চট্টগ্রামে গত বছর জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাস সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। এ সময় প্রতি মাসে গড়ে ২ হাজার ৬শ জনের বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। ওই হিসেবে এ পাঁচ মাস ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে ‘ভয়ংকর’ সময়। তাই এ সময়ে ডেঙ্গু নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিভাগও শঙ্কায় থাকে। চলতি বছর জুলাই মাসের মাত্র দুদিন পেরিয়েছে। এরই মধ্যে শনাক্ত হয়েছে ১৪ জন ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের গতকালের প্রতিবেদনে ৫ জন এবং আগের দিনের প্রতিবেদনে ৯ জন শনাক্তের তথ্য দেওয়া হয়। দুদিনে ১৪ জন শনাক্তের পর তাই স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কা কী সত্যি হতে চলেছে? তবে সিটি মেয়র ও চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্টরা ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি রোধে সচেতনতার ওপর জোর দেন। এছাড়া কারো জ্বর হওয়ার এক থেকে চার দিনের মধ্যে ডেঙ্গু শনাক্তে ‘এনএস–১’ এবং এরপর ‘আইজিজি’ বা ডেঙ্গু অ্যান্টিবডি টেস্ট করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এদিকে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিশ্চিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এর অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে কমপক্ষে ৩ থেকে ৫ জন বেড দিয়ে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড কর্নার করার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন সিভিল সার্জন। একইসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে প্রাথমিক চিকিৎসা না দিয়ে কোনো ডেঙ্গু রোগীকে নগরে প্রেরণ না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জানুয়ারি মাসে ৬৯ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ২৫ জন, মার্চ মাসে ২৮ জন, এপ্রিল মাসে ১৮ জন, মে মাসে ৫৩ জন এবং জুন মাসে ৪১ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। এছাড়া ২০২১ সালে ২৭১ জন, ২০২২ সালে ৫ হাজার ৪৪৫ জন এবং গত বছর ১৪ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় চট্টগ্রামে।
বেশি শনাক্ত নগরে : সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এ পর্যন্ত ২১২ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। এর মধ্যে ১০৭ জন মহানগরের এবং ১০৫ জন উপজেলার বাসিন্দা। এছাড়া শনাক্ত হওয়াদের মধ্যে ১১২ জন পুরুষ, ৫২ জন মহিলা এবং ৪৮ জন শিশু। উপেজেলায় রোগী বেশি লোহাগাড়ায় : উপজেলা পর্যায়ে গতকাল শনাক্ত হওয়াদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২২ জন হচ্ছেন লোহাগাড়ার। এছাড়া সাতকানিয়ায় ৭ জন, বাঁশখালীতে ৫ জন, আনোয়ারায় ৪ জন, চন্দনাইশে ৩ জন, পটিয়ায় ২ জন, বোয়ালখালীতে ১০ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ৯ জন, রাউজানে ৫ জন, হাটহাজারীতে ১১ জন, ফটিকছড়িতে ৫ জন, সীতাকুণ্ডে ৯ জন, মীরসরাইয়ে ৫ জন, সন্দ্বীপে ৫ জন এবং কর্ণফুলী উপজেলায় রয়েছেন ৩ জন।
মারা গেছেন ২ জন : চলতি বছর এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে ২ জন মারা গেছেন। দুজনই জানুয়ারিতে মারা যান। এছাড়া গত বছর ১০৭ জন, ২০২২ সালে ৪১ জন এবং ২০২১ সালে ৫ জন মারা গেছেন চট্টগ্রামে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় : চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী আজাদীকে বলেন, গত দুই মাস ধরে আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করছি। সচেতনতার জন্য উপজেলা পর্যায়ে লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং করেছি। উপজেলা পর্যায়ে আমাদের লিফলেটগুলো যেন আরো বেশি করে প্রচার করা হয় সেজন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের আশেপাশে পরিষ্কার রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড কর্নার করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যেখানে কমপক্ষে তিনজন থেকে পাঁচজনকে চিকিৎসা দেওয়া যাবে। স্বাস্থ্য কমপ্লেঙগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্যালাইন সরবরাহ করা আছে। সরকারি হাসপাতালে যদিও পর্যাপ্ত স্যালাইন থাকে। গতবারও আমাদের কোনো স্বল্পতা ছিল না। প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান ও ফার্মেসিগুলো সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করেছিল গতবার।
তিনি বলেন, কোনো ডেঙ্গু রোগীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে প্রাথমিক চিকিৎসা না দিয়ে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বা জেনারেল হাসপাতালে যেন না পাঠায় তার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ প্রাথমিক চিকিৎসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে শুরু করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জ্বর এলে কয়দিনের মধ্যে টেস্ট করতে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু ডেঙ্গুর সিজন তাই জ্বর আসার এক থেকে চার দিনের মধ্যে ‘এনএস–১’ এবং এরপর আইজিজি বা ডেঙ্গু অ্যান্টিবডি টেস্ট করবে।
সচেতনতায় জোর : চট্টগ্রাম জেলা কীটতত্ত্ববিদ এনতেজার ফেরদাওছ আজাদীকে বলেন, এখন তো টানা বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি যদি ৭/৮ দিন বন্ধ থাকে তাহলে ডেঙ্গু বাড়তে পারে। যেহেতু স্বচ্ছ পানিতে এডিসের জন্ম তাই এক্ষত্রে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমী আজাদীকে বলেন, ব্যক্তিগত সচেতনতা ছাড়া উপায় নেই। এডিস মশা নোংরা পানিতে হয় না। তাই নালায় আমরা ওষুধ ছিটালে কাজ হবে না। মানুষকে তার বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার রাখতে হবে। ৩ দিনের জমে থাকা পানি ফেলে দিতে হবে। ছাদবাগানের টবে জমা পানি ফেলে দিতে হবে।