চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের অনকোলজি ও হেমাটোলজি বিভাগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ১ম আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন, দেশে ক্যান্সারের রোগী প্রতিদিনই বাড়ছে। চট্টগ্রামের অবস্থাও নাজুক। চট্টগ্রামে ক্যান্সার রোগী বাড়ার হার দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে বেশি। এটি খাদ্যাভ্যাসের কারণে হচ্ছে কিনা তা নিয়ে গবেষণা করা দরকার বলেও তারা মন্তব্য করেন। বিশেষ করে শুটকি জাতীয় খাবার থেকে ক্যান্সার হচ্ছে কিনা তা নিয়ে গবেষণা করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। তারা বলেন, দেশে ক্যান্সার চিকিৎসার সুযোগ সুবিধা একেবারে অপ্রতুল, প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। সরকারের একার পক্ষে এই চিকিৎসা সেবার পুরোটা গড়ে তোলা অসম্ভব। তাই সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ক্যান্সার চিকিৎসার সুবিধা প্রসারের উপর তারা গুরুত্বারোপ করেন। তারা বলেন, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল যেভাবে ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ে তুলছে সেভাবে অন্যান্য বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্যান্সার চিকিৎসায় এগিয়ে আসলে মানুষ উপকৃত হবে।
কনফারেন্সে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেন, সচেতনতার মাধ্যমে বেশ কয়েক ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে ক্যান্সার চিকিৎসায় সুফল মিলে। এ জন্য সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই বলেও বক্তারা উল্লেখ করেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা অন্যান্য চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ক্যান্সার ধারণা করলে সেই রোগীকে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে রেফার করা উচিত। ক্যান্সার একদিন আগে চিহ্নিত হলেও এর সুফল মিলে।
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল পরিচালনা কার্যনির্বাহী কমিটির প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডা. এম এ তাহের খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কনফারেন্সে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডাঃ মোহাম্মদ ইসমাইল খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডাঃ হাসান শাহরিয়ার কবির, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যান্সার রিসার্চ এন্ড হসপিটালের পরিচালক প্রফেসর ডাঃ স্বপন কুমার বন্দোপাধ্যায়, আহসানিয়া মিশন ক্যান্সার এন্ড জেনারেল হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রফেসর ডাঃ কামরুজ্জামান চৌধুরী, চমাশিহা ক্যান্সার হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান এস এম আবু তৈয়ব। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হাসপাতালের কার্যনির্বাহী কমিটির জেনারেল সেক্রেটারি মোহাম্মদ রেজাউল করিম আজাদ। কনফারেন্স অনুষ্ঠানের প্রেক্ষাপট উপস্থাপন করে বক্তব্য রাখেন অনকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডাঃ শেফাতুজ্জাহান, হেমাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডাঃ সামিরা তৌফিক রেশমা। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হাসপাতালের কার্যনির্বাহী কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল মান্নান রানা, ইঞ্জি. মোঃ জাবেদ আবছার চৌধুরী, ডাঃ মোঃ পারভেজ ইকবাল শরীফ, ট্রেজারার অধ্যক্ষ লায়ন ড. মোহাম্মদ সানাউল্লাহ, জয়েন্ট ট্রেজারার এস এম কুতুব উদ্দিন, অর্গানাইজিং সেক্রেটারি মোহাম্মদ সাগির, স্পোর্টস এন্ড কালচারাল সেক্রেটারি মোঃ আহছান উল্যাহ, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য প্রফেসর ডাঃ কামরুন নেসা রুনা, খায়েজ আহমেদ ভূঁইয়া, ডাঃ ফজল করিম বাবুল, প্রফেসর ড. মোঃ জাহিদ হোসেন শরীফ, মোঃ হারুন ইউসুফ, চমাশিহা মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর এ এস এম মোস্তাক আহমেদ, হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ মোঃ নূরুল হক প্রমুখ। কনফারেন্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কার্যনির্বাহী কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট (ডোনার) সৈয়দ মোহাম্মদ মোরশেদ হোসেন।
কনফারেন্সের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল মাল্টিডিসিপ্লিনারি এপ্রোচ টু ক্যান্সার কেয়ার (গঁষঃরফরপরঢ়ষরহধৎু অঢ়ঢ়ৎড়ধপয ঃড় ঈধহপবৎ ঈধৎব)। কনফারেন্সে দেশ বিদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণের গবেষণামূলক প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। এতে ৬৫০ জন চিকিৎসক অংশ নেন। কনফারেন্সে অনলাইনে যুক্ত হয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিঙ্গাপুরের ফারের পার্ক হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ লি খায় মুন। ভারতের কলকাতা থেকে এপোলো হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ শায়ন পালসহ দেশের আরো ৯ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ২য় সেশনের অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সহকারী অধ্যাপক (শিশু স্বাস্থ্য) ডাঃ ফাহিম হাসান রেজা ও সহকারী অধ্যাপক (পেডিয়েট্রিক হেমাটোলজি) ডাঃ ইন্দিরা চৌধুরী।
আন্তর্জাতিক মানের একটি কনফারেন্স আয়োজন করায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডা. ইসমাইল খান সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, চমৎকার একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে প্রথম ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মাল্টিডিসিপ্লিনারি কেয়ারের বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলে রোগীদের বহুমুখী সুবিধা নিশ্চিত হবে। তিনি রোগীদের সুচিকিৎসার পাশাপাশি সুবিধার বিষয়টি মাথায় রাখার জন্য চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি চমাশিহা ক্যান্সার হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান এবং দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, ক্যান্সার চিকিৎসার ভয়াবহতা তুলে ধরেন। তিনি চট্টগ্রামে ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা এক কোটি টাকা দিলে যেমন নিচ্ছি তেমনি কেউ এক টাকা অনুদান দিলেও নেবো। ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণ কার্যক্রম বহুদূর এগিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করে তিনি হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শেষ করতে সমাজের সকল বিত্তবান, দানশীল ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতা কামনা করেন।
প্রফেসর ডাঃ স্বপন কুমার বন্দোপাধ্যায় চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ক্যান্সার হাসপাতালের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরণের টেকনিক্যাল সহযোগিতা তিনি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যান্সার রিসার্চ এন্ড হসপিটালের মাধ্যমে প্রদান করার আশ্বাস দেন। বক্তারা ক্যান্সার চিকিৎসায় সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের পাশাপাশি চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ন্যায় অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালসমূহকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।