চট্টগ্রামে টিকা নিয়ে উৎসাহ

প্রথম নিলেন নওফেল।। প্রথম দিনে পেয়েছেন ১ হাজার ৯০ জন

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৬:৫০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মহানগর ও উপজেলায় গতকাল রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম। সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল কেন্দ্রে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর টিকা গ্রহণের মধ্য দিয়ে বহুল প্রতীক্ষার করোনা টিকার যুগে প্রবেশ করল চট্টগ্রাম। টিকা ঘিরে ছিল উৎসাহ-উদ্দীপনা। কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবরও পাওয়া যায়নি।
নওফেলের পর চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বশর, সানশাইন চ্যারিটিজের চেয়ারম্যান সাফিয়া গাজী রহমানসহ অন্যরা টিকা গ্রহণ করেন। পরে টিকা নেন দৈনিক পূর্বকোণের সম্পাদক ডা. ম রমিজ উদ্দিন চৌধুরী, পরিচালনা সম্পাদক জসিম উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আলহাজ্ব আলী আব্বাস, বিএমএ চট্টগ্রামের সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান, চমেক উপাধ্যক্ষ ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ, চট্টগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরী প্রমুখ। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, পুলিশসহ অগ্রাধিকার তালিকাভুক্তদের অনেকে এদিন টিকা নিয়েছেন।
চট্টগ্রামে উদ্বোধনের প্রথম দিনে মহানগর ও উপজেলা মিলিয়ে এক হাজারের বেশি সম্মুখসারির যোদ্ধাকে টিকা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে মহানগরের ৬টি কেন্দ্রে ৪২৩ জন এবং ১৪ উপজেলা হাসপাতালে আরো ৬৬৭ জন সম্মুখসারির যোদ্ধাকে এ টিকা দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রথম দিন ১ হাজার ৯০ জন করোনার টিকা পেয়েছেন চট্টগ্রামে।
টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন উপলক্ষে গতকাল সকাল থেকেই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে উৎসাহ-উদ্দীপনায় হাসপাতালে ভিড় করতে দেখা যায়। গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। হাসপাতালের চারতলায় (আইসিইউর সামনে) নিবন্ধন কার্যক্রম, টিকাদানের জন্য অপেক্ষা ও টিকাদান পরবর্তী অপেক্ষাগারসহ আলাদা আলাদা স্থান নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু দশটা বাজতে না বাজতেই সবকয়টি স্থান অতিথি, টিকাগ্রহণকারী, গণমাধ্যমকর্মী ও দর্শনার্থীদের ভিড়ে গিজগিজ করছিল। আইসিইউর বিপরীত পাশে একটি কক্ষে মাঝখানে পর্দা দিয়ে দুই পাশে দুটি করে চারটি বুথে টিকাদানের প্রস্তুতি চলছিল।
রাজধানীতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দেশব্যাপী টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন শেষে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল চট্টগ্রামে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে করোনার টিকা গ্রহণ করেন। এসময় চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর শাহেনা আকতার, বিএমএর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ডা. শেখ সফিউল আজমসহ স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি সস্ত্রীক উপস্থিত হন।
উদ্বোধনের পর চারটি বুথে দুপুর ২টা পর্যন্ত একটানা টিকাদান কার্যক্রম চলে। টিকা ঘিরে সব ধরনের শংকা-ভয়কে জয় করে অনেকটা উৎসাহ নিয়ে সকলকে টিকা নিতে দেখা যায়। কারো মাঝে কোন ধরনের ভীতি বা শংকা চোখে পড়েনি। টিকা গ্রহণের পর উৎফুল্ল মনে সেখানে কিছু সময় অতিবাহিত করেন টিকা গ্রহণকারীরা। এ সময়টুকুতে পর্যবেক্ষণে ছিলেন তারা। প্রত্যেক টিকা গ্রহণকারীকে অন্তত ৩০ মিনিট পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। টিকা গ্রহণ পরবর্তী কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসায় প্রস্তুত ছিল মেডিকেল টিমও। তবে চমেক হাসপাতাল কেন্দ্রে গতকাল একদিনে ২৩৫ জন টিকা গ্রহণ করলেও কারো শরীরে কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
টিকা গ্রহণ শেষে পর্যবেক্ষণ সময় অতিবাহিত করে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। টিকা গ্রহণের পর কোনো ধরনের জটিলতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া বা নেগেটিভ কোনো কিছু অনুভব করছি না। যেকোনো ধরনের ওষুধেরই কিন্তু কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। সুতরাং এটা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা যারা আজ ভ্যাকসিন নিয়েছি, আমরা এটা নিয়ে নেগেটিভ কিছু অনুভব করছি না।
তিনি বলেন, আপাতত অগ্রাধিকার তালিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিবন্ধন করা হচ্ছে। একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী, যাদের মধ্যে জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যম ব্যক্তি, স্বাস্থ্যখাতের লোকজন যারা সবচেয়ে বেশি মানুষের কাছে যান, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে সকল স্বাস্থ্যকর্মীর পাশাপাশি পুলিশ-সাংবাদিকগণও টিকা নেবেন আশা করি। এতে করে টিকা নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে কোনো ধরণের দ্বিধা-সংশয় থেকে থাকলে তা-ও কেটে যাবে।
বহুল প্রতীক্ষার করোনার টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবে রূপ দিতে পেরে সন্তুষ্টির কথা জানান চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ূন কবীর। তিনি বলেন, বৃহত্তর চট্টগ্রামের একমাত্র টার্শিয়ারি পর্যায়ের হাসপাতালে করোনার টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের জনগণের জন্য একটি আশার দুয়ার উন্মোচন হলো। টিকাদান ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। টিকাদান পরবর্তী কারো শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে দ্রুততার সাথে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার প্রস্তুতি হিসেবে মেডিসিন বিভাগে ‘পোস্ট ভ্যাকসিনেশন সাপোর্ট ক্লিনিক’ চালু করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
টিকা গ্রহণ পরবর্তী অভিব্যক্তি প্রকাশ করে তিনি বলেন, আল্লাহর রহমতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দূরের কথা, সামান্যতম অসুবিধাও অনুভব করছি না। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর আমরা আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করেছি। যেকোনো ভ্যাকসিন নেওয়ার পর কিন্তু সাধারণ একটু জ্বর, মাথাব্যথা হতেই পারে। কিন্তু এ ধরনের কিছুই হচ্ছে না। সুতরাং এই ভ্যাকসিন অনেক বেশি নিরাপদ।
নিজেরা টিকা গ্রহণের পর কোনো সমস্যা হয়নি জানিয়ে দ্বিধাহীনভাবে সকলকে টিকা গ্রহণের আহ্বান জানান বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির ও সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। করোনা থেকে মুক্ত থাকতে টিকা নেয়াটা জরুরি বলে মন্তব্য করেন তারা।
চমেক হাসপাতালের পর চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালেও টিকাদান কার্যক্রম গতকাল উদ্বোধন করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এ হাসপাতালে ৪০ জনকে টিকা দেয়া হয়।
ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর মো. ইসমাইল খানের টিকা গ্রহণের মধ্য দিয়ে গতকাল কার্যক্রম শুরু হয়। একই সাথে চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, নৌ-বাহিনী হাসপাতাল, বিমান বাহিনী হাসপাতাল এবং বিএমএতে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভাষা আন্দোলনের সঙ্গে চলছিল আরো একটি বড় আন্দোলন
পরবর্তী নিবন্ধজুয়াড়ি সন্দেহে আটক সেই তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা