নগরে ১৫ দিন ব্যাপী অমর একুশে বইমেলা-২০২১ শুরু হবে আগামী ২৩ মার্চ। গত দুইবারের মতো এবারও নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম মাঠে মেলা অনুষ্ঠিত হবে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বইমেলা আয়োজন করছে। তবে সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ, সাহিত্যিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং অন্যান্য শিল্প-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরা সম্মিলিতভাবে মেলা বাস্তবায়ন করবে। সম্মিলিত উদ্যোগে এবারের মেলাটি তৃতীয় আয়োজন।
বইমেলা ঘিরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে আন্দরকিল্লায় নগর ভবনে লেখক-প্রকাশকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। মেলা শুরুর তারিখ ঘোষণা করে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও প্রগতিশীল বিরোধী কাউকে মেলায় স্থান দেয়া হবে না। তাদের স্টল দেয়া হবে না। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীরা ঢুকে পড়লেও দৃষ্টিগোচর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের স্টল বাতিল করা হবে। মঞ্চেও স্বাধীনতা বিরোধীদের স্থান হবে না।
মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের চিহ্নিত করার জন্য যাচাই-বাছাই কমিটি করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, কমিটিই স্টল বরাদ্দ দেবে। এতে স্বাধীনতা বিরোধীরা স্থান পাবে না। বইমেলার আয়োজক কমিটি ঠিক করবে কারা আলোচক থাকবেন। প্রকৃত লেখক, কথাসাহিত্যিক, কবি, গবেষকদের পুরস্কৃত করবে বইমেলা কমিটি।
মেয়র বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করি। চেতনা আবেগের বিষয়, ধারণ করা যায়। চেতনা ইতিহাস নয় যে লেখা যাবে। অতীতে যা হয়েছে তা বলে আর লাভ নাই। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে এবারের বইমেলায় ভুলত্রুটি সংশোধন করে এগোতে হবে। যাতে এই মেলার সৃজনশীলতা ফুটে ওঠে। কোনো মৌলবাদী গোষ্ঠীকে স্টল বরাদ্দ দিতে কেউ হুমকি ধমকি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে দমানো যাবে না। যেভাবে ঢাকার অমর একুশে বইমেলায় প্রফেসর ড, হুমায়ুন আজাদকে হত্যা করেও মুক্তমত প্রকাশকে দমানো যায়নি।
তিনি আরো বলেন, বইমেলা মানে শুধু বই বিক্রি না, বরং বইয়ের প্রতি নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করা। তাদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ঢুকিয়ে দেয়া। বইমেলা ঘিরে বিভিন্ন আয়োজনে সৃজনশীলতার ছাপ রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এক সময় ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রামে কমপক্ষে তিনটি বইমেলার আয়োজন করত বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন। এতে বিভ্রান্ত হতেন পাঠক-দর্শনার্থীরা। ফলে সেগুলো সত্যিকারের বইমেলা হয়ে উঠেনি। সর্বশেষ ২০১৯ সালে তৎকালীন সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীনের উদ্যোগে শুরু হয় অভিন্ন বইমেলা; যার ধারাবাহিকতা ছিল ২০২০ সালেও। এ দুইবার মেলা শুরু হয়েছিল ১০ ফেব্রুয়ারি। এবার করোনা মহামারীর কারণে মেলার তারিখ পিছিয়ে যায়।
সভায় মুক্তিযোদ্ধা, গবেষক ও প্রকাশক ডা. মাহফুজুর রহমান, প্রকাশক জামাল উদ্দীন, সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদের শাহ আলম নীপু, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমদ বক্তব্য রাখেন।
লেখক বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, সত্যিকার অর্থে গত দুইবার মেলা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। তার ধারাবাহিকতা এবারও চাই। ঢাকা থেকে গণহারে আমন্ত্রণ না জানিয়ে বাছাইকৃত ৫০টি প্রকাশনা সংস্থাকে স্টল দেয়া যায়।
জামাল উদ্দীন বলেন, মৌলবাদ ও জামায়াতমুক্ত বইমেলা চাই।
রিয়াজ হায়দার চৌধুরী বলেন, সংকীর্ণতার উর্ধ্বে ওঠে এবারের মেলা হবে আরো প্রাণবন্ত।
কবি শুকলাল দাশ বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী কোনো বই স্টলে না থাকে এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের যেন স্টল দেয় না হয়। সিটি কর্পোরেশন যে সাহিত্য পুরস্কার দেয় সেটা যেন প্রকৃত যোগ্যদের দেয়া হয়।
গবেষক শামসুল হক বলেন, বইমেলা যেন মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের প্রচার-প্রসারের মাধ্যম হয়ে না ওঠে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। মৌলবাদী স্টল যেন না হয়।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, দেশের মধ্যে ঢাকার পরেই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বইমেলার অবস্থান। সুন্দরভাবে মেলা আয়োজনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।
চসিকের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া বলেন, গতবার সবার পরামর্শে আলোচনা সভার মঞ্চ জিমনেসিয়ামের ভেতরে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানে দর্শকের উপস্থিতি সন্তোষজনক ছিল না। তাই এবার পূর্বের ন্যায় সভামঞ্চ বাইরে করার পরিকল্পনা আছে। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন মেলার পৃষ্ঠপোষকতা করবে। বাকি কাজগুলো করবেন সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদ ও কবি-সাহিত্যিকরা।
কবি সেলিনা শেলী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের একটা স্টলও চাই না।
চঞ্চল চৌধুরী বলেন, জোর করে যেন ছাত্রছাত্রীদের মেলায় আনা না হয়। স্বতস্ফূর্তভাবে আসলে ভিন্ন কথা।
ছড়াকার আ.ফ.ম মোদাচ্ছের আলী বলেন, স্বাধীনতা বিরোধীরা যেন ঢুকে সবার সাথে মিশে যেতে না পারে সেটা খেয়াল রাখতে হবে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহিত উল আলম, এবারের একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার, শিশুসাহিত্যিক রাশেদ রউফ, কাউন্সিলর শহিদুল আলম, নেছার আহমেদ মঞ্জু, নাজমুল হক ডিউক, পুলক খাস্তগীর, মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম ও উপ-সচিব আশেক রসুল চৌধুরী টিপু। বক্তব্য রাখেন আব্দুল হালিম দোভাষ, অঞ্চল চৌধুরী, অধ্যাপক গোফরান টিটু, নজরুল ইসলাম মোস্তাফিজ, সাইফুদ্দিন সাকী, সাইফুল আলম বাবু ও প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার।