চট্টগ্রাম মহানগর এবং আশপাশের কয়েকটি উপজেলায় ডায়রিয়ার রোগীর চাপ বেড়েছে; পরীক্ষা করে তাদের অনেকের শরীরে কলেরার জীবাণু পাওয়া গেছে। চিকিৎসকরা বলছেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) এবং নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা এখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। মূলত অতিরিক্ত গরম, পানীয় জলের সমস্যা ও ওয়াসার পানিতে অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলে ধারণা করছেন তারা। ডায়রিয়া বাড়ার কারণ জানতে এবং বিস্তার রোধ করতে চট্টগ্রাম মহানগরী এবং কয়েকটি উপজেলায় কাজ করছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) কর্মকর্তারা। এ প্রতিষ্ঠানের ১২ সদস্যের একটি দল চলতি সপ্তাহে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে পানিসহ বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে। খবর বিডিনিউজের।
চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে বিআইটিআইডি ডায়রিয়াসহ সংক্রামক রোগের জন্য বিশেষায়িত একটি হাসপাতাল। বৃহস্পতিবারে সেখানে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৫৭ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে। সব মিলিয়ে সেখানে ভর্তি আছেন মোট ৬২ জন ডায়রিয়া রোগী।
বিআইটিআইডির সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশিদ বলেন, ‘মূলত ঈদের আগে থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। ঈদের সময়ে কিছু কম থাকলেও পরে আবার চিকিৎসা নিতে আসা ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এ সময়ে গড়ে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৬৫ জন রোগী ভর্তি ছিল। অথচ অন্য সময়ে এ সংখ্যা থাকত ২০ থেকে ২৫ জনের মধ্যে। এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বেশিরভাগই সীতাকুণ্ড ও শহরের বাসিন্দা। নগরীর হালিশহর, পতেঙ্গা, কাট্টলী, সিটি গেট এলাকার রোগীরা এখানে ভর্তি হচ্ছেন।’
তিনি বলেন, বিআইটিআইডিতে ‘ভিব্রিও কলেরি’ শনাক্তে নিয়মিত আরডিটি (র্যাপিড ডায়গনস্টিক টেস্ট) করা হয়। আর এই পরীক্ষার ফলে দেখা গেছে কলেরায় আক্রান্তের সংখ্যা এখন অন্য সময়ের প্রায় দ্বিগুণ।
ডা. মামুনুর রশিদ বলেন, আমরা বর্তমানে ডায়রিয়া রোগীদের মধ্যে কলেরার জীবাণুতে আক্রান্ত রোগীও পাচ্ছি। সাধারণ সময়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ১০ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে কলেরার জীবাণু মেলে। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে এ হার ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে। গত এক মাসে বিশেষায়িত এ হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত কোনো রোগী মারা যায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, এটি মূলত পানিবাহিত রোগ, গরম ও বর্ষাকালে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি ছিল ১৪০ জন। এর বাইরে আক্রান্ত ৪০ জন রোগী পর্যবেক্ষণে আছেন বলে জানান হাসপাতালিটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান। তিনি বলেন, আক্রান্তের সংখ্যা আগের চেয়ে কমছে। ভর্তি রোগীদের মধ্যে ২২ জন নগরীর এবং বাকিরা বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসেব অনুযায়ী, চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ২৬১ জন নতুন করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে পটিয়ায় ৫০, বোয়ালখালীতে ৩৫, চন্দনাইশে ৩৩, আনোয়ারা উপজেলায় আক্রান্ত ২৩ জন। পুরোনো রোগীদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২১৬ জন।
ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. ওয়াজেদ চৌধুরী অভি বলেন, ‘কয়েকটি উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলেও সামগ্রিকভাবে ডায়রিয়া পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে আইইডিসিআরের একটি দল ডায়রিয়ার কারণ অনুসন্ধানে কাজ শুরু করেছে। তারা আক্রান্ত এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করছে এবং এসব ঢাকায় নিয়ে পরীক্ষার পর প্রতিবেদন দেবে।’ অতিরিক্ত গরমের কারণে একং পানির সমস্যায় ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে বলে ধারণা তার।
গত বছর অগাস্টে নগরীর ইপিজেড, সল্টগোলা, হালিশহর, পতেঙ্গা, কাট্টলীসহ কিছু এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছিল। তখন আক্রান্ত রোগীদের নমুনায় ২৮ থেকে ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত কলেরার জীবাণু মিলেছিল। ডায়রিয়া ও কলেরা পানিবাহিত রোগ হওয়ায় পানি ফুটিয়ে পান করতে এবং খাবার খাওয়ার আগে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।