। তারা অর্ধেক টাকা আমাদেরকে দিয়েছেন আর অর্ধেক বাকি। নগরীর প্রায় সব চামড়া বিক্রি শেষ। এ বছর সব মিলে আড়াই লাখ থেকে পৌনে তিন লাখের মত কাঁচা চামড়া বিক্রি হয়েছে। গ্রামে–গঞ্জের চামড়াগুলো আমাদের কাছে আসেনি। গ্রামে–গঞ্জের গুলো সেদিক দিয়ে বিক্রি হয়ে গেছে।
আবদুল জলিল বলেন, সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চামড়া নির্ধারণ করে দিলেও লোকাল পার্টির কাছে আমাদের ৩০ থেকে ৪০ টাকার চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মুসলিম উদ্দিন বলেন, আড়তদাররা সারা বছর শুধুমাত্র এই কোরবানি ঈদের জন্য অপেক্ষা করেন এবং তাদের আত্মীয়–স্বজন বন্ধু–বান্ধবদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে কোরবানির কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেন। চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে প্রচুর পরিমাণ লবণ ও শ্রমিকের দরকার হয়। একদিকে লবণের দাম বৃদ্ধি, অন্যদিকে শ্রমিকের বাড়তি মজুরির কারণে আড়তদাররা প্রতি বছরই লোকসানের মুখে পড়ে। এবছরও সরকার নির্ধারিত দামে আড়তদাররা চামড়া সংগ্রহ করতে না পেরে আড়তদাররা ক্ষতির মুখে পড়বে। তিনি বলেন, প্রতি পিস গরুর চামড়া গড়ে ৮০০ টাকা এবং ছাগল ও মহিষের চামড়া গড়ে ১০০ টাকায় বিক্রি করলে সাড়ে ২৮ কোটি থেকে ৩০ কোটি টাকার চামড়া বিক্রি হবে চট্টগ্রামে।
আড়তদার সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, এবার চট্টগ্রাম মহানগরী ও ১৫ উপজেলায় ৪ লাখ ১৫ হাজার ৩৫১ পিস কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেছিলেন আড়তদাররা। চার লাখ ১৫ হাজার ৩৫১ পিস পশুর চামড়ার মধ্যে গরুর চামড়া তিন লাখ ১৫ হাজার ৩৫১ পিস। মহিষের চামড়া ১০ হাজার ৫০০ পিস। ছাগলের চামড়া ৫২ হাজার ৫০০ পিস।