চট্টগ্রামে বড় বিনিয়োগ করতে চায় সিঙ্গাপুর

বে টার্মিনালের পাশাপাশি মাতারবাড়ি নিয়েও আগ্রহ । বিনিয়োগের ক্ষেত্র চিহ্নিত করতে কাজ করছে বাণিজ্য প্রতিনিধিদল

হাসান আকবর | রবিবার , ১৭ নভেম্বর, ২০২৪ at ৮:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে বড় ধরনের বিনিয়োগের আশা নিয়ে কাজ শুরু করেছে সিঙ্গাপুরের বাণিজ্য প্রতিনিধিদল। চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনালের পাশাপাশি মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নিয়েও তাদের আগ্রহ দেখা গেছে। ইতোমধ্যে সিঙ্গাপুরের একটি বাণিজ্য প্রতিনিধিদল চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা সফর করে বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিয়েছে।

সূত্রে জানা যায়, সিঙ্গাপুর বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বড় ধরনের বিনিয়োগের লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছে। ইতোমধ্যে সিঙ্গাপুর পোর্ট অথরিটি (পিএসএ) চট্টগ্রামের বে টার্মিনালে বিনিয়োগের লক্ষ্য নিয়ে নানামুখী প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সিঙ্গাপুর বন্দর কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি দেশটির ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতিরা চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করছে। এই লক্ষ্যে সিঙ্গাপুরের সাথে বাংলাদেশের ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ) স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে।

জানা যায়, তুলনামূলকভাবে ছোট একটি দ্বীপ রাষ্ট্র সিঙ্গাপুর বিশ্বের ৩২তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। দেশটির সাথে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের সিংহভাগই সিঙ্গাপুর বন্দর হয়ে বাংলাদেশে আসে। সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে সিঙ্গাপুরেরও রয়েছে বিনিয়োগের বিশাল সম্ভাবনা। বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে দুই দেশের মধ্যে এফটিএ স্বাক্ষরের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশ নিজ নিজ পক্ষে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করেছে।

সিঙ্গাপুর সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের একটি দল গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম সফর করে। তারা চট্টগ্রাম বন্দরের পাশাপাশি মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরও পরিদর্শন করেছে। বে টার্মিনালে বিনিয়োগের ব্যাপারে সিঙ্গাপুরের আগ্রহ আগে থেকেই। এখন নতুন করে মাতারবাড়িতে তারা কোনো বিনিয়োগ করতে চায় কিনা সেটা দেখার বিষয় বলে চট্টগ্রাম বন্দরের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, বাণিজ্য প্রতিনিধিদলটি মাতারবাড়ি পরিদর্শন করেছে। তারা এখনো স্পষ্ট করে কিছু না বললেও ওখানে কোন কোন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা যায় তা দেখেছে। জাপানি সহায়তায় মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মিত হচ্ছে। সেখানে বন্দরের মূল অবকাঠামোতে সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগের সুযোগ নেই। তবে বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসাবাণিজ্যে সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। প্রতিনিধিদলটি শিপিং বাণিজ্যে কী ধরনের বিনিয়োগ করা যায় তা চিহ্নিত করার জন্যই হয়তো গভীর সুমদ্র বন্দর এলাকা পরিদর্শন করেছে।

সংশ্লিষ্ট শিপিং বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সিঙ্গাপুর বন্দরই বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যবহার করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য নিয়ে আসা মাদার ভ্যাসেলগুলো চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত আসতে পারে না। এসব জাহাজ সিঙ্গাপুর বন্দরে অবস্থান করে। চট্টগ্রাম থেকে ফিডার ভ্যাসেলে কন্টেনার বোঝাই করে সেগুলো সিঙ্গাপুর, কলম্বো এবং পোর্ট কেলাংয়ের মতো বন্দরে নিয়ে মাদার ভ্যাসেলে তুলে দেওয়া হয়। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মিত হয়ে পুরোদমে অপারেশন শুরু করলে এখন যেসব জাহাজ বাংলাদেশে আসতে পারে না তার অনেকগুলো মাতারবাড়িতে নোঙর ফেলতে পারবে। এক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরের পরিবর্তে মাতারবাড়ি বন্দরের ব্যবহার বাড়বে। সবগুলো বিষয় দেখে সিঙ্গাপুরের বাণিজ্য প্রতিনিধিদল তাদের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা এবং বিনিয়োগের একটি রোডম্যাপ তৈরি করবে বলে সূত্রটি মন্তব্য করেছে।

সিঙ্গাপুরের বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ক্যাপ্টেন ফারুক। তিনি আজাদীকে বলেন, প্রতিনিধিদলটি বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেছে। বাংলাদেশের কোন কোন সেক্টরে কী ধরনের বিনিয়োগ সম্ভাবনা রয়েছে সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা তা খতিয়ে দেখছেন।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, একটি প্রতিনিধিদল এসে বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেছে। এটি খুবই স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআসুন আমরা একটি নতুন সভ্যতা তৈরি করি
পরবর্তী নিবন্ধকাপ্তাইয়ের নীল জলে প্রথম সাঁতার প্রতিযোগিতা