চট্টগ্রামে ওএমএসের নতুন ডিলার নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২০ জুলাই, ২০২৫ at ৮:১২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে ওএমএসের নতুন ডিলার নিয়োগে লঙ্ঘন করা হয়েছে সরকারি ওএমএস নীতিমালা। ওএমএসের নতুন ডিলারের আবেদনপত্র মাঠ পর্যায়ে সরেজমিনে তদন্ত প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পদে পদে অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে বিগত সরকারের আমলে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া ওএমএসের ডিলারশিপ বাতিল করে সম্প্রতি খাদ্য অধিদপ্তর থেকে নতুন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর থেকে নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে নতুন ওএমএস ডিলার নিয়োগের জন্য আগ্রহীদের কাছ থেকে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়। আবেদন করেন ৪২৮ জন। চট্টগ্রাম জেলা ও আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর থেকে মাঠ পর্যায়ে যাচাইবাছাই করে ৪১ ওয়ার্ডে নতুন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হলেও বেশিরভাগ নতুন ডিলার নিয়োগ নিয়ে মাঠ পর্যায়ে স্থানীয়দের পক্ষ থেকে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ রয়েছে, অনেক ডিলার নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি ওএমএস নীতিমালা লঙ্ঘন করা হয়েছে। আঞ্চলিক ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর থেকে জানা গেছে, ইতোমধ্যে তাদের দপ্তরে বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগ যাচাইবাছাই করা হচ্ছে।

নগরীর ২৮ নং পাঠানটুলী ওয়ার্ডে নতুন ওএমএসের ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে মো. হাবিবুল ওয়াজেদকে। অথচ তার পিতার কাশেম ফ্লাওয়ার মিল খাদ্য অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত মিলার। ওএমএসের নীতিমালায় আছে, খাদ্য অধিদপ্তরের সাথে জড়িত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কেউ ওএমএসের ডিলারের জন্য আবেদন করতে পারবে না। অথচ পিতা খাদ্য অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত মিলার আর ছেলে পেয়েছে ওএমএসের নতুন ডিলারশিপ। এখনে ওএমএসের নীতিমালা লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এ ওয়ার্ডের অন্য আবেদনকারীরা।

নগরীর ২০ নং দেওয়ান বাজার ওয়ার্ডে নতুন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে মো. আবদুস সবুরকে (মেসার্স এম এ সবুর অ্যান্ড ব্রাদার্স)। এ ওয়ার্ডে এর আগেরবার ডিলারশিপ ছিল আবদুস সবুরের ভাই এম এ হামিদের কাছে (আঞ্জুমান সিন্ডিকেট)। একই দোকান। আগের এম এ হামিদ এখন এম এ সবুর। অথচ এই ওয়ার্ডের মূল পয়েন্ট হওয়ার কথা দেওয়ান বাজার এলাকায়। এখন বলুয়ারদিঘির পাড় এলাকায়। ওয়ার্ডের একেবারে শেষ প্রান্তে। এখানেও নীতিমালা লঙ্ঘন করা হয়েছে।

২১ নং জামালখান ওয়ার্ডের ডিলার নাসরিন আক্তার। তার বিক্রয় পয়েন্ট দেখানো হয়েছে শতদল ক্লাবের ৩০ মিটারের ভেতরে। অথচ এখানে ৩০ মিটারের ভেতরে কোথাও ডিলারের দোকান নেই।

এদিকে ৩৯ নং ওয়ার্ডে একাধিক আবেদনকারী অভিযোগ করেছেন, এ ওয়ার্ডে ওএমএসের ডিলারশিপের জন্য একাধিক আবেদনকারী আবেদন করলেও শুধুমাত্র পিতাপুত্রের দুই আবেদনের (প্রতিষ্ঠানের) মধ্যে লটারি করা হয়েছে (পিতা জানে আলমের প্রতিষ্ঠান ইলিয়াছ স্টোর এবং ছেলে রায়হান সাদ্দাম রানার প্রতিষ্ঠান জানে আলম এন্টারপ্রাইজ)। লটারিতে ছেলে রায়হান সাদ্দাম রানার প্রতিষ্ঠান জানে আলম এন্টারপ্রাইজ নতুন ডিলারশিপ পেয়েছে।

৩৭ নং ওয়ার্ডে নতুন ডিলারশিপ পেয়েছে শফিকুল হকের মোবারক স্টোর। অভিযোগ রয়েছে, তার গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ। তিনি এ ওয়ার্ডের গতবারের ডিলার আবদুল মোবারকের আজমির ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের কর্মচারী। এবার তার নামে ডিলারশিপ নেওয়া হয়েছে।

নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে নতুন ওএমএসের ডিলার নিয়োগের ক্ষেত্রে এমন অনেক অভিযোগ। ২৫ নং রামপুর ওয়ার্ড, ২৭ নং দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ড, ৬ নং পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ড, ৮ নং শুলকবহর ওয়ার্ড, ১৫ নং বাগমনিরাম ওয়ার্ডে যারা ডিলারশিপ পেয়েছেন তারা আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠজন বলে অভিযোগ করেছেন ওইসব ওয়ার্ডের আবেদনকারীরা।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুমাইয়া নাজনীন আজাদীকে বলেন, আমাদের কাছে কিছু কিছু অভিযোগ এসেছে। যেসব অভিযোগ আসছে আমরা তদন্ত করছি। এমন কিছু পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, নগরীর ২৮ নং পাঠানটুলী ওয়ার্ডে পিতা খাদ্য অধিদপ্তরের মিলার আর ছেলে যদি ডিলাশিপ পেয়ে থাকেন তাহলে সেটা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। ৩৯ নং ওয়ার্ডে পিতাপুত্রের দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যেটা লটারি হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি বলেন, সেটা কমিটির সামনেই হয়েছে। কমিটির সামনে যেখানে লটারি হয়েছে সেখানে কেউ আপত্তি করেননি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ২০ জুলাই : দেশজুড়ে কারফিউ জারি, সংঘর্ষে নিহত ৩৭
পরবর্তী নিবন্ধ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র পাচ্ছে শহীদ তানভির সিদ্দিকীর পরিবার