করোনা আক্রান্তদের মৃত্যুর সংখ্যা হঠাৎ বেড়েছে চট্টগ্রামে। নভেম্বর এক মাসের তুলনায় চলতি মাসের ২২ দিনেই মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আর অক্টোবরের তুলনায় মৃত্যুর এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিনগুণে। তবে ডিসেম্বর শেষ নাগাদ এ পার্থক্য আরো বাড়তে পারে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্মতারা।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত ৩৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রামে। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৃত্যুর এ সংখ্যা ছিল ২৯২ জন। হিসেবে সেপ্টেম্বর পরবর্তী দুই মাস ২২ দিনে ৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রামে। এর মধ্যে অক্টোবর ১ মাসে মারা গেছেন ১১ জন। নভেম্বরে মারা যান ১৬ জন। তবে চলতি ডিসেম্বর মাসের ২২ দিনেই মৃত্যুর সংখ্যা ৩০ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মাঝে সর্বশেষ ১০ দিনেই মারা গেছেন ১৭ জন। হিসেবে নভেম্বরের তুলনায় চলতি মাসের ২২ দিনেই দ্বিগুণ মৃত্যু হয়েছে। আর অক্টোবরের তুলনায় এ সংখ্যা তিনগুণ। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলছেন- কিছুদিন সংক্রমণ কমলেও গত কয়েক মাস থেকে তা আবার বেড়েছে। সংক্রমণের হার বাড়ার সাথে সাথে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। এরপরও মানুষের মাঝে সচেতনতার অভাব দেখা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য বিধি তো দূরের কথা মাস্ক পরতেও যেন চরম অনীহা। প্রশাসনের বিভিন্ন অভিযানের মাধ্যমেও মানুষকে সচেতন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন সময় জরিমানাও করা হচ্ছে। তবুও মাস্ক পরানোটা যেন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এতে করে সংক্রমণ বাড়ছে। মানুষ বুঝে-না বুঝে নিজের পাশাপাশি অন্যেরও ঝুঁকির কারণ হচ্ছেন। সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন বয়স্করা। কারণ আক্রান্তদের মাঝে বয়স্কদের মৃত্যুর হারই সবচেয়ে বেশি।
সিভিল সর্জন কার্যালয়ের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়- আক্রান্তদের মাঝে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ষাটোর্ধ্ব বয়সীদের। এই বয়সী ১৮৭ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রামে। যা মোট মৃত্যুর প্রায় ৫৪ শতাংশ। এরপর বেশি মৃত্যু হয়েছে ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের। এই (৫১-৬০ বছর) বয়সী ৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। বয়স্ক ব্যক্তিরাই বেশি ঝুঁকিতে মন্তব্য করে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলছেন- বয়স্করা করোনায় আক্রান্ত হলে তাঁদের জন্য ঝুঁকিটা বেশি। এছাড়াও যারা আগে থেকেই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন, তাদের জন্যও ঝুঁকিটা খুব বেশি। অনেকের ক্ষেত্রে বয়স ৪০ পার হতেই বিভিন্ন জটিলতায় আক্রান্ত হতে দেখা যায়। করোনায় আক্রান্ত হলে এই বয়সীদেরও ঝুঁকি কোনো অংশে কম নয়। তাই বয়স্কদের পাশাপাশি তুলনামূলক কম বয়সীদেরও সতর্ক থাকতে হবে। যাতে এই ভাইরাসের সংক্রমণের হাত মুক্ত থাকা যায়।
সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়- চট্টগ্রামে করোনায়
মৃতদের মাঝে ১ থেকে ১০ বছর বয়সী ৪ জন, ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী ৩ জন, ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ৫ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ১৮ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ৪৩ জন এবং ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর ৬১ থেকে তদুর্ধ্ব বয়সীদেরই মৃত্যু হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এই বয়সী (ষাটোর্ধ্ব) ১৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা মোট মৃত্যুর প্রায় ৫৪ শতাংশ।
এদিকে, নারীদের তুলনায় মৃত্যুর হার বেশি পুরুষের। করোনায় মৃত মোট ৩৪৯ জনের মাঝে পুরুষ মারা গেছেন ২৬৯ জন। শতকরা হিসেবে এটি মোট মৃত্যুর ৭৭ শতাংশের বেশি। আর আক্রান্তদের মাঝে নারীর মৃত্য হয়েছে ৮০ জনের। যা মোট মৃত্যুর প্রায় ২৩ শতাংশ।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী- করোনায় মৃতদের ৭১ শতাংশই মহানগরের। মহানগরে এ পর্যন্ত ২৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোতে মৃত্যু হয়েছে ১০১ জনের। হিসেবে করোনায় মোট মৃত্যুর ২৯ শতাংশ উপজেলাগুলোতে।
উপজেলাগুলোর মধ্যে হাটহাজারী ও সীতাকুণ্ডে মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। হাটহাজারীতে ১৭ এবং সীতাকুণ্ডে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এ পর্যন্ত। আর রাউজানে হয়েছে ১১ জনের। বাকি উপজেলাগুলোতে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ১০ এর নিচে। অন্যদিকে, মহানগরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হালিশহর ও কোতোয়ালী এলাকায়। হালিশহরে ২৭ এবং কোতোয়ালী এলাকায় ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। এছাড়া পাঁচলাইশে ১৫ জন, খুলশীতে ১৪ জন, চকবাজারে ১৩ জন, পাহাড়তলীতে ১১ জন এবং আকবরশাহ ও আগ্রাবাদে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মহানগরের বাকি এলাকাগুলোতে মৃতের সংখ্যা ১০ এর কম।
২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ১৭৮, মৃত্যু দুইজনের : এদিকে চট্টগ্রামে ১ হাজার ৫৮৩ টি নমুনা পরীক্ষায় গত মঙ্গলবার নতুন করে আরো ১৭৮ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষাকৃত নমুনায় ১১.২৪ শতাংশের পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে এদিন। নতুন শনাক্ত ১৭৮ জনসহ চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমিত শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ২৪১ জনে। শেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্তদের মাঝে আরো ২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এ নিয়ে আক্রান্তদের মাঝে ৩৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রামে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, মঙ্গলবারের ১ হাজার ৫৮৩টিসহ এ পর্যন্ত মোট ১ লাখ ৯৯ হাজার ১০৫টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে চট্টগ্রামে। এর মধ্যে করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে ২৯ হাজার ২৪১ জনের। হিসেবে চট্টগ্রামে করোনা শনাক্তের গড় হার ১৪.৬৮ শতাংশ। নতুন ২১৭ জনসহ এ পর্যন্ত ২৮ হাজার ১৮৮ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন বলেও জানিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। হিসেবে আক্রান্তদের ৯৬.৩৯ শতাংশ সুস্থ হয়ে উঠেছেন। মঙ্গলবার চট্টগ্রামে করোনা শনাক্ত ১৭৮ জনের মধ্যে ১৬১ জন মহানগরীর এবং ১৭ জন উপজেলা পর্যায়ের বাসিন্দা। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।