‘প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরাম’ নামে চট্টগ্রামে নতুন একটি রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে। গতকাল নগরীর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক নেতা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) ভিপি নাজিম উদ্দিনকে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামের আহ্বায়ক এবং চাকসুর জিএস আজিম উদ্দিন আহমেদকে সদস্য সচিব ঘোষণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ভিপি নাজিম উদ্দিন জানান, আগামী এক মাসের মধ্যে ঢাকায় কনভেনশন করে নতুন দলের ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হবে।
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, বিএনপি বলছে নির্বাচনে যাবে না। আওয়ামী লীগ বলছে নির্বাচন হবে। আমাদের তো একটা সংবিধান আছে। সেই অনুযায়ী নির্বাচন হোক। আমরা নির্বাচনে যাব। ইতিমধ্যে ১০০ এর বেশি প্রার্থী নির্বাচন করার আগ্রহ দেখিয়েছেন। আমরা নিবন্ধন নিতে চেষ্টা করব। তবে এখন নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা অন্য দলগুলোর সঙ্গে আলাপ করছি। বিষয়টি নিয়ে মহাজোটের সঙ্গেও আলাপ করব। নিবন্ধন না পেলেও আমরা যে কোনও জোটে থাকতে চাই। বিএনপি ত্যাগ করেছেন কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে ভিপি নাজিম বলেন, বিএনপির সাথে অনেক আগে থেকে নাই। সংবাদ সম্মেলনে ভিপি নাজিম উদ্দিন ও জিএস আজিম উদ্দিন আহমেদ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ফেরদৌস বশির, কাজী সিরাজুল ইসলাম ও সোহেল রহমান নামের তিনজন। নতুন রাজনৈতিক দলে তারা সদস্য হিসেবে থাকছেন।
১৯৯০ সালে ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের’ প্যানেল থেকে চাকসুর ভিপি–জিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন নাজিম ও আজিম। সেসময় নাজিম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জাতীয় ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি ছিলেন আজিম। পরের বছর বিএনপি সরকার গঠন করলে নাজিম ওই দলে যোগ দেন। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সহ–সভাপতি ছিলেন দীর্ঘদিন। সবশেষ এই ইউনিটে বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি থেকে তিনি বাদ পড়েছেন। অপরদিকে কিছুদিন বাসদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকলেও আজিম উদ্দিন দীর্ঘদিন রাজনীতির সাথে ছিলেন না। দেশে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে নতুন দল গঠন করা হয়েছে দাবি করে নাজিম উদ্দিন বলেন, তাদের সঙ্গে বিভিন্ন পেশাজীবী, সাবেক ছাত্রনেতা ও প্রবাসীরা আছেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতাদের পাশাপাশি জেলার রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করেছেন।
প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামে কারা থাকছেন এবং সেখানে কোনও চমক থাকছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও সাবেক সাংসদ অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দীন দলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হবেন। এছাড়া আরো অনেক চমক থাকবে। কনভেনশনের সময় দেখতে পাবেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চাকসুর জিএস ও নতুন রাজনৈতিক দলের সদস্য সচিব আজিম উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। একটা অনিশ্চিত অভিযাত্রা লক্ষ্য করছি। জাতি দুই ভাবে বিভক্ত। কেউ পরিস্কার জানে না কি হতে চলছে নির্বাচন হবে কি না? বিরোধীদল নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে কি না? দেশের অর্থনীতি সচল থাকবে কি না? মেগা প্রজেক্টগুলো অব্যাহত থাকবে কি না? দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হবে কি না? নানা প্রশ্ন জনগণের মনে উঁকি দিচ্ছে। চরম এক অনিশ্চতায় দেশের জনগণ। এদিকে নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই দেশী বিদেশি নানা গ্রুপ/গোষ্ঠী তৎপর। নানান এজেন্ডা নিয়ে প্রত্যেকেই যেন ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে তৎপর। তিনি বলেন, পশ্চিমা বিশ্ব, আমেরিকা, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ভারত, চীনসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রসমূহ আমাদের উপর চাপ তৈরি করছে, যেমন : স্যাংসনের ভয় দেখিয়ে কিংবা ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির করে দিয়ে। আমরা দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের দেশ কিভাবে পরিচালিত হবে, সেটা আমাদের দেশের জনগণই ঠিক করতে পারে, বিদেশিরা নয়। দেশে কোনও সাংঘর্ষিক রাজনীতি আমরা চাই না, এর ফলে ভাঙচুর, গাড়ি পোড়ানো, মানুষ হত্যা, হরতাল অবরোধ রাজনীতির কোনও ভাষা হতে পারে না বলেও লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন তিনি। এখন আর রাজনীতিতে ভালো লোকের স্থান নেই উল্লেখ করে জিএস আজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ছাত্র, শ্রমিক, পেশাজীবীদের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও নেই আগের মত। জাতীয় সংসদের ৮০ ভাগ সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক–বেসামরিক আমলা দ্বারা পরিবেষ্টিত। ফলে কার্যত প্রকৃত রাজনীতি নির্বাসনে গেছে। সুযোগ সন্ধানীরা ক্ষমতা ও অর্থকে ব্রত হিসেবে নিয়েছে। দৃশ্যত জনতার রাজনীতি প্রকৃত রাজনীতিবিদদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে তা পরিষ্কার। আমরা মনে করি, এখনই এ বিষয়ে সতর্ক না হলে দেশ গভীর সংকটে নিপতিত হবে। বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংকট থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে একটি গণতান্ত্রিক ধারার উন্মেষ সময়ের দাবি। তাই আমরা সমমনা, দীর্ঘদিনের আন্দোলন সংগ্রামের সহযোদ্ধারা একত্রিত হয়ে একটি ভিন্ন ধারার রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে এ উদ্যোগ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশাবাদী বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।