চট্টগ্রামে হৃদরোগীর চাপ বাড়লেও সে তুলনায় চিকিৎসার সক্ষমতা বাড়েনি। বেসরকারি বেশ কিছু হাসপাতালে হৃদরোগের চিকিৎসা চালু থাকলেও খরচের কারণে গরীব ও অসহায় রোগীরা সেখানে চিকিৎসা নিতে পারেন না। এসব রোগীদের একমাত্র ঠিকানা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগ। সেখানেও প্রায় সময় ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ তিনগুণ রোগীর ভর্তি থাকে। ফলে হৃদরোগ বিভাগের চিকিৎসকদের রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়। এছাড়া চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের দুটি ক্যাথ ল্যাবের মধ্যে একটি প্রায় তিন বছর ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। ফলে একটি মেশিন দিয়ে রোগীদের এনজিওগ্রাম ও হার্টে রিং লাগানোসহ যাবতীয় কাজ চালাতে হচ্ছে। এই মেশিনটি নষ্ট হয়ে গেলে রোগীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন বলছেন চিকিৎসকরা। অন্যদিকে চট্টগ্রামে হৃদরোগের বিশেষায়িত হাসপাতাল না থাকায় রোগীদের অনেকে ঢাকায় কিংবা দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে ছুটেন।
জানা গেছে, চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে চট্টগ্রাম নগর, বিভিন্ন উপজেলা, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজার ছাড়াও ফেনী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও বি. বাড়িয়ার একাংশের বিশাল জনগোষ্ঠী চিকিৎসা নিতে আসে। প্রায় ৪ কোটি মানুষের ভরসাস্থল হৃদরোগ বিভাগ। কিন্তু সে তুলনায় হৃদরোগ বিভাগের সুযোগ সুবিধা বাড়েনি। এখনো বিশাল সংখ্যক রোগীকে হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হয়। চট্টগ্রাম মেডিকেলের হৃদরোগ বিভাগের সক্ষমতা বাড়ানো গেলে রোগীরা আরো বেশি উপকৃত হবেন। বেসরকারি হাসপাতালে একজন রোগী যে চিকিৎসা পেয়ে থাকেন, সেই চিকিৎসার আার্থিকমূল্য হিসেব করলে চমেক হাসপাতালে তার খরচ পড়ে পাঁচ ভাগের এক ভাগ। ক্ষেত্রবিশেষে আরো কম।
জানতে চাইলে চমেক হাসপাতাল হৃদরোগ বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. আশীষ দে আজাদীকে বলেন, আমাদের হৃদরোগ বিভাগে প্রতিনিয়ত রোগীর চাপ বাড়ছে। সে তুলনায় সক্ষমতা বাড়েনি। আমাদের দুটি ক্যাথল্যাবের মধ্যে একটি দীর্ঘ সময় ধরে নষ্ট পড়ে আছে। শুনেছি, নতুন একটি মেশিন কেনা হচ্ছে। বর্তমানে বাধ্য হয়ে আমাদের একটি ক্যাথল্যাব মেশিন দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে। এ মেশিনটিতে একবার যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। একটি মেশিন দিয়ে কাজ চালাতে গিয়ে মেশিনের ওপর চাপ বাড়ছে। তাই এই মেশিন নষ্ট হলে কাজ একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে।
২০২২ সালের ২৫ নভেম্বর নগরীর ওআর নিজাম রোডে চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু হয়। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন নির্ধারিত জঙ্গল সলিমপুরে প্রায় পাঁচ একর জায়গায় চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশনের নিজস্ব হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সিসিইউ, ক্যাথল্যব, আইসিইউ, অপারেশন থিয়েটারসহ ৫০০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ আধুনিক হৃদরোগ হাসপাতাল গড়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. প্রবীর কুমার দাশ বলেন, হার্ট অ্যাটাক ও হৃদরোগের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা নিতে হয়। এখানে কালক্ষেপণে মৃত্যু ডেকে আনে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের হৃদরোগীদের চট্টগ্রামের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ সম্ভব নয়। তাই চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশনকে যত দ্রুত আধুনিক হৃদরোগের হাসপাতালে রূপ দেয়া হবে, তত দ্রুত চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষ উপকৃত হবে।
এদিকে বিশ্ব হার্ট দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আজ বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনা সভায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। বিশেষ অতিথি থাকবেন চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. ওমর ফারুক ইউসুফ ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম।