চট্টগ্রামে জব্দ করা হলো বাংলাদেশ বিমানের দুবাইফেরত উড়োজাহাজ

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৮:৪৯ অপরাহ্ণ

চোরাচালানের স্বর্ণ বহনের অভিযোগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ জব্দ করা হয়েছে। তবে উড়োজাহাজটি যথারীতি বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজটির ‘৯ জে’ আসনের নিচে বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে রাখা ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা দামের ২ কেজি ৩২০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের বার উদ্ধারের প্রেক্ষিতে বিমানটি জব্দ করা হয়।

বিমানবন্দরের এনএসআই টিম, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা শাখা এবং শুল্ক গোয়েন্দা দল যৌথভাবে তল্লাশি চালিয়ে স্বর্ণের চালানটি উদ্ধার করে। কালো প্লাস্টিক টেপ মুড়িয়ে স্বর্ণের বারগুলো এমনভাবে সিটের নিচে লুকানো ছিল যে যাত্রী কোন যাত্রীর পক্ষে করা সম্ভব নয়। এটির সাথে বিমানের কোন লোক জড়িত রয়েছে বলে সন্দেহের প্রেক্ষিতেই বিমানটি জব্দ করা হয়।

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইতিহাসে এই প্রথম চোরাচালানের অভিযোগে কোন উড়োজাহাজ জব্দ করা হলো। আজ সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে উড়োজাহাজটি ঢাকায় চলে গেছে। স্বর্ণের বার চোরাচালানের ঘটনা তদন্তের সময় বিমানটির পাইলট, কো-পাইলট এবং কেবিন ক্রুদের জিজ্ঞাসাবাদ ও বিমানের অভ্যন্তরের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের সুবিধার জন্য বিমানটি জব্দ করা হয় বলে জানানো হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ বিমানের বিজি-১৪৮ ফ্লাইটটি বৃহস্পতিবার সকালে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ সময় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সহযোগিতায় বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বাহিনী এবং শুল্ক গোয়েন্দা টিম যৌথভাবে ফ্লাইটে তল্লাশি চালান।

ওই সময় বিমানের ‘৯ জে’ আসনের নিচ থেকে কালো টেপ মুড়িয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় সিটের নিচে লুকিয়ে রাখা ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা মূল্যের ২ কেজি ৩৩০ গ্রাম ওজনের ২০টি সোনার বার জব্দ করেন কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। এ ঘটনায় ওই আসনের যাত্রী আতিয়া সামিয়াকেও গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বাড়ি রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানা এলাকায়।

গ্রেপ্তারকৃত আতিয়া সামিয়া সংযুক্ত আরব আমিরাতে ‘ওশেন গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ড জুয়েলারি’ নামের একটি দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করেন। দেশেও তিনি অনলাইনে সোনা বিক্রি করেন বলে কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান।

এই ঘটনায় বিমানের লোকজন জড়িত বলে উল্লেখ করে কাস্টমসের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, তাদের সহযোগিতা ছাড়া কোন যাত্রীর পক্ষে এভাবে এগুলো স্বর্ণ সিটের নিচে এমন জায়গায় লুকানো অসম্ভব। তাই কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বিমানটি জব্দ করেন। বোয়িং ৭৭৭-ইআর মডেলের উড়োজাহাজটির মূল্য দেখানো হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা। এই ঘটনা বিচারাদেশের জন্য নথি চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছেন কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন বলেছেন, চোরাচালানের পণ্য বহন করা কাস্টমস আইন অনুযায়ী এ উড়োজাহাজটি জব্দ করা হয়েছে। এতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসও জবাবদিহির মধ্যে আসবে।

কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং বিমানের ভিতরের সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গেলে কারা এর সাথে জড়িত তা নিশ্চিত হওয়া যাবে। বিমানটি জব্দ করায় এর সিসিটিভি ফুটেজ প্রাপ্তি সহজ হবে।

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আবদুল্লাহ আলমগীর জানিয়েছেন, বিমানটি জব্দ করা হলেও এটি যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। বিমানটি গতকাল সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে যাত্রী নিয়ে ঢাকা চলে গেছে বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, বিমান জব্দ মূলতঃ কাগজে পত্রে হয়ে থাকে। এটি বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জিম্মায় চলাচল করতে পারবে।

ঘটনার ব্যাপারে পতেঙ্গা থানায় একটি মামলা রুজুর প্রক্রিয়া চলছে বলে কাস্টমস সূত্র জানিয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপেকুয়ায় আজহারির মাহফিলে পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তা
পরবর্তী নিবন্ধসেন্টমার্টিন থেকে ফেরার পথে নষ্ট জাহাজ, মাঝপথে আটকা ৭১ যাত্রী